ঢাকা: সাবেক সেনা শাসক এরশাদকে নিয়ে ক্ষমতাসীন মহাজোটের নেতা-কর্মীরা দোটানায় পড়েছে।
এদের একদল অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী ও সামরিক জান্তা এরশাদের দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাজনৈতিক তৎপরতায় অংশ নিতে আপত্তি করছেন।
অন্য দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাজনীতিতে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে।
দ্বিতীয় দলটির মতে, জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্যের ভিত্তিতেই জোট হয়েছে। কোনো একক ব্যক্তির কারণে মহাজোটের ঐক্য নষ্ট হতে পারে না। পাশাপাশি এরশাদের বিচারের পরিবর্তে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জরুরি বলে তারা মনে করছেন।
এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি কে বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐক্য আর অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর এক বিষয় নয়।
তিনি বলেন, মহাজোট আর সপ্তম সংশোধনী বাতিল ও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর বিচার দুটো আলাদা বিষয়। আমরা অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের বিচার চাই। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটা হবে। তবে এ মুহূর্তেই করতে হবে তেমন কোনো কথা নেই। আমাদের প্রথম দাবি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। ’
একই সুরে কথা বলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)’র সভাপতি হাসানুল হক ইনুও।
তিনি বলেন, ‘মহাজোট দলের সঙ্গে দলের রাজনৈতিক ঐক্য, ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির নয়। ’
সপ্তম সংশোধনী বাতিলের পর মহাজোটে এর কোনো প্রভাব পড়বে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে এরশাদের উচিত স্বৈরশাসনের পক্ষে উকালতি না করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। ’
তিনি বলেন, যে কারণে মহাজোট গড়ে উঠেছিল তা এখনও বিদ্যমান। দেশ এখনও বিপদমুক্ত নয়। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের বিচার করার দায়িত্ব সরকারের। তবে এ মুহূর্তে জরুরি কর্তব্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জঙ্গিবাদের সশস্ত্র ঘাঁটি নিশ্চিহ্ন করা।
তবে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)’র সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক।
তিনি বলেন, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে অপকর্ম করেছে, স্বৈরশাসন ও সংবিধানবিরোধী কাজ করেছে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এরশাদকে স্বৈরাচারের বাইরে গণতান্ত্রিক বলা যায় না। আমাদের জোট ১৪ দল। আওয়ামী লীগ এরশাদকে নিয়ে মহাজোট করেছে। ন্যাপ এর সঙ্গে এক মত হতে পারে না।
একই কথা গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিমেরও।
তিনি বলেন, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের বিচার হওয়া উচিত। জীবিত না থাকলে মরণোত্তর বিচার হওয়া উচিত। সে এরশাদই হোক আর যেই হোক। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এভাবে ক্ষমতা দখলের চিন্তা না করে। আমরা মহাজোট মনে করি না। মহাজোট করেছে আওয়ামী লীগ। আমরা ১৪ দল মনে করি।
কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অসিত বরণ রায় বলেন, আমাদের আদর্শিক জোট ১৪ দল। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনার ঐক্যের ভিত্তিতে গঠিত এ জোটকে নিয়েই অগ্রসর হতে চাই। অসাংবিধানিক পথে ক্ষমতা দখলকারী সে জীবিত হোক আর মৃত হোক, তার বিচার হওয়া দরকার।
গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, অবৈধ ক্ষমতা দখল বন্ধ করতে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছা অবশ্যই দরকার। এভাবে ছেড়ে দিলে তো পুনরাবৃত্তি ঘটতেই পারে। আমরা মূলত ১৪ দলের সঙ্গে আছি।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, একজন ব্যক্তির মামলায় হাইকোর্ট সংপ্তম সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়েছে। এর সঙ্গে সরকার বা মহাজোটের কোনো সম্পর্ক নেই। ঐক্যেও সমস্যা হবে না। জাতীয় পার্টি আগের মতোই মহাজোটের ঐক্য সুদৃঢ় রাখবে।
শরিকদের মধ্যে দোটানা প্রসঙ্গে প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের বক্তব্যও একই।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মহাজোটে কেন এর প্রভাব পড়বে। হাইকোর্টের রায়ের সঙ্গে মহাজোটের কী সম্পর্ক? হাইকোর্টের রায় তো বলে দেয়নি এশাদের বিচার করো। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১০
