ঢাকা, সোমবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

‘পল্লীবন্ধু পদক’ পেলেন ৮ বিশিষ্ট ব্যক্তি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২২
‘পল্লীবন্ধু পদক’ পেলেন ৮ বিশিষ্ট ব্যক্তি

ঢাকা: আট বিভাগে আট বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘পল্লীবন্ধু পদক’ ২০২১ তুলে দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মদিন উপলক্ষে প্রথমবারের মতো এই পদক প্রদান করা হলো।

প্রয়াত এরশাদের নামে প্রবর্তিত এই পদক তার প্রত্যেক জন্মবার্ষিকীতে প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে জাপা।  

রোববার (২০ মার্চ) হোটেল সোনারগাঁওয়ে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে পদক, সম্মাননা, উত্তরীয় ও চেক হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে এরশাদের কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা করেন এরশাদের ভগ্নিপতি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান।
 
স্বাস্থ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাহিত্যে স্বনামধন্য কবি ফজল সাহাবুদ্দিন (মরণোত্তর), কৃষিতে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, সংগীতে প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর), শিক্ষায় অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্ল্যাহ, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ইঞ্জিনিয়ার কামরুল ইসলাম সিদ্দিক (মরণোত্তর), ক্রীড়ায় গোলাম সরোয়ার টিপু, শিল্পে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি আব্দুল ওয়াহেদ বাবুল।

জিএম কাদের বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কৈশোর থেকে যৌবন ও শেষ জীবন অবধি তিনি ছিলেন একাধারে ছাত্র, ডানপিটে কিশোর, তুখোড় খেলোয়ার, সাহিত্যিক, কবি, দক্ষ প্রশাসক, জননন্দিত রাজনীতিবিদ। কারমাইকেল কলেজে অধ্যয়নকালে কলেজ ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছিলেন তিনি। সে সময় তিনি একাধারে ৪ বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে ছিলেন।  

ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নকালে হয়েছিলেন ভার্সিটি স্পোর্টস ব্লু। এরপর সৈনিক হিসেবে পেশা গ্রহণ করে তৎকালীন পাকিস্তান সেনা ফুটবল দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন। এছাড়া খেলতেন সেনাবাহিনী হকি দলে।  রাজনীতিতে আসার পর যখন যেখানে হাত দিয়েছেন, সেখানেই তার নৈপুন্যের ছাপ রেখেছেন। তার ক্ষমতা গ্রহণ যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, এটা আজ সর্বজন স্বীকৃত যে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯ বছরের শাসনামল ছিল এ দেশে সুশাসন, উন্নয়ন, সমৃদ্ধির এক নবযুগ। দেশের এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে তার উন্নয়ন বা সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি।  

রাষ্ট্রের প্রশাসনিক সংস্কার ও সার্বিক  উন্নয়ন থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ও সংস্কারের সুবিধা সম্প্রসারিত করেছিলেন। সাধারন পর্যায়ের মানুষ, চাষী, জেলে, মুটে-মজুর, শ্রমিকদের জীবনে কিভাবে সুখ-শান্তি-নিরাপত্তা উন্নতি আসতে পারে সে দিকে ছিল তাঁর তীক্ষè দৃষ্টি। তিনি আপামর মানুষের বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ের মানুষের কল্যান সাধন ও স্বার্থ রক্ষার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। পল্লীর মানুষের প্রকৃত বন্ধু হতে পেরেছিলেন। সে কারনেই সাধারন জনগন তাঁকে পল্লীবন্ধু খেতাবে ভূষিত করেছেন।  

এ ছাড়াও কর্ম জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেও সাহিত্য র্চচা ও খেলাধুলা অব্যাহত রেখেছিলেন। এ পর্যন্ত তাঁর লেখা ২৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নিজে খেলোধুলা করতেন এবং খেলাধুলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিধি পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। বাংলাদেশে গলফ-এর মতো অপ্রচলিত খেলার যে ব্যাপক প্রচলন আজ চোখে পড়ে, সেটা সম্ভব হয়েছিল তাঁর প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায়।  

তিনিই বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এর ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় সৃষ্টি করছে, অনেক খেলায় যেমন ক্রিকেটে পৃথিবী ব্যাপী প্রতিযোগিতায় সমান তালে লড়াই করতে সক্ষম হচ্ছে।

তার কর্মকাণ্ড এতই বিস্তৃত যে, সব ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা পদক প্রদান করতে পারলাম না। এবার আটটি বিষয়ে ‘পল্লীবন্ধু পদক’ ঘোষণা করেছি।  আগামীতে এই পুরস্কারের পরিধি আরও প্রসারিত করার প্রত্যাশা রয়েছে আমাদের।  

পদক পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এরশাদ আপদমস্তক ভদ্রলোক ও বুদ্ধিমান ছিলেন। তার দৃষ্টিটা ছিল প্রসারিত। ফেব্রুয়ারি মাসে তার অসামান্য অবদান ছিল, উনি নিয়ম করেছিলেন সাইনবোর্ডে বাংলা হতে হবে, রায় বাংলায় হতে হবে। উনার আমলে কেউ না খেয়ে থাকেনি।

তিনি আরও বলেন, এরশাদের সুচিন্তা না থাকলে এখন জনসংখ্যা ৩০ কোটি হতো। উনি প্রতিমাসে জনসংখ্যার মিটিংয়ে যেতেন, আজকে ৩০ কোটি জনসংখা হলে রাস্তায় চলা যেত না। টিসিবির ট্রাকের সামনে মিছিল জাতিকে ভিখারিতে পরিণত করেছে।

শাইখ সিরাজ বলেন, পল্লী উন্নয়নে এরশাদের অবদান অনস্বীকার্য। তার সে সময়ের কাজগুলো বাংলাদেশকে আজকের জায়গায় আসতে অনেক সহায়তা করেছে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে অনেক সময় লাগত, এখন কৃষকরা সহজে পণ্য পৌঁছে দিতে পেরে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন।

প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বলেন, আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি থাকাকালে দারুণভাবে সহযোগিতা পেয়েছি। এরশাদ কোনোদিন তদবির করেননি, ডিও লেটার দেননি।

গোলাম সরোয়ার টিপু বলেন, এরশাদের সঙ্গে আমার দুবার সাক্ষাৎ হয়েছিল। উনি বাংলাদেশে ফ্লাড লাইট চালু করেছিলেন। তারপর লীগগুলো সহজে আয়োজন করা সম্ভব হয়। তার আগে খেলায় জট লেগে যেতো। ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছেন। আমি ওনার সঙ্গে কথা বলে অভিভূত হয়েছিলাম।

এসময় সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৮ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২২
এসএমএকে/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।