ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

একাত্তরে আওয়ামী লীগ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫১ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৯
একাত্তরে আওয়ামী লীগ

ঢাকা: প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পূর্ণ করলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদাতা দেশের অন্যতম প্রাচীন এই রাজনৈতিক দল ৭১ বর্ষে পদার্পণ করেছে রোববার (২৩ জুন)। গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক আওয়ামী লীগ নানা ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উতরাই ও সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে আজকের অবস্থানে উপনীত হয়েছে।

পশ্চাৎপদ ও ভ্রান্ত দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম নেওয়া পাকিস্তানে পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কেএন দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে এ দলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর মুসলিম লীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশ বেরিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে নতুন দল গঠন করেন।

তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ দলটি প্রতিষ্ঠার প্রায় চার বছর পর ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ নামে বাঙালির অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রামের ব্রত নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে।  

প্রতিষ্ঠা পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির অধিকার আদায়ের প্লাটফর্ম হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ। প্রথম সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক হন  শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক। ধারাবাহিকতার এক পর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন। ১৯৬৬ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পান। আওয়ামী লীগের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক শেখ মুজিব।
 
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানের শাসন-নির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন, ৫২-তে ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়, ৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলন এক পর্যায়ে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা অর্জিত হয়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে।

৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকার দেশ গঠনে মনোনিবেশ করে। কিন্তু স্বাধীনতার পর ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে পরবতী দীর্ঘ সময় দেশে একের পর সামরিক স্বৈরশাসনের যে অভিশাপ নেমে আসে, তার বিরুদ্ধে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দেয় ঐতিহ্যবাহী এই দল।

এই সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আওয়ামী লীগকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। অনেক চড়াই-উতরাই এবং ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে এগোতে হয়েছে। কখনো নেতৃত্বের শূন্যতা, কখনো দমন-পীড়ন, কখনো ভাঙনের মুখে পড়তে হয়েছে দলটিকে। বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। এই শূন্যতা থেকেই দলের মধ্যে একাধিক ভাঙন এবং গ্রুপিং দেখা দেয়।  

দলের চরম ক্রান্তিকালে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। প্রায় চার দশক ধরে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। এই সময়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি চারবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। তবে ৭০ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই আওয়ামী লীগকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে, আন্দোলন-সংগ্রামে। ’৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পর ’৫৬ সালে আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করলেও তা বেশি দিন টেকেনি।  

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু প্রায় সাড়ে তিন বছর সরকার চালান। এরপর ১৯৯৬ সালে তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ বছর রাষ্ট্র চালায় আওয়ামী লীগ। মাঝে সাত বছর বাদ দিয়ে বর্তমানে টানা সাড়ে ১০ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে স্বাধীনতার নেতৃত্বদাতা দলটি।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৯
এসকে/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।