ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

করোনা নিয়ে সরকারের বক্তব্যে আত্মতুষ্টি দেখা যাচ্ছে: বামজোট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২০
করোনা নিয়ে সরকারের বক্তব্যে আত্মতুষ্টি দেখা যাচ্ছে: বামজোট বাম গণতান্ত্রিক জোট।

ঢাকা: করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের বক্তব্যে এক ধরনের আত্মতুষ্টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

রোববার (৫ এপ্রিল) সকালে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা এ কথা বলেন।  

বিবৃতি পাঠিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাসদ (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকী ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল প্রমুখ।

বিবৃতিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা আরো বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে নেওয়া পদক্ষেপ হিসেবে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার ১০দিন অতিবাহিত হয়েছে। ইতোমধ্যে সারাদেশের শ্রমজীবী, বস্তিবাসী, হকার, রিকশাচালক, ফুটপাতের ছিন্নমূল, গ্রামের দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে দুর্বিসহ সংকট নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে রপ্তানি শিল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ছাড়া হতদরিদ্র মানুষের জন্য কোনো তহবিল বরাদ্দের ঘোষণা ছিল না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, অর্থনীতিবিদ সবাই দেশের হতদরিদ্রদের জন্য আগামী ৬ মাসের খাদ্য সরবরাহ ও নগদ অর্থ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। মানুষ আশা করেছিল প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা ও পদক্ষেপের ঘোষণা থাকবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সংবাদ সম্মেলনে হতদরিদ্রদের খাদ্য ও জীবিকার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বরাদ্দের ঘোষণা না থাকায় জাতি হতাশ হয়েছে। ‘প্রধানমন্ত্রীর ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন তাতে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা, ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পে এবং এসএমই খাতে ৪ দশমিক ৫ ও ৪ শতাংশ সুদে ঋণ সহায়তার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা, ইডিএফ এর জন্য ১২ হাজার ৫০০ কোটি, প্রি শিপমেন্ট এর জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা এবং পোষাক শিল্পের জন্য আগে ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষিত হয়েছে’।

বিৃবতিতে আরও বলা হয়, দেশের অর্থনীতির ৫০ শতাংশ এর অধিক হলো অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। যাদের হিসাব সরকারের খাতায় নেই। যাদের কোনো টিআইএন নম্বর নেই। মুদি দোকানদার, রিকশা গ্যারেজ, পান দোকানদার, ভ্যানগাড়িতে সবজি বিক্রেতাসহ অন্যন্যরা। এরকম কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষকে গড়ে ৫০ হাজার টাকা সুদমুক্ত ঋণ এক বছরের জন্য দিলে মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। অথচ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এদের জন্য এবং হতদরিদ্রদের খাদ্য ও নগদ অর্থ প্রদানের জন্য যেমন সুনির্দিষ্ট বরাদ্দের উল্লেখ নেই তেমনি দেশের বিশাল ব্যক্তিখাত কৃষির জন্যও সুনির্দিষ্ট কোন বরাদ্দ ঘোষিত হয়নি। করোনার প্রভাবে ইতোমধ্যে কৃষিতে সংকট তৈরি হয়েছে। ফল, সবজি, ফুল, মৎস্য চাষিরা, পোল্ট্রি, ডেইরি খামারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের সুরক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ জরুরি।

বাম নেতারা বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা ও সমন্বয়হীনতার জন্য দেশের পোষাক শিল্পের শ্রমিকরা একদিকে হয়রানির শিকার হচ্ছে এবং আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষিত হলেও পোষাক কারখানা বন্ধ থাকবে কিনা তা মালিকদের ওপর ছেড়ে দিয়ে সরকার অনিশ্চয়তা তৈরি করে। হাজার হাজার শ্রমিক নারী-পুরুষ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হেঁটে, ট্রাকে, কাভার্ড ভ্যানে চড়ে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে আসতে থাকে। সকালে অনেক কারখানায় গিয়ে শ্রমিকরা দেখে কারখানা বন্ধের নোটিশ ওই শ্রমিকরা আবার হেঁটে, ট্রাকে গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরছেন। কোথাও কোথাও পুলিশ ট্রাক থেকে তাদের নামিয়ে দিচ্ছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে তারা। সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী যিনি করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কমিটির প্রধান তিনি বলছেন দলে দলে মানুষের একবার বাড়ি ফেরা, একবার ঢাকা আসা করোন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে আবার বাণিজ্যমন্ত্রী যিনিও করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কমিটির সদস্য। তিনি পোশাক শিল্প মালিকদের সঙ্গে সভায় বলছেন প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দিয়ে কারখানা খোলা রাখতে পারবেন। সরকারের এমন দ্বি-চারিতা ও সমন্বয়হীনতার নির্মম শিকার হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ।

বিবৃতিতে নেতারা আরো বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের বক্তব্যে এক ধরনের আত্মতুষ্টির বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও গুরুত্ব অনুধাবন করে যেখানে পর্যাপ্ত পরীক্ষাই করা হচ্ছে না সেখানে আত্মতুষ্টিতে না ভেসে বেশি বেশি পরীক্ষা করা এবং প্রতিরোধে উদ্যোগ নেওয়ার দিকে মনযোগ দেওয়া দরকার।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টিকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ হিসেবে ঘোষণা করে সব রাজনৈতিক, সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানানো সত্ত্বেও  প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তার প্রতিফলন না থাকায় ক্ষোভ  প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে পুনরায় সর্বদলীয় বৈঠকের মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২০
আরকেআর/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad