ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

‘বিপথে গেলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা বন্ধ’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৯
‘বিপথে গেলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা বন্ধ’

ঢাকা: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না- এমনটা কখনো হতে পারে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, (পাবলিক বিশ্ববিদ্যাল) নিজেদের খরচ নিজেরা চালাবে, সরকার সব টাকা বন্ধ করে দেবে। সরকার কেন খরচ করবে? সেটাও তাদের চিন্তা করতে হবে।

আর উসকানি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিপথে নেওয়া এবং মুখরোচক কথা বলা মেনে নেওয়া হবে না বলেও সর্তকতা দেন প্রধানমন্ত্রী।

শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় শ্রমিক লীগের ১২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন আমি দেখলাম– যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নাকি আমরা বুঝি না। যারা কথা বলছেন তারাই বোঝেন, যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন তারাই বোঝেন আর পড়াশোনা নষ্ট করে সেখানে স্ট্রাইক (কর্মবিরতি) করে দিনের পর দিন কর্মঘণ্টা নষ্ট করবেন, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ব্যাহত করবেন, তারা বোঝেন। আর বুঝবো না আমরা। এটাতো হয় না। ’

‘অর্থ সরকার দেবে, সব রকম উন্নয়ন প্রকল্প সরকার করবে, সেটা নিতে খুব ভালো লাগবে, আর সরকার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না, এটা কখনো হতে পারে না। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কথায় বলে স্বাধীনতা ভালো, তবে তা বালকের জন্য নহে। এটাও মাথায় রাখতে হবে। কাজেই আমি মনে করবো, এ ধরনের বালকসুলভ কথাবার্তা না বলাই ভালো। বরং ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করবে, শিক্ষার সময় যেন নষ্ট না হয়, উপযুক্ত সময়ে তারা ভালো রেজাল্ট করবে এবং তারা জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে সেটাই আমরা চাই। ’

আরও পড়ুন...
** শ্রমিক লীগকে শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান​
** দোয়া করবেন ঝড়ে যেন ক্ষয়ক্ষতি না হয়: প্রধানমন্ত্রী

‘আমরা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ছিলাম, পড়াশোনা করেই এসেছি, এটাও তাদের ভুলে গেলে চলবে না। এটাও বললাম, কারণ কিছু কিছু বেশ পাকা পাকা কথা শুনি, সেজন্য এ কথা বলতে বাধ্য হই। ’

’৭৫ এর পর সামরিক সরকারের সময় এসব ব্যক্তি কেন কোনো সমালোচনা করেননি প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যারা কথা বলেন, তাদের মিলিটারি ডিকটেটরদের (সামরিক স্বৈরশাসক) বিরুদ্ধে কথা বলতে শুনিনি, বরং তাদের পদলেহন করতে দেখেছি। ’

ছাত্রদের উসকানি এবং মুখরোচক কথা মেনে নেওয়া হবে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘উসকানি দিয়ে ছাত্রদের বিপথে নেওয়া আর এখানে মুখরোচক কথা বলা, এটা কখনো কেউ মেনে নিতে পারে না। আর তা যদি করতে হয় তাহলে নিজেদের অর্থ নিজেরা যোগান। নিজেদের বেতন নিজেদের ব্যবস্থা করতে হবে। ’

‘নিজেদের খরচ নিজেরা চালাবে, সরকার সব টাকা বন্ধ করে দেবে। কারণ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা পাবলিক দেবে। সরকার কেন খরচ করবে? সেটাও তাদের চিন্তা করতে হবে। কোনটা করবেন?’

কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইদানীং আমরা দেখছি, কোনো কথা নেই বার্তা নেই আমরা ব্যবস্থা নিলেও কয়েকজন মিলে অহেতুক অভিযোগ করে- সেটা সত্য অভিযোগ, না মিথ্যা অভিযোগ তার চিন্তা না করেই। ’

‘আমাদের দেশের আইনে আছে। আইন আছে কেউ যদি কারও বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা অভিযোগ আনে, আর সেটা যদি প্রমাণিত না হয়, তবে সেই অভিযোগকারীর ওই আইনে তার বিচার হয় সাজা হয়। এটা কিন্তু আইনে আছে। যারা কথা বলছেন তারা আইনগুলো ভালোভাবে দেখে নেবেন। ’

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকারের অর্থায়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা পায়, পৃথিবীর কোনো দেশে এত অল্প খরচে কিন্তু শিক্ষা দেওয়া হয় না। ’

তিনি বলেন, ‘সেখানে (বিশ্ববিদ্যালয) স্বায়ত্তশাসন আছে এ কথা সত্য। কিন্তু টাকা দিচ্ছে কারা? টাকাতো সরকার দিচ্ছে। সরকারের দেওয়া টাকা, ইউজিসিতে যায়, সেখান থেকে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয়। সেখানে সমস্ত শিক্ষকের বেতন, ভাতা, যা কিছু তারা পাচ্ছেন। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে কয় টাকা খরচ করে? মাসে বড় জোর দেড়শ’ টাকা খরচা করে। কিন্তু এই টাকায় কি উচ্চশিক্ষা হয়? যদি প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, কত লাখ টাকা লাগে প্রতি সেমিস্টারে আর আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কত লাগে? সে টাকার কে যোগান দেয়? যোগান দেয় সরকার। ’

‘যেহেতু সরকার এই টাকা দিচ্ছে। প্রায় দুই লাখ, আড়াই লাখ টাকা খরচ হয় একটা শিক্ষার্থীর পেছনে। আর ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল বা কারিগরিতে তো আরও বেশি টাকা খরচ হয়। সব টাকা তো সরকারের পক্ষ থেকে যাচ্ছে। সেখানে ডিসিপ্লিন থাকবে, উপযুক্ত শিক্ষা পাবে এবং নিজেদের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে সেটাই আমরা চাই। ’

এর আগে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

সম্মেলন উপলক্ষে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী এবং শ্রমিক লীগের দলীয় পতাকা উত্তেলন করেন সংগঠনটির সভাপতি শুকুর মাহমুদ।

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

কয়েকটি দেশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথি এবং শ্রমিক নেতারাও সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

বিকেলে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হবে।

১৯৬৯ সালের ১২ অক্টোবর দেশের সর্ববৃহৎ শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৯
এমইউএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।