ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

পুণ্যভূমি সিলেটে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বিএনপি: দাবি নেতাদের

  সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২১
পুণ্যভূমি সিলেটে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বিএনপি: দাবি নেতাদের

সিলেট: এক যুগের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থেকে বেহাল অবস্থা বিএনপির। সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর বিএনপির দৈন্যতা আরো প্রকট আকারে দেখা দেয়।

মাঠ পর্যায়ে আন্দোলন সংগ্রামে নেতাদের উপস্থিতিও সংকোচিত হয়ে আসে। ঝামেলা এড়াতে অনেকে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন অবলীলায়।  
 
খালেদা জিয়া মুক্তি আন্দোলন থেকে বিভিন্ন আন্দোলন যখন চার দেওয়ালের ভেতর টেবিলে সীমাবদ্ধ, তখনও রাজপথ কাঁপিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান ও তার অনুসারী দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলের কমিটিতে সিলেটে তৃণমূলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের অবমূল্যায়ন ও অপমান করায় বিএনপি ছাড়েন প্রভাবশালী নেতা অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান। তার পদত্যাগে বড় ধাক্কা লেগেছে সিলেট বিএনপির তৃণমূলে। এরপর থেকে শত শত নেতাকর্মীরা দল থেকে পদত্যাগ করছেন।  
 
এবার কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপির উদ্যোগে রোববার (৩০ আগস্ট) দুপুর ২টায় নগরের মিরাবাজার একটি হল রুমে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জানিয়ে দেওয়া হয় দলের ভেতরের অবস্থা। হযরত শাহজালাল (রহ.) এর পূণ্যভূমি সিলেটে বিএনপি পরিবার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বলে মন্তব্য করেছেন দলের একাংশের নেতারা।  

তাদের দাবি, ‘যদি কোনো কার্যকরী ফলাফল এবং সুরাহা না হয়, তাহলে সিলেট বিএনপি পরিবারে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। তাদের কথায়, চক্ষু বন্ধ করলেও প্রলয় রোধ করা যায় না। ’
 
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ ক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিগত ৩/৪ বছর থেকে সিলেট বিএনপি পরিবারে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। জেলা বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন কমিটি গঠনে অনিয়ম ও অসাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক মূল্যবোধকে জলাঞ্জলী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে সংগঠনকে ধ্বংস করার হীন উদ্দেশ্যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে।
 
নেতাদের দাবি, ছাত্রদল গঠন প্রক্রিয়ায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামে যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলো রহস্যজনক কারণে তাদেরকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমনকি ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। মর্মান্তিক বিষয় হলো, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকেও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
 
যারা তিল তিল করে যুবদলকে সংগঠিত করেছিল, তাদেরকেও জেলা ও মহানগর যুবদলে স্থান দেওয়া হয়নি। যুবদলের রাজপথের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দেওয়ার কারণে সিলেট বিএনপি পরিবারে এক বিস্ফোরণমুখ পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
 
এমতাবস্তায় সিলেটের চারজন কেন্দ্রীয় নেতা মাঠপর্যায়ের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের চাপে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে মহাসচিবের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে নেতারা পদত্যাগ থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখেননি।
 
বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সর্বশেষ সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এখানেও দেখা গেছে, যারা রক্ত ও ঘামের বিনিময়ে স্বেচ্ছাসেবক দলকে বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে তৈরি করেছিল, তাদেরকেও কমিটি থেকে বাদ দিয়ে বিএনপিতে পদধারী কিছু লোকদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হলো। ফলশ্রুতিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা ও মহানগর বেশিরভাগ নেতাকর্মী ক্ষোভে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে আমরা বিএনপি পরিবার অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত।
 
তিনি বলেন, দুর্দিনে যারা দলের জন্য জীবন বাজি রেখেছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান।

সম্প্রতি সিলেটে যে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেগুলোতে দেখা যায় দলের সব আন্দোলন সংগ্রামের যারা মুখোমুখি হয়েছেন। তাদেরকে বেছে বেছে দল থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আজকে আমরা যারা উপস্থিত হয়েছি, আমরা এই দলটিকে ভালোবেসে শুরু থেকে এই পর্যন্ত সব প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি। আজকে কিছু ব্যক্তি বিশেষকে দলে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য দলের আদর্শিক নিবেদিত প্রাণ নেতাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ভূলন্ঠিত করে রাখার চেষ্টা চলছে।
 
নেতারা বলেন, এটা অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আজকে রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। কিছু মানুষ এই দলের এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য দলটিকে তার ব্যক্তিগত জায়গীর হিসেবে ব্যবহার করছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন যেখানে মুখ্য হওয়ার কথা, সেই দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আজকে যুব ও তরুণ প্রজন্ম আদর্শহীনতার রাজনীতির কারণে রাজনীতিটাকেই নীতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে।
 
নেতারা বিএনপির উচ্চপদস্থ নেতাদের দৃষ্টি আকষর্ণ করে বলেন, দলটির আদর্শিক কর্মী যদি হারিয়ে যায়, তাহলে শহীদ জিয়ার আদর্শ হারিয়ে যাবে এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি যখন দেশের সব মানুষের দাবি, এই দাবিটিকে পূরণ করার জন্য যেসব নেতৃত্ব দলে প্রয়োজন, তা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
 
আজকে যদি ‘বণিক’ শ্রেণী ও ‘নব্য সুবিধাভোগী চক্রের’ কাছে দল জিম্মি হয়ে যায়, তাহলে দল এবং জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আমরা শুধু সিলেট নয়, সমগ্র দেশের ত্যাগী, পরিশ্রমী ও বঞ্চিত নেতাদের কথা বলছি। বিএনপির নীতিনির্ধারক নেতারা যদি এসব বিষয়ে দৃষ্টি না ফেরান, তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে।
 
অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামানের প্রসঙ্গে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তৎকালীন অনেক নেতা ব্যর্থ হলেও সামসুজ্জামান জামান রাজপথে সেদিন বিজয়ের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এছাড়াও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ আন্দোলনসহ সর্বশেষ সরকার বিরোধী অসযোগ আন্দোলনসহ খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথে জীবনপণ নেতৃত্ব দিয়েছেন।
 
সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে তিনি বলেন, আজকে আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে এই বিষয়টি সবার কাছে তুলে ধরলাম। তাই সিলেট বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
 
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা সেলিম আহমদ, জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আহমেদুল হক চৌধুরী মিলু মিয়া, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সুদ্বীপ রঞ্জন সেন বাপ্পু, মহানগর বিএনপির তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক ফয়েজ আহমদ দৌলত, সহ-তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক হাজী শওকত আলী, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন লস্কর, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, মহানগর বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মিনহাজ উদ্দিন মুসা, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য ও সাবেক জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিকুর রহমান সাদিক, জেলা বিএনপির সাংষ্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা জাসাসের আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আহমদ রানু, জেলা তাঁতীদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল হক, মহানগর বিএনপির সদস্য আব্দুল গফফার, জেলা বিএনপির সাবেক সহ প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক প্রভাষক আজমল হোসেন রায়হান, জেলা বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মতিউল বারী খুর্শেদ প্রমুখ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২১
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।