ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিএনপি

আ’লীগের নেতাকর্মীদের মুখে আতঙ্কের ছায়া: গয়েশ্বর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৯
আ’লীগের নেতাকর্মীদের মুখে আতঙ্কের ছায়া: গয়েশ্বর

ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মুখে আতঙ্কের ছায়া বিরাজ করছে দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আমরা নিজেদের যতটা দুর্বল ভাবী আমরা আসলে ততটা দুর্বল নই। আর এই সরকারকে যতটা শক্তিশালী মনে করি, ততটা শক্তিশালী তারা নয়। কারণ নৈতিক ভিত্তির ওপর যে সরকার গঠিত হয় না, সে সরকার কখনো শক্তিশালী হয় না।      

শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক আলোচনাসভায় গয়েশ্বর একথা বলেন। ‘খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে’ এ সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম-৭১।

গয়েশ্বর বলেন, (প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনা চান (বিএনপি প্রধান) খালেদা জিয়াকে কারাগারে মৃত্যুর মুখোমুখি করতে। কিন্তু তারপরও খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বের হয়ে আসবেন। তবে খালেদা জিয়া কারাগারে মৃত্যুবরণ করলে শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন।

‘অপকর্মের জবাবতো তাকে (শেখ হাসিনা) একটা না একটা সময় দিতে হবে। গুম-খুনসহ যেসব অপকর্ম তিনি করেছেন তার জবাব দিতে হবে। কী কারণে তিনি কম দিন দেশে থাকেন, বেশি দিন বিদেশে থাকেন, কী তার কর্মকাণ্ড তা দলের লোকেরাসহ আশেপাশের নেতাকর্মীরাও জানে না। এই রহস্য উদঘাটনের জন্য আমার পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য নেই। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মুখের দিকে তাকালে মনে হয় আতঙ্কের ছায়া বিরাজ করছে। সে কারণে বলতে চাই, আমরা নিজেদের যতটা দুর্বল ভাবী আমরা আসলে ততটা দুর্বল নই। আর এই সরকারকে যতটা শক্তিশালী মনে করি, ততটা শক্তিশালীও তারা নয়। কারণ নৈতিক ভিত্তির ওপর যে সরকার গঠিত হয় না, সে সরকার কখনো শক্তিশালী হয় না। ’

তিনি বলেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং সমাজ গড়তে চেয়েছিলাম। স্বাধীন একটা রাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সে স্বপ্ন ভুলুণ্ঠিত হয়েছিল। আমরা যাদের বিশ্বাস করে সেদিন ক্ষমতা দিয়েছিলাম তারা সেই বিশ্বাস রাখতে পারেনি। ইতোপূর্বে তাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা ছিল না, সেটা আমি বলবো না। কিন্তু ১৯৭৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তারা একদলীয় শাসন কায়েম করে গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করলো। সেখান থেকেই তারা ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি হিসেবে জনগণের কাছে দৃশ্যমান।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমানের ডাকে যেমন যুদ্ধ হয়েছিল, তেমনি আরেকটি ডাকের মাধ্যমে তিনি জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেছিলেন। লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র অক্ষুণ্ন রাখা। জিয়াউর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে হত্যার যে চক্রান্ত হয়েছিল, সে চক্রান্ত আমরা শক্ত হাতে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছি। সেদিন যারা ভেবেছিল জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপি থাকবে না। তাদের মুখে চুনকালি পড়েছে। রাজনীতিতে শূন্যতা পূরণ করেছেন আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। তার বিরামহীন নেতৃত্ব ও রাজপথে পথচলা, ২০ বছর পথে-প্রান্তরে ঘুরে স্বৈরাচারের হাত থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করে তিনি আপসহীন নেত্রী হিসেবে জনগণের কাছে অভিষিক্ত হন।
 
‘খালেদা জিয়ার অপর নাম গণতন্ত্র, এটা আমি বলি না, সাধারণ মানুষ বলে। গণতন্ত্রের সংগ্রামে যার অগ্রণী ভূমিকা সেই খালেদা জিয়ার মুক্তি আদালতে হবে, এটা বিশ্বাস করতে আমার কষ্ট হয়। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর বিচার আদালত করে না। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর বিচার হয় জনগণের আদালতে। মানুষের দিকে তাকালে বুঝতে পারি, জনগণের আদালতে খালেদা জিয়া এখনো দোষী সাব্যস্ত হননি। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে স্তব্ধ করার চক্রান্তের বলি হয়ে আজকে খালেদা জিয়া জেলখানায়। খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আদালত কর্তৃক হওয়ার আগেই সরকার করে নিয়েছে। ৩০ তারিখের ভোট ২৯ তারিখে করার চক্রান্ত বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যেই তাকে জেলে নেওয়া হয়েছে। এটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। এটা আমাদের বুঝতে অসুবিধা হলেও সাধারণ মানুষের বুঝতে কষ্ট হয়নি। খালেদা জিয়াকে নিশ্চিহ্ন করা মানে গণতন্ত্র মুছে ফেলা, খালেদা জিয়াকে স্তব্ধ করা মানে জাতীয়তাবাদী শক্তির চেতনাবোধকে চিরতরে ধ্বংস করার একটি চক্রান্ত। এই চক্রান্তের বেড়াজালে ঘরে-বাইরে কে কোথায় কোন রোল প্লে করছে সেগুলো আমাদের বুঝতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক থাকতে হবে। ’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের বিষয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যের সমালোচনা করে গয়েশ্বর বলেন, রাজনীতির স্বার্থ বিবেচনায় এসেছিলেন (বিএনপির গঠিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে), সেটা হয়নি, তাই আপনি ব্যাক করবেন সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটা বোঝার মতো সক্ষমতা জনগণের আছে।

‘তারেক রহমানকে আপনি নেতা বানাবেন কেন? দেড়যুগ আগেইতো তারেক রহমান বাংলাদেশের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। নেতা হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠিত বলেইতো পত্র-পত্রিকায় তাকে নিয়ে আলোচনা হয়। তার পক্ষে-বিপক্ষে কথা হয়। পক্ষে-বিপক্ষে যিনি আলোচনায় থাকেন, তিনিইতো নেতা। বিএনপির নেতাকর্মীদের তারেক রহমানের ওপর যে আস্থা সেটা আবেগনির্ভর নয়। সেটা বাস্তবতানির্ভর। আর বাস্তবতানির্ভর বলেই ভিনদেশে বসে এতবড় একটা দলকে তিনি নেতৃত্ব দিতে পারছেন। আকার-ইঙ্গিত-ইশারায় কেউ তার নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেনি। বরং তার সান্নিধ্য লাভের জন্য সবাই অপেক্ষায়। সুতরাং আপনাকে তারেক রহমানকে নেতা বানাতে হবে না। নেতা তৈরি হয় জনগণের ইচ্ছার ওপর। জনগণ যার ওপর আস্থা পায় তিনিই নেতা হন। শুধু উপাধি দিয়ে নেতা হয় না। উপাধি একটি অলঙ্কার হিসেবে থাকলেও সে উপাধিতে জনগণের তৃষ্ণা মেটে না। ’

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ঢালী আমিনুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৯
এমএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।