ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

রাজশাহী আ’লীগে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা সহস্রাধিক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৯
রাজশাহী আ’লীগে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা সহস্রাধিক

রাজশাহী: জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নড়েচড়ে বসেছে আওয়ামী লীগ। দলের প্রকৃত ও ত্যাগী নেতারা প্রাধান্য পেতে শুরু করেছেন কেন্দ্র থেকে শুরু করে সব বিভাগ ও জেলাতেই। তাদের মূল্যায়নের জন্য এরই মধ্যে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা হচ্ছে। 

সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা যেন কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের পরিচালনা কমিটিতে স্থান না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এজন্য বিভাগভিত্তিক তালিকা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র বলছে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও নিজস্ব টিমের তত্ত্বাবধানে দলে অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতদের তালিকা প্রস্তুত করেছেন খোদ দলীয় সভাপতি (প্রধানমন্ত্রী)। তালিকা তৈরি করতে দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস থেকে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমে এসব তালিকা সংশ্লিষ্ট এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।  

বিভাগ ও জেলার স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শাখা ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীলদের ওই তালিকায় থাকা অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিদের বিষয়ে সতর্ক করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সূত্র বলছে, রাজশাহী বিভাগে মোট এক হাজার ২০৫ জন অনুপ্রবেশকারীর তালিকা করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ৯ জন, মহানগরে ২৭ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১২১ জন, নওগাঁয় ৫৯ জন, নাটোরে ১০৪ জন, বগুড়ায় ১২৬ জন, সিরাজগঞ্জে ১১ জন, পাবনায় ৫৯ জন ও জয়পুরহাট জেলায় ৭৪৮ জন রয়েছেন।  

এর মধ্যে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগে রয়েছেন বর্তমান রাসিকের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রহুল আমিন টুনু। তিনি চার নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এখন তিনি আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে আছেন।

আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে আছেন নগর বিএনপির সাবেক সদস্য হাবিবুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান, তিন নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ঈলাশ, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি তরিকুল আলম পল্টু, বিএনপির সমর্থক মহানগরীর কেশবপুরের রাকিব, একই এলাকার পারভেজ, মোশাররফ, হাসিবুল, জুয়েল, নাসিম, সোহেল, আনারুল, মতিন, মজনু, শিপন, লিটন, আবু হেনা মোস্তাফা কামাল, আব্দুস সোবহান, বদরুদোজ্জা বদর, শাজাহান আলী, অ্যাডভোকেট মো. শাহিন রেজা, অ্যাডভোকেট বাহাদুর আলী।

এছাড়া বর্তমান ১৭ নম্বর ওয়ার্ড (পূর্ব) আওয়ামী লীগের সক্রিয়কর্মী লিটন ইসলাম ছিলেন শাহ মখদুম থানার শিবিরের সাবেক সক্রিয় কর্মী, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহীন সর্দার ছিলেন জামায়াতের সক্রিয় কর্মী, ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের জালাল উদ্দিন ছিলেন জামায়াতের সাবেক সক্রিয়কর্মী এবং আওয়ামী লীগের শহিদুল ইসলাম ছিলেন সাবেক জামায়াতকর্মী।

এদিকে, রাজশাহী জেলায় নয় জনের মধ্যে রয়েছেন পুঠিয়ার কাঠালবাড়ীয়া গ্রামের আতিকুর রহমান। তিনি পুঠিয়া পৌর শাখার ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে যুবলীগের কর্মী।

আছেন একই গ্রামের আওয়ামী লীগকর্মী আলী হোসেন, তিনি পুঠিয়া পৌর বিএনপির সভাপতি ছিলেন; ওই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা লতিফ বিশ্বাস, তিনি পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন; মাহাবুবুর রহমান মুক্তা, তিনি পুঠিয়া ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার যাত্রাগাছী এলাকার আবুল হাসান নুরুল ইসলাম মোল্লা বর্তমানে আওয়ামী লীগ সমর্থক হলেও তিনি উপজেলা জামায়াতের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

একই উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রামের আলতাফ হেসেন ছিলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থক। ভবানীগঞ্জের শহিদুল ইসলাম বাচ্চু পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক বর্তমানে পৌর কৃষকলীগের সভাপতি পদে রয়েছেন। উপজেলার নিমপাড়া গ্রামের ইসমাইল হোসেন এখন আওয়ামী লীগ কর্মী হলেও তিনি মারিয়া ১০ নম্বর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি।

বাগমারার বেলসিংহ এলাকার আলতাব হোসেন মোল্লা অতীতে উপজেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি থাকলেও বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক পদে রয়েছেন।

অনুপ্রবেশকারীদের তালিকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বাংলানিউজকে জানান, পত্রপত্রিকায় যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেটাই। তারা এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড থেকে তালিকা পাননি। কেবল দলীয় কাউন্সিল নিয়ে চিঠি পেয়েছেন।

ওই চিঠিতে গঠনতন্ত্রের আলোকে সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশনা রয়েছে। জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিতে যেন কোনোভাবেই অনুপ্রবেশকারীরা আসতে না পারেন, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া দলের মধ্যে থাকা বিতর্কিতদের ব্যাপারেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সম্মেলন আয়োজনের ব্যাপারে একই নির্দেশনা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারও।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে আসেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম।

ওই দিন দুপুরে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে ‘তারুণ্যের ভাবনায় আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের জন্য বদনাম হচ্ছে। তাই আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের ঝেটিয়ে বিদায় করা হবে।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম বলেন, দেশ ও দলের প্রয়োজনে একটা সময় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা হচ্ছিল। এই সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দল থেকে অনেকেই আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু অনুপ্রবেশকারীদের আওয়ামী লীগে কোনো স্থান নেই। আওয়ামী লীগ সব সময় পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করে। আওয়ামী লীগ কাউকে আক্রমণ করেনি, আক্রান্ত হয়েছে। সব সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

এই চেষ্টা যেমন আগামীতেও অব্যাহত থাকবে, তেমনি এখন মাদক, অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে সেটাও চলবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৯
এসএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।