ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

এরশাদকে নিয়ে দোটানায় মহাজোট

শামীম খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১০
এরশাদকে নিয়ে দোটানায় মহাজোট

ঢাকা: সাবেক সেনা শাসক এরশাদকে নিয়ে ক্ষমতাসীন মহাজোটের নেতা-কর্মীরা দোটানায় পড়েছেন। এদের একাংশ অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাজনৈতিক তৎপরতায় অংশ নিতে আপত্তি করছেন।

এখানেই শেষ নয়, এরশাদের অতীত কুকর্মের বিচারও দাবি করছেন তারা।  

অন্য অংশটি জানিয়েছে, মহাজোটের শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টির সঙ্গে অভিন্ন ইস্যুতে এক সঙ্গে রাজনীতি করতে তাদের আপত্তি নেই ।

দ্বিতীয় অংশটির বক্তব্য: জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্যের ভিত্তিতেই মহাজোট হয়েছে। কোনো একক ব্যক্তিকে ইস্যু করে মহাজোটের ঐক্য নষ্ট করা উচিত হবে না।  

এদের মতে, এরশাদের বিচার নয়, বরং এ মুহূর্তে জরুরি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা।

এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐক্য আর অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর বিচার দুটি আলাদা বিষয়।

তিনি বলেন, মহাজোট গঠন, সপ্তম সংশোধনী বাতিল ও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর --এগুলোকে আলাদা বিষয় হিসেবেই দেখতে হবে। আমরা অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের বিচার চাই। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে এটা এ  মুহূর্তেই করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আমাদের প্রথম দাবি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।

একই সুরে কথা বলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুও।

তিনি বলেন, ‘ মহাজোটের শরিক দলের সঙ্গে  রাজনৈতিক ঐক্য হয়েছে। এটা ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির ঐক্য নয়। ’

সপ্তম সংশোধনী বাতিলের পর মহাজোটে এর কোনো প্রভাব পড়বে না জানিয়ে তিনি বলেন,  ‘তবে এরশাদের উচিত স্বৈরশাসনের পক্ষে ওকালতি না করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। ’

তিনি বলেন, যে কারণে মহাজোট গড়ে উঠেছিল তা এখনও বিদ্যমান। দেশ এখনও বিপদমুক্ত নয়। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের বিচার করার দায়িত্ব সরকারের। তবে এ মুহূর্তে জরুরি কর্তব্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জঙ্গিবাদের সশস্ত্র ঘাঁটি নিশ্চিহ্ন করা।

তবে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)’র সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক।

তিনি বলেন, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে অপকর্ম করেছে, স্বৈরশাসন ও সংবিধানবিরোধী কাজ করেছে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

তিনি নিজেদের ১৪ দলের আওতাভুক্ত জানিয়ে বলেন, ‘স্বৈরাচারিএরশাদকে  গণতান্ত্রিক বলা যায় না। আমাদের জোট ১৪ দল নিয়ে । আওয়ামী লীগ এরশাদকে নিয়ে মহাজোট করেছে। ন্যাপ এর সঙ্গে এক মত হতে পারে না। ’

একই কথা গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিমেরও।

তিনি বলেন, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের বিচার হওয়া উচিত। জীবিত না থাকলে মরণোত্তর বিচার হওয়া উচিত। সে এরশাদই হোক আর যেই হোক। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এভাবে ক্ষমতা দখলের চিন্তা না করে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মহাজোট মনে করি না। মহাজোট করেছে আওয়ামী লীগ। আমরা ১৪ দল মনে করি। ’

কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অসিত বরণ রায় বলেন, আমাদের আদর্শিক জোট ১৪ দল। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনার ঐক্যের ভিত্তিতে গঠিত এ জোটকে নিয়েই অগ্রসর হতে চাই। অসাংবিধানিক পথে ক্ষমতা দখলকারী জীবিতই হোক আর মৃতই হোক, তার বিচার হওয়া দরকার।

গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, অবৈধ ক্ষমতা দখল বন্ধ করতে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছা অবশ্যই দরকার। এভাবে ছেড়ে দিলে তো পুনরাবৃত্তি ঘটতেই পারে। আমরা মূলত ১৪ দলের সঙ্গে আছি।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, একজন ব্যক্তির মামলায় হাইকোর্ট সংপ্তম সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়েছে। এর সঙ্গে সরকার বা মহাজোটের কোনো সম্পর্ক নেই। ঐক্যেও সমস্যা হবে না। জাতীয় পার্টি আগের মতোই মহাজোটের ঐক্য সুদৃঢ় রাখবে।

শরিকদের মধ্যে দোটানা প্রসঙ্গে প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের বক্তব্যও একই।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মহাজোটে কেন এর প্রভাব পড়বে। হাইকোর্টের রায়ের সঙ্গে মহাজোটের কী সম্পর্ক? হাইকোর্টের রায় তো বলে দেয়নি এরশাদের বিচার করো। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।