ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে শতভাগ আশাবাদী খোকার ছেলে ইশরাক

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯
মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে শতভাগ আশাবাদী খোকার ছেলে ইশরাক প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বিএনপির নেতা সাদেক হোসেন খোকা ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে অভিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাজনৈতিক হাওয়া বদলের মধ্যে  ক্যান্সারে আক্রান্ত খোকা চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার একমাত্র ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। 

বিগত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার বাবার আসন ঢাকা-৬-এ বিএনপির প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন ইশরাক। কিন্তু পরে ‘জোটের ঐক্যের স্বার্থে’ তিনি আসনটি থেকে সরে দাঁড়ান।

তখন থেকেই দলীয় হাকমান্ডের ‘গুডবুকে’ ইশরাকের নাম। সেজন্য আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির মনোয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় সর্বাগ্রে শোনা যাচ্ছে তার নাম।
 
প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন সম্প্রতি নিজের গুলশানের বাসায় তার সম্ভাব্য মনোনয়ন, পিতা সাদেক হোসেন খোকার রাজনীতি, বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন বাংলানিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মহসিন হোসন।
 
বাংলানিউজ: সামনে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন, আপনার বাবা অবিভক্ত ঢাকার মেয়র ছিলেন। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আপনার নাম শোনা যাচ্ছে, আপনি এ বিষয়ে কতটা আশাবাদী?
 
ইশরাক হোসেন: আমি নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। যখনই দল আমাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে এবং সরকার নির্বাচনের ঘোষণা দেবে, তখনই মাঠে নেমে পড়বো।
 
বাংলানিউজ: শোনা যাচ্ছে, বিএনপির হাইকমান্ড থেকে আপনাকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে। আপনি কি মাঠে কাজ করছেন?
 
ইশরাক হোসেন: আমাকে হাইকমান্ড থেকে আরও আগেই প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিএনপির মত বৃহৎ দলে তো অনেক যোগ্য প্রার্থী আছেন। নিশ্চয়ই আমার মত অনেকে প্রস্তুত আছেন। আমিও আছি।
 
বাংলানিউজ: ঢাকার আদি বাসিন্দা ও সাবেক মেয়রের ছেলে হিসেবে আপনি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী।
 
ইশরাক হোসেন: আমিতো শতভাগ আশাবাদী যে আমাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। বাকিটা বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।

বাংলানিউজ: ঢাকা দক্ষিণের মেয়র নির্বাচিত হলে জনগণের জন্য কী করার পরিকল্পনা আছে?
 
ইশরাক হোসেন: আপনার প্রশ্নের জবাব অনেক দীর্ঘ, এটা আমি নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরবো। তারপরও সংক্ষেপে বলতে চাই, আমাদের মৌলিক কয়েকটা সমস্যা রয়েছে। আমরা প্রতিদিনই বিভিন্ন  সমস্যা মোকাবিলা করছি। এরমধ্যে যানজট অন্যতম। এছাড়া মশার সমস্যা আছে। ঢাকা বসবাসযোগ্য নগরীর দিক থেকে সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে। সেগুলো নির্ধারণে কতগুলো প্যারামিটার রয়েছে, সেগুলো ধরে আমি কাজ করতে চাই। যেন আমরা অ-বসবাসযোগ্য থেকে সবচেয়ে বসবাসযোগ্য নগরী হতে পারি। মূল বিষয়টা হলো নগরবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা। সেটা শুধু একটা গোষ্ঠী বা একটা এলাকার কিছু ব্যক্তির জন্য নয়। সর্বোপরি সমগ্র নগরবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নই হবে আমার লক্ষ্য।
 
বাংলানিউজ: আপনার শিক্ষা জীবন নিয়ে কিছু বলুন।

ইশরাক হোসেন: আমি প্রথমে বছরখানেক গোপীবাগের ফুলকুড়ি নার্সারি স্কুলে প্লে গ্রুপে পড়েছিলাম। পরে নার্সারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ঢাকায় স্কলাস্টিকা স্কুলে পড়াশোনা করেছি। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ারে (যুক্তরাজ্য) চলে যাই। সেখানে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আন্ডার গ্র্যাজুয়েশন ও মাস্টার্স শেষ করে ২০১১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসি।
 
বাংলানিউজ: আপনার বাবা সাদেক হোসেন খোকা দীর্ঘদিন ঢাকার মেয়র ছিলেন। তার সময়ে ঢাকায় কী কী উন্নয়ন হয়েছিল?
 
ইশরাক হোসেন: আমি জানি তার সময়ে ঢাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়েছে। তার সময়েই প্রথম (পিপিপি) পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে ঢাকার সবচেয়ে দীর্ঘ ফ্লাইওভার প্রকল্প নেওয়া হয়। যেটি গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার নাম ছিল। এখন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার নাম দেওয়া হয়েছে। এটা আমার বাবার উদ্যোগে তার সময়েই অধিকাংশ কাজ করা হয়েছিল। বাবা ২০০২ সালে মেয়র হয়েছিলেন এবং বিএনপির মেয়াদ শেষ হয়েছিল ২০০৬ সালে। অর্থাৎ মেয়র হিসেবে সরকারি দলে থেকে উনি খুব বেশি সময় পাননি। তারপরও যেটুকু সময় পেয়েছিলেন সেসময়ও অনেক বিস্ময়কর কাজ করেছেন। বর্তমান সরকার যেভাবেই ক্ষমতায় এসেছে একটা কন্টিনিউয়েশন পেয়েছে। এই সরকার ঢাকার যেসব বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এর বেশির ভাগই ২০০১-০২ সালে প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছিল। কারণ একটা বড় প্রজেক্ট করতে হলে অনেক আগে থেকেই প্লানিং-সার্ভে ইত্যাদি দরকার হয়। ওই সময় আবদুল মান্নান ভূইয়া সাহেব এলজিআরডি মন্ত্রী ছিলেন, তখন অনেকগুলো ফ্লাইওভার, হাতিরঝিল প্রজেক্ট যেটা পরে সেনাবাহিনী বাস্তবায়ন করেছে। সবতো আমাদের সময়েই লে-আউট দাঁড় করানো হয়েছিল। ডিটেইলড এরিয়া প্লান যেটার ভিত্তিতে আজকের ঢাকা শহরের আয়তন বাড়ানো হয়েছে। পরবর্তীতে এই সরকার নাম পরিবর্তন করে নিউ ডিটেইলড এরিয়া প্লান নাম দিয়েছে। ওই কমিটির চেয়ারম্যানও আমার বাবা মেয়র পদাধিকার বলে ছিলেন। আমি বলবো সেই সময়ের খালেদা জিয়ার সরকার যতটুকু সময় পেয়েছে ঢাকার জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য অনেকগুলো কাজ করে গেছে।
 
বাংলানিউজ: সাদেক হোসেন খোকা এখন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন, তার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে কেমন?

ইশরাক হোসেন: ওনার রোগটা ধরা পড়ে ২০১২ সালে। তখন উনি সিঙ্গাপুরে যান। চিকিৎসকরা তার বাম সাইডের কিডনিটা অপসারণ করে ফেলেন। সেখানেই মূলত ক্যান্সার ধরা পড়ে। ২০১৪ পর্যন্ত ৬ মাস পরপর সিঙ্গাপুরে গিয়ে চেকআপ করাতেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে উনি গ্রেফতার হয়ে যান। তিন-চার মাস কারাগারে থাকার পর বের হয়ে চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুরে যান। সেখানে স্টেজ ফোর ক্যান্সার ধরা পড়ে। তখনই উনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। চিকিৎসকরা বলে দেন যে এই রোগটা আর কোনোদিনই পুরোপুরি ভালো হবে না। ওনাকে কনটিনিউয়াস ট্রিটমেন্টের মধ্যেই থাকতে হবে। ক্যান্সারের ধরনটাই হলো ধীরে ধীরে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এখন সেটাকে রোধ করে রাখার চিকিৎসাই চলছে।
 
বাংলানিউজ: তিনি দেশে ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা কি আছে?
 
ইশরাক হোসেন: উনি দেশে আসার সম্ভাবনা তখনই হবে যখন দেশে সুশাসন আসবে। গণতন্ত্র ফিরে আসবে। যখন তিনি তার ইচ্ছামতো আসতে বা চিকিৎসার জন্য ফেরত যেতে পারবেন।
 
বাংলানিউজ: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেড় বছর কারাগারে। বলা হচ্ছে, তাকে মুক্ত করার জন্য বিএনপি কোনো কিছু করতে পারছে না। আবার বিএনপির নেতারা বলছেন, আইনি লড়াইয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না। এটা নিয়ে আপনার বলার কিছু আছে?
 
ইশরাক হোসেন: এ বিষয়ে দুই রকমের ব্যাখ্যা আছে। আমরাতো অবশ্যই আন্দোলন গড়ে তুলতে পারিনি। তা না হলে তিনি কেন এখনো জেলে আছেন। আবার আন্দোলন না করারও ব্যাখ্যা আছে। যেটা আমাদের সিনিয়র নেতারা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বর্তমান সরকার এতটাই ফ্যাসিস্ট যে, বাবার মুখেও শুনেছি- ওনারা পাকিস্তান আমলের ইয়াহিয়া সরকারের চেয়েও এই সরকারকে ভয়াবহ মনে করেন। মিডিয়াকে যেভাবে চেপে ধরা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। একজন প্রধান বিচারপতিকে পদে থাকা অবস্থায় ন্যক্কারজনকভাবে অপসারণ করা হয়েছে। এগুলোতো অতীতে দেখিনি। এসব কারণেই আমরা আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা যদি সফল হতাম তাহলে নেত্রীতো বাইরে থাকতেন।
 
বাংলানিউজ: দলীয় নেতারা বলছেন আন্দোলন করার জন্য সংগঠন গোছানো হচ্ছে। আপনি কি মনে করেন শিগগির নেত্রীর মুক্তির জন্য দল কোনো আন্দোলনে যাওয়ার মতো অবস্থা করতে পারবে?
 
ইশরাক হোসেন: আসলে দিনক্ষণ ঠিক করে তো আন্দোলন হয় না। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখতে পারবেন অনেক বড়, অনেক শক্তিশালী রাজা-বাদশাহদেরও মসনদ তিন দিনের মাথায় পতন হয়ে গেছে।  এটা বলে-কয়ে হয় না। আমরা যদি বাংলাদেশের ইতিহাস দেখি, ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনাটা কিন্তু তিন-চারদিন আগেও কেউ জানতো না কী হচ্ছে। কিন্তু ঘটনাটা ঘটে গেছে। আজকে যে অবস্থা বিরাজ করছে, কখন জনগণ ফুঁসে উঠবে, কখন এদের পতন হবে, সেটা দিনক্ষণ ঠিক করে বলা যায় না। তবে আর একটা ব্যাখ্যা দিতে চাই যে, আন্দোলনে তো আমরা আছি। আন্দোলন মানে এই নয় যে রাস্তায় নেমে ভাঙচুর করা, গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া। আমি বলছি না আমরা অতীতে সেটা করেছি। কিন্তু আমাদের আন্দোলনের সময় অনেকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে থাকতে পারে। আমরা এই যে কথা বলছি, ঘরের ভেতরে বসে প্রতিবাদ করছি, এটাও আন্দোলনের অংশ।
  
বাংলানিউজ: সম্প্রতি ছাত্রদলের কাউন্সিলের মাধ্যমে দু’জন নেতা নির্বাচিত হয়েছেন, এ বিষয়ে কিছু বলবেন?

ইশরাক হোসেন: সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমরা কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটিগুলো দিতে পারছি এটা আমাদের একটা সফলতা। কাউন্সিলের এক বা দু’দিন আগে আদালতের একটা নির্দেশনা আসে। যেটা আমরা মনে করছি সরকারের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ রয়েছে। তারপরও তারা আটকাতে পারেনি। এখানে আমরা একটা দল কাউন্সিল করবো, সেখানে তো আদালতের কোনো বিষয় আসতে পারে না। তারপরও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নির্দেশনায় সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আর যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা ভালো নাকি খারাপ করবেন, সেটা তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে। মূল বিষয় হলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকুক এবং অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনগুলোও এভাবে হবে বলে আমি কামনা করি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯
এমএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।