ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

‘যেন কারবালার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো ৩২ নম্বরে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৯
‘যেন কারবালার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো ৩২ নম্বরে’

ঢাকা: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে নিষ্ঠুরতম কলঙ্কজনক হত্যাকাণ্ডের নির্মমতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মনে হলো যেন কারবালার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো ৩২ নম্বরে।

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ (উত্তর ও দক্ষিণ) আয়োজিত আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুকন্যা এসব কথা বলেন।  

শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা যদি একটু চিন্তা করে দেখেন, যেভাবে নারী হত্যা, শিশু হত্যা- ঠিক ’৭১ এ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছিল, ঠিক মনে হলো সেই ঘটনাই।

কারবালার ময়দানের যে ঘটনা- যেন কারবালার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো ৩২ নম্বরে।

ইতিহাসের কালো অধ্যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিদেশে থাকায় ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা।

ওইদিনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কি দুর্ভাগ্য আমাদের, আমাদের দু’টি বোনের। মাত্র ১৫ দিন আগে আমরা বিদেশে চলে যাই। তখন তো ভাবতেও পারিনি, এই রকমভাবে এই বাংলাদেশের মানুষ- এমন একজন মানুষকে হত্যা করলো, যে তাদের পরিচয় দিয়ে গেল, একটা দেশ দিয়ে গেল। ’ 

‘যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশ গড়ে তুলে উন্নয়নের পথে যিনি নিয়ে যাচ্ছিল আর তাকেই হত্যা করলো। যে জাতি ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে বিশ্বব্যাপী বিজয়ী জাতি হিসেবে সম্মান পেয়েছিল, সে জাতি খুনি জাতি হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিত হলো। ’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ১৫ আগস্টে যে শুধুমাত্র একটা পরিবারকে হত্যা, তা নয়। এর মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের ইতিহাস মুছে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে যার অবদান, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে যত আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান তা মুছে দেওয়া হয়েছিল।

‘তখন একটি মাত্র টেলিভিশন ছিল-বিটিভি। সেই বিটিভিতেও একটিবারের জন্য বঙ্গবন্ধুর নামটি আসেনি। একেবারে ইতিহাস থেকেই মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই ১৫ আগস্টের খুনিদের মদদ দিয়েছে। যেভাবে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে খুনিদের দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিল সেভাবে খালেদা জিয়াও পুনর্বাসন করেছেন। এরশাদও খুনিদের মদদ দিয়েছেন, পুরস্কৃত করেছেন।

ঘাতক ও ষড়যন্ত্রকারীদের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ এর এই ঘটনার পর সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হলো আমাদের আওয়ামী লীগের কেবিনেট মন্ত্রী মোশতাক, যে অবৈধভাবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রপতি হয়ে যায়। সে রাষ্ট্রপতি হয়ে যায়, আর লাশ পড়ে থাকে ৩২ নম্বরে।

তিনি বলেন, আরও অবাক লাগে যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল তারা প্রতিনিয়ত আমাদের বাড়িতে আসতো।

‘আরও অবাক লাগে যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল, তারা প্রতিনিয়ত আমাদের বাড়িতে আসতো। এদের ভেতরে এই চক্রান্ত ছিল, এই ষড়যন্ত্র ছিল এটা কখনও তিনি (বঙ্গবন্ধু) স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। আমরাও চিন্তা করতে পারিনি যে, এতবড় বেঈমানি, মোনাফেকি কোনো মানুষ করতে পারে!,’ 

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘অনেক বিশ্বনেতা, অনেক সময় তাকে (বঙ্গবন্ধু)  বলেছেন, তাদের অভিজ্ঞতার অনেক কথা। ফিদেল কাস্ট্রো বলেছিলেন, ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন। একটা কথাই তিনি বলেছিলেন যে, এরা তো আমার সন্তান। আমার দেশের এরা কেন আমাকে মারবে! বিশ্বাস করতে পারেননি। ’

বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে দেশে ফিরে আসতে বাঁধা দেওয়ার কথাও জানান জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা।  

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির শীর্ষ ও মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৯/আপডেট: ২১৩৪ ঘণ্টা
এমইউএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।