ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

শেষ মামলার রায় দেখে যেতে পারলেন না এরশাদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৯
শেষ মামলার রায় দেখে যেতে পারলেন না এরশাদ সদ্য প্রয়াত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ফাইল ছবি

ঢাকা: সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার শেষ মামলার রায় দেখে যেতে পারলেন না। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভোগার পর সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (১৪ জুলাই) সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

গত তিন দশকে সাবেক এ রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে হওয়া প্রায় সব মামলার দায় থেকে মুক্তি পেলেও বহুল আলোচিত মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলার (অমীমাংসিত শেষ মামলা) তদন্ত চলমান। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হত্যা মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য ২৬ আগস্ট প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ধার্য করে দিয়েছিলেন আদালত।

তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই মৃত্যু হওয়ায় এ মামলার রায় দেখে যাওয়া হলো না এরশাদের।

জানা যায়, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার কুতুবুর রহমান গত ২৭ জুন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিলেন আদালতে। ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শরীফ এ এম রেজা জাকের তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ আগস্ট দিন ধার্য করেছিলেন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যেহেতু মারা গেছেন, তাই মৃত্যুসনদ নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা তাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করবেন আদালতে। পরে আদালত তা মঞ্জুর করলে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি মামলাটি থেকে মুক্তি পাবেন।

এর আগে আলোচিত এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ।

২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারিতে রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। রায় ঘোষণার আগে সে সময় বিচারক হোসনে আরা আকতারকে বদলি করা হয়। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন।

এ মামলার আসামিরা হলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, মেজর (অব.) কাজী এমদাদুল হক ও লে. কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া। আর হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত আছে মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল লতিফ ও লে. কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শামসের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সেনা অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। তখন চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ২৪তম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার স্টাফ (জিওসি) ছিলেন মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর। এ ঘটনায় তিনি পুলিশের হাতে আটক হন। আটকের পর পুলিশ তাকে হেফাজতে রাখে। ওই বছরের ২ জুন পুলিশ হেফাজত থেকে এ সেনা কর্মকর্তাকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জেনারেল মঞ্জুরের বড় ভাই ব্যারিস্টার আবুল মনসুর আহমেদ বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় এ হত্যা মামলাটি করেছিলেন।

ওই বছরের ২৭ জুন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সে সময়ের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ আদালতে অভিযোগপত্র দেন। এতে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছিল। পরে এ মামলার অধিকতর তদন্তও করেন আবদুল কাহার আকন্দ। সম্প্রতি এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়।

এদিকে ১৯৯৫ সালের ১১ জুন কারাগারে থাকা এরশাদকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল। তবে বর্তমানে এরশাদসহ আসামিরা সবাই জামিনে রয়েছেন।

২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার দিন ছিল। কিন্তু রায় ঘোষণার আগে বিচারক হোসনে আরা আকতারকে বদলি করা হয়েছিল। পরে মামলাটির বিচারের দায়িত্ব পান দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা জজ হাসান মাহমুদ ফিরোজ।

হাসান মাহমুদ ফিরোজের আগে গত ১৯ বছরে বিভিন্ন সময়ে ২৩ জন এ মামলার বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শেষ বিচারক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন প্রদীপ কুমার রায়। সম্প্রতি তাকেও বদলি করা হয়েছে।

মঞ্জুর হত্যা মামলায় মোট ৪৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পর ২০১২ সালের ২ অক্টোবর আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন এরশাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৯
এমএআর/এইচএডি
আরও পড়ুন>>
** এজন্মে আর দেখা হলো না: বিদিশা
** যেভাবে পতন হয় এরশাদের
** এরশাদের উত্থান-পতন
** গণআন্দোলনে পতন হলেও ‍‘গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে ওঠেন এরশাদ
** এরশাদের ‘বর্ণিল’ জীবন
** হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা গেছেন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।