ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

আ. লীগের পদ হারালেন রামগতির সেই ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৯ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২২
আ. লীগের পদ হারালেন রামগতির সেই ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী!

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আকবর হোসেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আবেদনটিপত্রটি বাতিলের জন্য পুনরায় আবেদন করেছেন। তবে তার আগেই প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন করায় দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের দায়ে তাকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাকে বহিষ্কার করেন।  

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।  

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ওই ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসারের কাছে একটি আবেদনপত্র জমা দেন। বুধবার (২৫ মে) তিনি স্বেচ্ছায় পারিবারিক কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন। তবে বুধবারের আবেদনপত্রটি গৃহীত হওয়ায় বৃহস্পতিবারের আবেদনটি বিবেচনা করার সুযোগ নেই বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী হেকমত আলী।

আওয়ামী লীগ নেতা আকবর পুনরায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন, ভয়ভীতির কারণে আমি নির্বাচন করা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নির্বাচন অফিস থেকে আমার মনোনয়নপত্রটি বৈধ ঘোষণার পর প্রতিপক্ষরা আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের অপহরণ, গুম ও হত্যার হুমকি দিয়েছে। তাদের আচরণে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই। যার কারণে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করি।

আবেদনে তিনি তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে জন্য করা আবেদনটি বাতিল করে তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়ার আবেদন জানান।  
 
কারা হুমকি দিচ্ছে বা কাদের চাপে পড়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি আকবর হোসেন।  

রাতেই নিজের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তায়ও তিনি একই কথা বলেন। তবে সেখানেও সুনির্দিষ্টভাবে কারো নাম উল্লেখ করেননি তিনি।  

এছাড়া নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা রিটার্নিং কর্মকর্তাকেও জানাননি। দলীয় কোনো নেতাও তার এ বিষয়টি অবগত নন।

আকবর হোসেন আলেকজান্ডার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে তিনি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া ওই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ছিলেন তিনি। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে তিনি সদস্য পদ ছাড়েন। দলীয় মনোনয়নের জন্য দলের পক্ষ থেকে তিনজনের নাম কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠায়। এদের মধ্যে তার নাম ছিল সবার শেষে। কেন্দ্র থেকে তাকেই নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।  

আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকেও ভয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং সেই প্রত্যাহারের আবেদন প্রত্যাহার চেয়ে পুনরায় নির্বাচন করার আশা প্রকাশ করায় দলীয় নেতাকর্মী এবং স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ বলছেন, টাকার বিনিময়ে তিনি মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। আবার কেউ বলছেন, এমন ভীতু নেতার নাম কেন্দ্রে পাঠানোর আগে যাচাই বাছাইয়ের প্রয়োজন ছিল।  

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী হেকমত আলী বাংলানিউজকে বলেন, আকবর হোসেনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদনটি গৃহীত হওয়ায় তিনি তার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না। বুধবারের আবেদনটি কার্যকর হয়ে গেছে। এরপর আর যতই আবেদন করুক, আইনগতভাবে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচনী আইনে বৃহস্পতিবারের আবেদনের বিষয়ে নতুন করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিধান নেই।  

আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন, সে ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তার করলীয় কিছু ছিল কিনা- জানতে চাইলে কাজী হেকমত আলী বলেন, বুধবার সকালে তিনি যখন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন নিয়ে আসেন, তখন তাকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। তখন তিনি এসব বিষয়ে কিছু বলেননি। তাই আমাদের কিছু করণীয় ছিল না।

আকবরের নিরাপত্তারহীনতার বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার বিকেলে রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আকবর হেসেন নিরাপত্তাহীন ছিলেন কিনা, তা আমাদের জানাননি। থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ বা জিডি পর্যন্ত করেননি। পুলিশকে অবহিত করলে অবশ্যই তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হতো।  

রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল ওয়াহেদ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলানিউজকে বলেন, আকবর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের বিষয়টি আমাদের জানাননি। নিরাপত্তাহীনতার বিষয়েও বলেননি। বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। তার কারণে এখন ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী থাকল না।  

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আবদুল ওয়াহেদ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এতে আলেকজান্ডার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে আকবর হোসেনকে বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এবং ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে কোনো রকম কারণ ছাড়াই আকবর হোসেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এতে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তকে অবমাননা করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।  

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, গত ৮ জানুয়ারি শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে ৮৫ বছর বয়সে আলেকজান্ডার ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মৃত্যু বরণ করেন। তখন থেকে চেয়ারম্যান পদটি শূন্য। আগামী ১৫ জুন এ ইউনিয়নের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ঋণ খেলাপির কারণে একজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। বাকি চারজনের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আকবর হোসেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।

এখন বাকি আছেন তিন প্রার্থী। তারা হলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম আব্বাস, মো. আবুল ফাত্তাহ ও ইসলামী আন্দোলনের মো. রিয়াজ হোসেন। শুক্রবার (২৭ মে) প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।  

স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম প্রয়াত চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছেলে। আগে থেকে আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ তাকে সমর্থন দিয়ে আসছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২২
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad