ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

খাগড়াছড়ি আ’লীগের সম্মেলনে সবার দৃষ্টি ‘সা. সম্পাদক’ পদে

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৯
খাগড়াছড়ি আ’লীগের সম্মেলনে সবার দৃষ্টি ‘সা. সম্পাদক’ পদে

খাগড়াছড়ি: দীর্ঘ সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল ও সম্মেলন। আগামী ২৪ নভেম্বর সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে উজ্জীবিত দলের জেলা শাখার নেতাকর্মীরা। সম্মেলন সফল করতে চলছে জোর প্রস্তুতি।

কাউন্সিলে শীর্ষ পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে খাগড়াছড়ি শহর। প্রায় ৮-১০ হাজার লোক সমাগমের কথা মাথায় রেখে ঐতিহাসিক খাগড়াছড়ি স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে তৈরি হচ্ছে বিশাল প্যান্ডেল।

উপজেলা, পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষে এখন সবার দৃষ্টি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিকে, কে আসছেন খাগড়াছড়ি জেলা শাখার নেতৃত্বে। তবে নেতাকর্মী থেকে স্থানীয় বাসিন্দা সবার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কৌতুহল, কে হচ্ছেন খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
 
সর্বশেষ ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেবার কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে সভাপতি এবং জাহেদুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। বছর তিনেক পর জেলা আওয়ামী লীগে দেখা দেয় অস্বস্তি। সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলমের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয় অন্য নেতাদের।
 
বিরোধ বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ে তৃণমূলে। শেষ পর্যন্ত শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠলে বহিষ্কারের খড়গ পড়ে জাহিদুলের ওপর। ২০১৬ সালের শুরুর দিক থেকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিয়ে চলছে জেলা আওয়ামী লীগ। গত সংসদ নির্বাচনের আগ থেকে দৃশ্যত নিজেদের গুছিয়ে চলতে থাকা আওয়ামী লীগের ভেতর এখন রয়েছে বিরোধীদের নিয়ে আলোচনা। তাই এই সম্মেলন বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে সর্বস্তরে।
 
নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন সম্মেলনে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে তিনজনের নাম আলোচনায় থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় চার জন। সভাপতি পদে রয়েছেন বর্তমান সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সহ-সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা এবং সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রহিস উদ্দিন। তবে এক্ষেত্রে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা প্রার্থিতার দৌড়ে বেশ এগিয়ে।  

সাধারণ পদে আলোচনায় রয়েছেন চার জন। তারা হলেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী, সহ-সভাপতি মনির হোসেন, মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামছুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলম। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে গুঞ্জনের তালিকায় রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জব্বার, দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কাশেমের নামও।
  
২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনের পর থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন নির্মলেন্দু চৌধুরী। তিনি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিরও সদস্য সচিব।
 
নির্মলেন্দু চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, দুঃসময়ে আমি দলের হাল ধরেছি। দীর্ঘ চার বছর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। এবার আমি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছি। বাকিটা আমি দলের নেতাকর্মীদের ওপর ছেড়ে দিলাম। তারা আমাকে মূল্যায়ন করবেন।
 
এই পদে তার প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলম। তার সমর্থকরা শহরজুড়ে ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড টানিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে দিদারুলের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার বড় ভাই দলের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলম।  

দিদারুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ২৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তাই আমি আশা করি আসন্ন সম্মেলনে দল আমাকে মূল্যায়ন করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করবে।
 
একই কথা বলেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. শামছুল হক। তিনি বলেন, দলের ভালো একটি অবস্থানে যেতে সবাই চায়। আমি দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে আছি। তাই সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছি। বাকিটা কাউন্সিলরদের ওপর ছেড়ে দিলাম।
 
এদিকে সভাপতি পদে অনেকটা এগিয়ে থাকা  বর্তমান সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ সাত বছর পর কাউন্সিল ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বহুল প্রতীক্ষিত এই সম্মেলন নেতাকর্মীদের নতুন করে চাঙ্গা করেছে। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিতরা দলকে আরও বেশি শক্তিশালী করবেন। তৃণমূল যদি চায় তাহলে ফের দলের হাল ধরবো।

যোগাযোগ করা হলে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা কথা বলতে অনাগ্রহ দেখান। অপর দিকে রহিস উদ্দিনকে পাওয়া যায়নি।
 
জানা গেছে, সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কেন্দ্রীয় সদস্য দীপংকর তালুকদার, বীর বাহাদুর উশৈসিং, কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ-দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত থাকবেন।
 
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চাইথোঅং মারমা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সব রকমের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি এই সম্মেলনে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। প্রায় ৮-১০ হাজার লোকের সমাগমে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
 
এবার নয়টি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভার ২০৭ জন কাউন্সিলরের ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।