ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

মাঠ দখলের রাজনীতি নিয়ে উদ্বেগ

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১০
মাঠ দখলের রাজনীতি নিয়ে উদ্বেগ

ঢাকা: ঈদুল ফিতরের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সম্ভাব্য মাঠ দখল কর্মসূচি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজনীতি বোদ্ধা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এর ফলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।



এরই মধ্যে ঈদের পর বিভাগীয় শহরগুলোতে মহাসমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগ। অপরদিকে রাজধানী ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট অভিমুখে লংমার্চ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে চার দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপি। উভয় পক্ষের কর্মসূচিতেই তাদের জোট শরিক ও সমমনা দলগুলোর অংশগ্রহণও অনেকাংশে নিশ্চিত।

একদিকে লংমার্চ কর্মসূচিসহ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিরোধী দল, অন্যদিকে তাদের সম্ভাব্য কর্মসূচিকে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির পাঁয়তারা আখ্যা দিয়ে তা কঠোরভাবে দমনের আওয়াজ দিচ্ছে সরকার পক্ষ।

রাজনৈতিক দলগুলো এভাবে দুই শিবিরে ভাগ হয়ে মাঠ দখলের রাজনীতিতে নামলে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও। বিষয়টি নিয়ে এখন জোর আলোচনা চলছে শহুরে আড্ডা আর গাঁয়ের জটলাতেও। ওয়ান-ইলেভেন পূর্ববর্তী রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক সংঘর্ষের মতো আরও কোনো ঘটনার আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য  অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মাঠ দখলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি দিলে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ জাগাটাই স্বাভাবিক। ’

তিনি বলেন, ‘কোনো আন্দোলনে যাতে সাধারণ মানুষের ক্ষতি না হয় সেজন্য সকার ও বিরোধী দলের সমঝোতা দরকার। বিরোধী দল যদি তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নামে আর সরকারি দল রাজপথ দখলে রাখার জন্য সভা-সমাবেশ করে তাহলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই থাকে। ’

আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, রাজনীতি করার অধিকার ও সরকারের বিরুদ্ধে গঠনমূলক সমালোচনা করার অধিকার  বিরোধী দলের আছে। আমরাও চাই বিরোধী দল আমাদের খারাপ কাজের সমালোচনা করুক। তবে কেউ দেশকে অস্থিতিশীল করতে ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার ষড়যন্ত্র করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সমাবেশ ও বিরোধী দলের লংমার্চ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউ দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

তবে যার যার কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করলে সংঘর্ষের সম্ভাবনা কম বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

বিরোধী দলকে কঠোর ভাষায় হুঁসিয়ার করলেও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিষয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেন তিনি। তবে এর দায় পুরোটাই তিনি চাপিয়ে দেন মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের ওপর।

মাহবুব-উল-আলম হানিফ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘এদেশের মানুষের চরিত্র খারাপ। সামাজিক কোনো উৎসব বা বিশেষ দিন সামনে এলেই কিছু ব্যবসায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবের দাম বাড়িয়ে দেন। ’

দেশবাসীকে নৈতিক চরিত্র ভালো করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ ঠকানোর প্রবণতা পরিত্যাগ করতে পারলেই দেশ ভাল হবে। জোর করে কাউকে ভাল করা যায় না। ’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক এমপি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধা দেওয়ার জন্যই আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। তাদের ইতিহাস সবাই জানে। জিয়াই যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে মুক্তি দিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রীও করেছিলেন তিনি। তার স্ত্রী খালেদা জিয়া এখন ধর্মের নামে নিজামী-মুজাহিদদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তারা জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে আবোল তাবোল বকছেন। ’

বিরোধী দল দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁসিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করছে। ক্ষমতায় আসার পর গত ১৯ মাসে তারা শুধু বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন ছাড়া আর কিছু উপহার দিতে পারেনি। আমরা জনগণের মৌলিক অধিকার নিয়ে কথা বলছি। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিলে তার দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। ’
 
বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাজনীতিতে দলের পক্ষে জনসমর্থন বাড়াতে প্রতিযোগিতা থাকবে। তবে এ প্রতিযোগিতা অগণতান্ত্রিক হোক এটা কেউই আশা করে না। বিএনপি জনগণের মৌলিক দাবি নিয়েই রাজপথে কথা বলছে। এর ভেতরে অরাজকতা খোঁজা সরকারের দুরভিসন্ধি। তাই তারা মাঠ দখলের কৌশল নিয়েছে। এর ফলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে তারাই দায়ী থাকবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad