ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

সম্মেলন ঘিরে উজ্জীবিত জবি ছাত্রলীগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯
সম্মেলন ঘিরে উজ্জীবিত জবি ছাত্রলীগ .

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ঘোষণা অনুযায়ী চলতি মাসের ২০ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের ইতিহাসে দ্বিতীয় সম্মেলন। আর এ সম্মেলনের মাধ্যমেই ঘোষিত হবে জবি ছাত্রলীগের পরবর্তী কাণ্ডারীদের নাম। তাই সম্মেলন যতোই এগিয়ে আসছে ততোই প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে উঠছে নেতৃত্বহীন জবি ছাত্রলীগ। 

সম্মেলনের মাধ্যমে আসন্ন কমিটিতে স্থান পেতে ও নিজেদের জনপ্রিয়তা ও ক্ষমতা প্রদর্শনে প্রার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রায়ই মিছিল-শোডাউন করছেন। পাশাপাশি তারা ক্যাম্পাসের বাইরে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাদের পেছনে দিন-রাত লবিং-তদবির অব্যাহত রাখছেন।

 

ছাত্রলীগের অন্যতম ‘সুপার ইউনিট’ বলে খ্যাত জবি ছাত্রলীগের আগামী কমিটির শীর্ষ দুই পদে স্থান পেতে প্রকাশ্যে বা আড়ালে কমপক্ষে দেড় ডজন নেতাকর্মী বিভিন্ন মহলে চেষ্টা তদবির অব্যাহত রাখছেন। এর মধ্যে ‘হট ফেভারিট’ তকমা পাওয়া প্রার্থী রয়েছেন বেশ ক’জন। লবিং তদবিরের পাশাপাশি নিজেদের ‘মানবতাবাদী’ হিসেবে পরিচিত করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে এই মূহূর্তে বেশ জমে উঠেছে জবি ছাত্রলীগের রাজনীতির মাঠ।  

জানা যায়, সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন-এর সময়ে শরীফ-সিরাজ কমিটির মাধ্যমে প্রথম সম্মেলন আয়োজন করে জবি ছাত্রলীগ। কিন্তু সম্মেলন শেষেও দীর্ঘদিন অবিভাবকশূন্য হয়ে থাকার পর নেতৃত্বে আসে তরিকুল ইসলাম তূর্য ও শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল কমিটি।  

তবে কমিটি গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত হতে থাকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ঘোষিত ৩৯ সদস্যের এই কমিটি। এর মধ্যে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ক্যাম্পাসে বারবার সংঘর্ষে জড়ানো, জুনিয়র কর্মীদের বিশৃঙ্খলা, ভর্তিচ্ছু নারী শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ কর্মীর ইভটিজিং, কমিটি গঠনের এক বছরের বেশি সময়েও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারা, নগরভবনে টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে এ কমিটির বিরুদ্ধে।  

ইতোমধ্যে নগর ভবনে টেন্ডার নিয়ে আলিয়া মাদ্রাসার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রথম দফায় কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি পুনরায় কমিটি স্থগিত করে তদন্ত কমিটি গঠন করে শোভন-রাব্বানীর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯ ফেব্রুয়ারি কমিটি বিলুপ্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এরপর প্রায় ৫ মাস ছাত্রলীগের অন্যতম এই সুপার ইউনিটের তেমন কোনো গোছানো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। তবে অঞ্চলভিত্তিক রাজনীতির নামে নিজেদের গুছিয়ে রাখতে সমর্থ হয় দুয়েকটি গ্রুপ। এ সময়ে বেশির ভাগ গ্রুপ ক্যাম্পাস সামলানোর দায়িত্ব জুনিয়র কর্মীদের কাছে দিয়ে নিজেরা বিভিন্ন স্থানে নিজেদের লবিং সৃষ্টির চেষ্টা চালান এবং প্রায় পুরোটা সময়ই ক্যাম্পাসের বাইরে সময় দেন।  

সর্বশেষ ৬ জুলাই আশরাফুল ইসলাম টিটনকে আহ্বায়ক করে সম্মেলন আয়োজক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরই মধ্যে ক্যাম্পাসের বিজ্ঞান অনুষদ মাঠে তৈরি হচ্ছে সম্মেলনের প্যান্ডেল। পুরো ক্যাম্পাসে পদপ্রার্থীদের ব্যানার ফেস্টুন দ্বারা নিজেদের সাবেক পরিচয় তুলে ধরে সম্মেলনে আগত নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। ধারণা করা হচ্ছে, এ সম্মেলনের দিন কমিটি ঘোষণা না করে কিছুদিন পর নতুন নেতৃত্বের ভার দেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।  

আসন্ন কমিটিতে স্থান পেতে যারা বিভিন্ন মহলে লবিং-তদবির চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে সভাপতি পদে টাঙ্গাইলের সৈয়দ শাকিল, ময়মনসিংহ তথা নেত্রকোণার আল-আমিন শেখ, ফেনীর মো. নাজমুল আলম, কক্সবাজার অঞ্চলের হোসনে মোবারক রিসাত, মাদারীপুরের আসাদুজ্জামান আসাদ ছাড়াও আরও অর্ধডজন নেতাকর্মী বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।  

এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে ফেভারিটের তালিকায় আছেন, বরিশাল অঞ্চলের ইব্রাহিম ফারাজী, ফরিদপুর অঞ্চলের আশরাফুল ইসলাম টিটন, ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চলের তারেক আজিজ, জামালপুর অঞ্চলের নাহিদ পারভেজ, সিলেট অঞ্চলের নুরুল আফসার, শরীয়তপুরের শাহবাজ হোসেন বর্ষণ। এছাড়াও সভাপতি বা সম্পাদক যেকোন একটি পদ পেতে মরিয়া হয়ে ছুটছেন সাবেক কমিটির সহ-সম্পাদক আনোয়ার সজীবসহ ১০-১২ জন নেতা।  

এ বিষয়ে সম্মেলন আয়োজক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ইব্রাহিম ফরাজি বাংলানিউজকে বলেন, একটি সুষ্ঠু সুন্দর সম্মেলন উপহার দিতে আমাদের আয়োজক কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা আমন্ত্রিত অতিথিদের কার্ড দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। প্যান্ডেলের কাজও গ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। সব মিলিয়ে আশা করছি কেন্দ্র থেকে অর্পিত দায়িত্ব আমরা সুন্দরভাবে পালন করতে পারবো।  

জবি ছাত্রলীগের আসন্ন সম্মেলন ও কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, জবিকে আমরা একটি মানবিক ছাত্রলীগ উপহার দিতে চাই। সে লক্ষ্যেই সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে।  

নতুন নেতৃত্বে জবি ছাত্রলীগ জাতির পিতার আদর্শে বলীয়ান হয়ে কাজ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই নেতা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯
কেডি/এমকেআর/আরআইএস/  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।