ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

ভারপ্রাপ্তরাই চালাচ্ছে জামায়াত: প্রকট সাংগঠনিক সঙ্কট

আসাদ জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১০
ভারপ্রাপ্তরাই চালাচ্ছে জামায়াত: প্রকট সাংগঠনিক সঙ্কট

ঢাকা:যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে চরম বিপাকে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী। অগত্যা দলটির  হাল ধরেছেন  ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সেক্রেটারি জেনারেলরা।

কিন্তু সেটাও বা আর কতোদিন! গঠনতন্ত্রে অনধিক ছয় মাস  ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে দল পরিচালনার সুযোগ রয়েছে। এ সময়টুকুও এখন শেষ হওয়ার পথে । তারপর শুরু হবে আরেক সংকট ---গোঁদের ওপর যাকে বলে বিষফোঁড়া।


এ নিয়ে কথা হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল  মুজিবুর রহমান ও প্রচার বিভাগের সম্পাদক অধ্যাপক তাসনীম আলমের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তারা বলেন, ‘দলীয় গঠনতন্ত্রে এ ব্যাপারে কী লেখা আছে, তা না পড়ে বলা যাবে না। ’ পরে মুজিবুর রহমান এ প্রতিবেদককে গঠনতন্ত্র পড়ে নেওয়ার অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, ‘আমার মুখের কথা শোনার চেয়ে গঠনতন্ত্র দেখে নিলেই ভালো করবেন। ’

অপরদিকে, তাসনীম আলম মূল প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘আমীরের (মতিউর রহমান নিজামী) মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। ’

২৯ জুন জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন।
ওইদিন রাতেই নায়েবে আমীর মকবুল আহমাদকে ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রায় ৪ মাস শেষ হতো চললো। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আর ২ মাসের মধ্যেই জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ ও সেক্রেটারি জেনালের এটিএম আজহারুলের মেয়াদ শেষ হবে।   মেয়াদোত্তীর্ণ ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সেক্রেটারি জেনারেল দিয়েই জামায়াত পরিচালিত হবে, নাকি গঠনতন্ত্র মেনে এ সময়ের মধ্যে আমীর ও সেক্রেটারি জেনারেল নিয়োগ দেওয়া হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে সর্বত্র!

জামায়াতের প্রচার বিভাগের সম্পাদক তাসনীম আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে মজলিসে শুরা। ’

এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও ৬টি মহানগর কমিটির মধ্যে ৩টি চলছে ভারপ্রাপ্ত আমীর দিয়ে। এই ৩টি মহানগর কমিটির আমীরও বিভিন্ন মামলায় আটক রয়েছেন।

জামায়াতের শীর্ষ ৩ নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও দেলাওয়ার  হোসাইন সাঈদী’র গ্রেফতারের দিন থেকে দীর্ঘ ৩ মাস আত্মগোপনে থাকার পর ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমীর রফিকুল ইসলাম খান গত ২৫ আগস্ট গ্রেপ্তার হন।

রফিকুল ইসলাম খান গ্রেফতার হওয়ার পরই ঢাকা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপিকে ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ নেতার কাঁধে ভর করেই  ঢাকা মহানগর জামায়াত পার করছে সময়ের সবচেয়ে খারাপ সময়।

ঢাকার পর দ্বিতীয় ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রাজশাহী মহানগর জামায়াতও চলছে ভারপ্রাপ্ত আমীর দিয়ে। রাজশাহী মহানগর কমিটির আমীর আতাউর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর নায়েবে আমীর নজরুল ইসলাম এখন ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে খুলনাতেও একই ঘটনা ঘটেছে। মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার আছেন কারাগারে।

বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর ও সেক্রেটারি এখন পর্যন্ত বাইরে থাকলেও দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের জামায়াতের আমীর ও সেক্রেটারি আছেন কারাগারে। জামায়াতের এসব শাখায় ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সেক্রেটারি নিয়োগ দিয়েছে দলটি।

সূত্রমতে, ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে সক্রিয় রাজনীতি শুরু করার পর জামায়াতের এতজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে একযোগে কারাগারে যেতে হয়নি। একযোগে নিয়োগ দিতে হয়নি এতজন ভারপ্রাপ্ত আমীর-সেক্রেটারি। ভারপ্রাপ্তদের ভারে এখন অনেকটাই নুয়ে পড়েছে দলটি। আর সাংগঠনিক সঙ্কটও প্রকটতর হচ্ছে দিন দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।