ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

এরশাদের অনুসরণে চলবে জাপা, আশাবাদ নেতাকর্মীদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
এরশাদের অনুসরণে চলবে জাপা, আশাবাদ নেতাকর্মীদের

ঢাকা: জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই তার দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়ে যায়। একেবারে শয্যাশায়ী হওয়ার আগে বিষয়টি যেন আঁচ করতে পেরে এরশাদও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে একজনকে দায়িত্ব দেন। তার জীবনাবসানের পর জোরেশোরেই উঠেছে নেতৃত্বের আলোচনা, ‘কে হচ্ছেন চেয়ারম্যান?’ এই প্রশ্নের উত্তর জাপার নেতাকর্মীরা বলছেন, এরশাদ যাকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, তার নেতৃত্বেই চলবে দল। কেউ কেউ বলছেন, নেতৃত্বে যিনিই আসুন, দল চলবে এরশাদের দেখানো পথেই।

জাপায় এখন সবচেয়ে মান্য দুই নেতা হলেন এরশাদের ভাই ও তারই ঘোষিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এবং স্ত্রী ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। নেতাকর্মীদের আশাবাদ, রওশনের সহযোগিতায় জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি আরও সংহত হয়ে সরকার গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।

গত রোববার (১৪ জুলাই) ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় এরশাদ মৃত্যুবরণ করার পর দুই নামাজে জানাজা শেষে সোমবার (১৫ জুলাই) সকাল ১১টার পর কাকরাইলের দলীয় কার্যালয়ে নেওয়া হয় তার মরদেহ। সেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান দলের নেতাকর্মীরা।

কার্যালয়ের সামনে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব প্রসঙ্গে আলাপকালে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের একাধিক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, চেয়ারম্যান প্রায় ৩২ বছর ধরে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে একটি অবস্থানে রেখে গেছেন। তার অনুপস্থিতিতে দল ভাঙা নয়, বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।
 
জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় চলে গেছে গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এফ এম সাইফুল ইসলামের। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে অনেক চড়াই-উতরাই পার করে আজকে এখানে এসেছে। স্যার (এরশাদ) দলকে একটি অবস্থানে রেখে গেছেন। স্যারের আদর্শ নিয়ে দল সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। তিনি ঠিক করে দিয়ে গেছেন কার নেতৃত্বে দল চলবে। তাই দল আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। দলের মধ্যে কোনো বিভাজন নেই। রওশন এরশাদের সহযোগিতায় জিএম কাদেরের নেতৃত্বে দল এগিয়ে যাবে। ’
 
এরশাদের কফিন বহন করে নিয়ে যাওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তার এক সমর্থক।  ছবি: জিএম মুজিবুরএরশাদের অবর্তমানে জাতীয় পার্টিকে কঠিন সময় ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে রাজনৈতিক মহলে যে শঙ্কা, সেটিকে উড়িয়ে দিয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘স্যার দেশকে অনেক দিয়েছেন। তার আদর্শকে বুকে ধারণ করেই আমরা এগিয়ে যাবো। জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। তবে কোনো গ্রুপিং নেই। স্যার নিজেই ঠিক করেছেন সবকিছু। তাই আগামীতে কোনো অপশক্তি এখানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। ’
 
এরশাদ যেভাবে জাপাকে সংগঠিত করে সামনে এগিয়ে নিয়েছেন সেটা অন্য কারও পক্ষে সহজ হবে কি-না, এমন প্রশ্নের উত্তরে বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম-আহবায়ক ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, ‘চেয়ারম্যানের পথ ধরেই আমরা এগিয়ে যাবো। তিনি নেতৃত্ব ঠিক করে দিয়ে গেছেন। তার অবর্তমানে তার আদর্শকে নিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো। আর কোনো বাধা এলেও আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করবো। ’
 
এরশাদ তার ভাই জিএম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে গেছেন, তার নেতৃত্বেই জাপা এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। তিনি বলেন, ‘তার দেখানো পথেই দল এগিয়ে যাবে। এখানে গ্রুপিংয়ের কোনো অবকাশ নেই। আর জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের একই সূত্রে গাঁথা।
 
জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান কে হবেন, জানতে চাইলে সম্প্রতি দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘স্যার (এরশাদ) তো জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছেন। আগামী কাউন্সিলে যদি একাধিক প্রার্থীর নাম প্রস্তাব আসে, তাহলে তখন পরিস্থিতিই বলে দেবে, কে হবেন পার্টির চেয়ারম্যান। ’

২০১৬ সালের ১৪ মে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় পার্টির (জাপা) সবশেষ কাউন্সিল। ওই সম্মেলনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। তখন মহাসচিব হয়েছিলেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। তবে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে রুহুল আমিন হাওলাদারকে ওই পদ থেকে সরিয়ে রাঙ্গাকে দায়িত্ব দেন এরশাদ।

এরপর দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বভার দেওয়ার ক্ষেত্রে একাধিকবার সিদ্ধান্ত বদলের পর সবশেষ ৪ মে রাতে বারিধারায় নিজের বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে জিএম কাদেরকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন এরশাদ।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
এসএমএকে/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।