ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

আগামী ১-২ মাসে একটা আঘাতের চেষ্টা হবে: শামীম ওসমান

মাহফুজুর রহমান পারভেজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
আগামী ১-২ মাসে একটা আঘাতের চেষ্টা হবে: শামীম ওসমান কথা বলছেন এমপি একেএম শামীম ওসমান। ছবি: বাংলানিউজ 

নারায়ণগঞ্জ: ‘এখানে যারা আছেন আমার কারও সঙ্গে আলাপ হয়নি। গত পরশু জাতির পিতার কন্যা সংসদে একটা ভাষণ দিয়েছেন।

সেখানে তিনি অনেক কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। সামনে আমাদের চরম কঠিন পরীক্ষা পার করতে হবে। আমাদের দায়িত্ব এই মেসেজটা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া’।  

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের পাশে নম পার্কে আয়োজিত এক কর্মীসভায় এ কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) একেএম শামীম ওসমান।  

শামীম ওসমান বলেন, কমিটির রাজনীতি আমরা করি না। আমরা না বুঝেই রাজনীতিতে এসেছিলাম। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাইতে নেমেছিলাম। তখন ভাবিনি আমরা ক্ষমতায় আসবো একদিন। আজকে ২০২২, লম্বা সময় পার হয়েছে। বিসমিল্লাহর দিন থেকেই আঘাত পেয়েছি। ছয় বন্ধু পোস্টার লাগাতে গিয়েছিলাম বার একাডেমিতে। আমরা যখন পোস্টার লাগিয়ে ফিরছি আমাদের আটকালো। আমি ভেবেছিলাম আমাকে মারবে তাই বললাম তোরা পালা। আমাকে পিটিয়ে সেখানে অজ্ঞান করা হয়েছিল, পিঠে সাইকেল ভাঙা হয়েছিল। তখন আব্বা জেলে, বড় ভাই নাসিম ওসমান বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে ছুটে যান। আমার বাবাকে খুনি মোশতাক ফোন করল। তিনি আমার বাবাকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। আমার মা মোশতাকের প্রস্তাবে বলেছিল, তিনি যদি আপনার প্রস্তাবে রাজি হয় তাহলে হয় তাকে খুন করবো নয়তো আমি নিজে আত্মহত্যা করবো। এর ১০ মিনিটের মধ্যে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে আমার বাবাকে গ্রেফতার করা হলো। গোলাম মোর্শেদ ফারুক সাহেবকেও সেদিন গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার ছেলেরা আজ পত্রিকা বিক্রি করে খায়। আমার বাবা আর মনসুর আলী চাচা এক রুমে ছিলেন। সেদিন তাকে অযুও করতে দেয়নি। আজকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলেন। তারা সেদিন বলেছিল আমরা মরেও প্রমাণ করতে চাই আমরা বঙ্গবন্ধুর লোক। আমরাও মরে প্রমাণ করতে চাই শেখ হাসিনার লোক আছি থাকবো। একটা নির্বাচন হয়েছে। এটা আসলেই খেলা শুরু হয়ে যায়। ২০১৬-১১ তে কী করেছি এবার কী করেছি তা আমি জানি। বলব না কারণ দলকে ভালোবাসি। রাজনীতিতে আঘাত পেয়েছি কিন্তু কষ্ট পাইনি। কবরস্থানে যা হয়েছে তা কোনো সন্তান মানতে পারে না। নেত্রী আমাকে বলেছিলেন আমি সব বিষ হজম করি আমি নীলকন্ঠী। আমাকে আঘাত করে কথা বললেও আমি কিছু বলি না। কারণ আমি আমার নেত্রীর মত হতে চাইছি। এটা খুব কষ্টের, আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমার স্ট্রেস অ্যাটাকও হয়েছিল। আমি আমার বাবা-মা ও ভাইকে ভালোবাসি। আমি বলেছিলাম গোপনেও হলেও তাদের বলেন আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে। শয়তান আর ফেরেশতা ছাড়া সবাই ভুল করে। তাও হয়নি, তাই কষ্টটা আরও বেড়ে গেছে।

শামীম ওসমান আরও বলেন, আমার বাবা মৃত্যুর আগে আমাদের তিন ভাইয়ের হাত শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন ওরা যদি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মরেও যায় তাহলে তাই হোক। আমার মা আমাকে একটা কথা বলেছিলেন নামাজ পড়ো, নেত্রী শেখ হাসিনার সামনে অনেক কথা বলছিলাম। তিনি বলেছিলেন হতাশ হলে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনী পড়বা। বড় ভাই নাসিম ওসমান বলেছিলেন আল্লাহকে চেনার চেষ্টা করো। আমি বুঝতে পারিনি চিনবো কীভাবে। পরে আমি বুঝেছি এভাবে চেনা যায় আল্লাহকে। সব ধর্ম সুন্দর কোন ধর্ম মানুষকে খারাপ শিক্ষা দেয় না। তারা সম্মান করতে জানে।  

তিনি বলেন, আমি প্রেস কনফারেন্স না করলে সমস্যা হত। একটা পক্ষ মাঠে নেমেছিল কারা এরা। কেউ কেউ লেখে দল আমাকে দিয়ে তৈমূর ভাইকে কিছু প্রমাণ করার জন্য দাঁড় করিয়েছে। কেউ আমাকে এ নির্দেশনা দেয়নি। তবে, লেখা হচ্ছে এটা ইচ্ছা করে করা হচ্ছে। এত নিচু লেভেলের চিন্তা আমার নেত্রীর নেই। রাজনীতিতে কিছু নোংরামি আছে। নারায়ণগঞ্জ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সামনে আমার জানামতে প্রচণ্ড বড় আঘাত আসছে দেশের ওপরে। কে বাঁচাতে পারে ওপরে সৃষ্টিকর্তা আর নিচে শেখ হাসিনা। যত আঘাত আসছে তিনি নিজের ওপর নিচ্ছেন। তার ওপর যখন গ্রেনেড হামলা হলো তখন মানবাধিকার কোথায় আছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা বিদেশে আশ্রয় নেয় তখন কোথায় মানবাধিকার। এখানে অনেকের ভেতরে রক্তক্ষরণ আছে। সময় আসছে আমাদের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তারা যুদ্ধ করেছিল দেশটাকে স্বাধীন করার জন্য। আন্তর্জাতিক রাজনীতি চলছে। হয়তো আগামী এক-দুই মাসে একটা আঘাত করার চেষ্টা হবে। তারা জিততে পারবে না কারণ নেত্রীর ওপর আল্লাহর রহমত আছে। আমার ভেতরেও রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমি জানি, ইচ্ছা করলে কী করতে পারি। আমি জবাব দেওয়ার ক্ষমতা রাখি। প্রচণ্ড কষ্ট লেগেছে মনে।

তিনি আরও বলেন, আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই অবিলম্বে এ হত্যার বিচার করা হোক। আমি দাবি তুললাম। কারণ এ হত্যার কথা বলে আমার পরিবারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অনেকে সস্তা কথা বলে। পাশাপাশি শহরের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। আমরা নারায়ণগঞ্জে কারও পায়ে ভর দিয়ে রাজনীতি করি না। আমাদের নেতা একজনই শেখ হাসিনা। বাকি আর কাউকে নেতা হিসেবে গোনায় ধরি না। হুমায়ুন রবিউলকে সরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু শেখ হাসিনার কর্মী হওয়া থেকে কেউ সরিয়ে দিতে পারবে না। যাদের অসম্মান করা হয়েছে লোকজন করতালি দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
এমআরপি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।