ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

ছাত্র মৈত্রীর ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী মঙ্গলবার

আনোয়ারুল করিম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১১
ছাত্র মৈত্রীর ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী মঙ্গলবার

ঢাকা: শিক্ষা-কর্মের সংগ্রাম ও সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ের প্রগতিশীল যোদ্ধা ছাত্রসংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী’র ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ৬ ডিসেম্বর। ১৯৮০ সালের এ দিনে বহুধাবিভক্ত প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের চারটি সংগঠনের ঐতিহাসিক ঐক্যের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রতিষ্ঠালাভ করে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী।



মেহনতী জনতার সঙ্গে একাত্ম হওয়ার রাজনৈতিক দিশা নিয়ে, মেহনতি মানুষের সন্তানদের শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ৩১ বছর ধরে সাহসী ভূমিকার ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের জন্য রাজধানী ঢাকাসহ ছাত্র মৈত্রী সারাদেশেই দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করবে।  
মহান ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত ইতিহাসের পথ ধরে ১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিল গড়ে ওঠে উপমহাদেশের প্রথম প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ‘পূর্ব পাকিস্তন ছাত্র ইউনিয়ন’। তারই ধারাবাহিকতা এবং উত্তরাধিকার ‘বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী’।

ষাটের দশকে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলা ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন’ থমকে দাঁড়ায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের আন্তর্জাতিক মহাবির্তকে। চীনপন্থী (মেনন গ্রুপ) এবং রাশিয়াপন্থী (মতিয়া গ্রুপ) ধারায় বিভক্ত হয় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন।

মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে বহুধাবিভক্ত হয় ছাত্র ইউনিয়ন। মুক্তিযুদ্ধের পরে সত্তুরের দশকে নানা শাখায় বিভক্ত প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের এ সংগঠনগুলোর ঐক্যের তাগিদ থেকে ১৯৮০ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতীয় ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় ছাত্রদল-এর দু’টি অংশ এবং বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন ঐক্যবদ্ধ হয়ে গঠন করে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী।

পরবর্তীতে ঐক্যের ধারাবাহিক সংগ্রামে ১৯৮১ সালে জাতীয় ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ, ১৯৮৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ মিলিত হয়। ১৯৮৮ সালের ৭ এপ্রিল বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নে সঙ্গে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঐক্যের মধ্য দিয়ে সংগঠনের নাম হয় বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী।

১৯৮৮ সালের ২১ নভেম্বর এ মহাঐক্যের মোহনায় মিলেছে জাতীয় ছাত্র সংসদ। অপরদিকে ঐক্যের ধারায় বিকশিত হয়ে ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন ও  বাংলা ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ এবং ১৯৮৭ সালের আগস্টে ছাত্র ঐক্য ফোরাম একীভূত হয়ে গঠন করে গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন।

পরবর্তীতে ১৯৯২ সালের ২৩-২৪ অক্টোবর বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। ৩১ বছরে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর ইতিহাস শুধুই সংগ্রামের। ‘মেহনতী জনতার সঙ্গে একাত্ম হও’Ñ এই স্লোগানকে ধারণ করে ছাত্র মৈত্রী একদিকে দেশের সাধারণ মানুষের সন্তানদের শিক্ষা-কাজের সংগ্রাম এবং অপরদিকে রাষ্ট্রীয়ক্ষেত্রে সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-সামরিক স্বৈরাচার-সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আপোসহীন লড়াইয়ে নিয়োজিত আছে।

একাত্তরের পরাজিত ঘাতক মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক চক্রের বিরুদ্ধে ছাত্র মৈত্রীর বীরোচিত লড়াই এদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে এক বিশেষ অধ্যায় রচনা করেছে। ছাত্র মৈত্রী লড়াই-সংগ্রামের পথে এখনো অবিচল।

৩১ বছরের এই সংগ্রামী পথচলায় ছাত্র মৈত্রী অসংখ্য জীবন বিসর্জন দিয়েছে। এ সময়ে ছাত্র মৈত্রী হারিয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শহীদ জামিল আক্তার রতন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জুবায়ের চৌধুরী রিমু, শহীদ দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য রূপম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ফারুকুজ্জামান ফারুক, যশোরের শহীদ আইয়ুব হোসেন, রাজবাড়ীর শহীদ বনি আমিন পান্না, শহীদ আতিকুল বারী, ঝিনাইদহের শহীদ রাজু আহম্মেদ বাবলু, পাবনার শহীদ আসলাম, ঢাকা মহানগরের শহীদ আশরাফুল ইসলাম নাসিম, শহীদ রেজাউল করিম সেলিম, বরিশালের শহীদ শামীম আহমেদ, সর্বশেষ বর্তমান আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শহীদ রেজওয়ানুল ইসলাম চৌধুরী সানি।

ছাত্র মৈত্রীর প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ফজলে হোসেন বাদশা (বর্তমানে রাজশাহীর সংসদ সদস্য) ও আতাউর রহমান ঢালী।

পরবর্তীতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে ফজলে হোসেন বাদশা-জাহাঙ্গীর আলম রুবেল, জহিরউদ্দিন স্বপন-নুর আহমদ বকুল, নুর আহমদ বকুল-রাগিব আহসান মুন্না, রাগিব আহসান মুন্না-মাহমুদ হাসান বুলু, আতাউর রহমান আতা-জিয়াউল হক জিয়া, মিজানুর রহমান চন্দন-জিয়াউল হক জিয়া, জিয়াউল হক জিয়া-দীপংকর সাহা দিপু, জিয়াউল হক জিয়া-দীপংকর সাহা দিপু (২য় মেয়াদে), দীপংকর সাহা দিপু-সাব্বাহ আলী খান কলিন্স, সাব্বাহ আলী খান কলিন্স-আব্দুল আহাদ মিনার, রফিকুল ইসলাম সুজন-মামুনুর রশীদ, রফিকুল ইসলাম সুজন-মুক্তার হোসেন নাহিদ, রফিকুল ইসলাম সুজন-বিপ্লব রায় এবং বাপ্পাদিত্য বসু-তানভীর রুসমত (বর্তমান কমিটি)।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি

বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী সপ্তাহজুড়ে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা আন্দোলন-মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব গণতান্ত্রিক সংগ্রামের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, ১১টায় মধুর ক্যান্টিনে মিষ্টিমুখ।

১০ ডিসেম্বর সকাল ১১.৩০টায় ছাত্র মৈত্রীর জন্মস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় ছাত্র সমাবেশ ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা।

এছাড়া ৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা, পুনর্মিলনী, শোভাযাত্রা, ছাত্র সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছাত্র মৈত্রী উৎসবের পাশাপাশি সংগ্রামী চেতনায় পালন করবে। এবারের কর্মসূচির স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে লাগাতার সংগ্রাম গড়ে তোল, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ এর প্রেসক্রিপশনে শিক্ষা সংকোচন নীতি প্রতিরোধ কর। ’

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, ডিম্বেমর ০৫, ২০১১   

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।