ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

৯ ডিসেম্বর সম্মেলন

ঝিমিয়ে পড়েছে আদিতমারী-কালীগঞ্জ আ’লীগ

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৯
ঝিমিয়ে পড়েছে আদিতমারী-কালীগঞ্জ আ’লীগ

লালমনিরহাট: আন্তঃকোন্দল আর দায়িত্বপ্রাপ্তদের তদারকির অভাবে অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে লালমনিরহাটের আদিতমারী এবং কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার সব সহযোগী সংগঠনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।

৯ ডিসেম্বর জেলা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সদর, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলো সরব হয়ে উঠলেও ঝিমিয়ে পড়েছে কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলা। হাতীবান্ধা উপজেলায় দুটি গ্রুপকে পাল্টাপাল্টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড সম্মেলন করতে দেখা গেছে।

 

জানা গেছে, লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ৩টি সংসদীয় আসনের ২টি আওয়ামী লীগ ও একটি জাতীয় পার্টির দখলে। যার মধ্যে লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা পাটগ্রাম) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন এমপি ও লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী কালীগঞ্জ) আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনে সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি।

নিজের নির্বাচনী এলাকা লালমনিরহাট-১ আসনের পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলায় কমিটি গঠনের কাজ করছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোতাহার হোসেন এমপি এবং সদর ও লালমনিরহাট পৌসভার ওয়ার্ড ইউনিয়নে কমিটি গঠনের কাজ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। তবে সম্মেলনের আমেজ নেই লালমনিরহাট-২ আসনের আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলায়।  

৩টি আসনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ লালমনিরহাট-২ আসনে টানা সাতবার সংসদ সদস্য ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রায়ত মজিবর রহমান এমপি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান আহমেদ। একাদশ জাতীয় সংসদেও তিনিই নির্বাচিত হয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ দিনের জাপার এ ঘাঁটি আওয়ামী লীগের দখলেও এলেও ধরে রাখার তৎপরতা নেই বলে মনে করেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।  

আগামী ৯ ডিসেম্বর জেলা সম্মেলনকে ঘিরে  লালমনিরহাট-২ আসনের দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নেই কোনো উৎসবের আমেজ। বাকী দুটি আসনের সব ইউনিটের নতুন কমিটি গঠন প্রায় শেষের দিকে হলেও এ আসনে পুরাতন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিই একমাত্র ভরসা। নতুন করে কমিটি গঠন বা বর্ধিত সভার কোনো আয়োজন নেই সরকারি এ দলটির। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোপনে এ আসনের মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছে বিএনপি। ফলে হতাশ আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।  

লালমনিরহাট-২ আসনের আদিতমারী উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ প্রকাশ্য দুই ভাগে বিভক্ত রয়েছে। একটি সভাপতি শওকত আলী গ্রুপে নের্তৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সিরাজুল হক ও অপরটি সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি। এ দ্বন্দ্বের কারণে আওয়ামী লীগের দলীয় সব কার্যক্রম পৃথক পৃথক ভাবে পালন করা হয়।

এ উপজেলার সব সহযোগী সংগঠন চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। ২০১৩ সালের ১৯ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৭ সালে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের কমিটি দিয়ে চলছে উপজেলা যুবলীগ। ২০১৪ সালের কমিটি দিয়ে চলছে ছাত্রলীগ।  স্বেচ্ছাসেবকলীগ চলছে প্রায় ১০ বছরের অধিক পুরনো কমিটিতে। একই অবস্থা উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষকলীগ, ওলামালীগসহ সব সহযোগী সংগঠন চলছে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটিতে। ফলে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে এক সময়ের দাপুটে আওয়ামী লীগ। প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব না থাকলেও একইভাবে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটিতে চলছে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার সব সহযোগী সংগঠন।

আদিতমারী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল হোসেন সরকার বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ দিনের মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজাতে গত মাসে ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে কমিটি গঠন শুরু করলেও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এখন সম্মেলন করতে নিষেধ করেন। তাই আর বর্ধিত সভাও করা হয়নি।  

কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু বিজয় কুমার বাংলানিউজকে বলেন, ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড কোনো ইউনিটে বর্ধিতসভা অথবা সম্মেলন করা হয়নি। আপাদত করার কোনো প্রস্তুতিও নেই। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সভাপতি, তিনি ভালো বলতে পারবেন কখন এসব সম্মেলন হবে।  

আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডে কোনো সম্মেলন করা হয়নি বা করার প্রস্তুতিও নেই। মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা, তাই তার সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছু করা সম্ভব নয়। তবে তিনি দেশে ফিরলে তার নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ওই দুই উপজেলা মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা। তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। ফিরলে হয়তো তিনি সম্মেলন করবেন। জেলা সম্মেলনের আগে সব ইউনিটে সম্মেলন করা হবে বলেও জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।