ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বিএনপি

দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না তৃণমূলের বিএনপি নেতারা

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৪ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৯
দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না তৃণমূলের বিএনপি নেতারা

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি। এরপর দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয় বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে আর কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না। দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এ বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দিয়ে একাধিকবার চিঠিও দেওয়া হয়।

ওইসব চিঠিতে বলা হয় বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি দলীয়ভাবে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। যদি কেউ নিজ দায়িত্বে নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

এ সিদ্ধান্তের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি। একই সঙ্গে তারা কোনো প্রার্থীকে সমর্থনও দেয়নি। এরপর পরই শুরু হয় পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা। একে একে চার ধাপে চারবার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনের ঘোষণা আসার পরই বৈঠকে বসেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সেসময় দলের মহাসচিব সংবাদ সম্মেলনে সরাসরি ঘোষণা দেন, এ সরকার ও ইসির অধীনে আমরা আর কোনো নির্বাচনে যাচ্ছি না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, তার প্রমাণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

এদিকে সারা দেশের ঘোষিত তফসিলে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে অনেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আবার অনেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন জমা দেওয়ার জন্য। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ ধরনের তথ্য আসামাত্রই তাদের চিঠি দিয়ে বহিষ্কার করা হচ্ছে। গত ১৯ জানুয়ারি প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণার পর থেকে দফায় দফায় বহিষ্কারের চিঠি যাচ্ছে নেতাদের কাছে। ৪৮৭টি উপজেলার মধ্যে চার ধাপে ৪৮০টি উপজেলায় নির্বাচন হবে।

দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় ইতোমধ্যে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তারা হলেন- হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি এস এম শাহজাহান, মনজুর উদ্দিন আহমদ শাহীন, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা সভাপতি এস লিয়াকত হাসান, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসম্পাদক খালেদুর রশীদ ঝলক, হবিগঞ্জ জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান আওয়াল, মাধবপুর পৌর সভাপতি আব্দুল আজিজ, বানিয়াচং মহিলা দলের আহ্বায়ক তানিয়া খানম, মাধবপুর মহিলা দলের আহ্বায়ক সুফিয়া আক্তার হেলেন, বাহুবল উপজেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক নাদিরা খানম, লাখাই উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক তাউস আহমদ, উপদেষ্টা মাজহারুল ইসলাম ডালিম, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি জিল্লুর রহমান সোয়েব, দক্ষিণ সুরমা বিএনপির উপদেষ্টা শামছুল আলম, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা যুবদল নেতা সুন্দর আলী, উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাওলানা রশীদ আহমদ, জকিগঞ্জ উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি ইয়াহইয়া বেগম, জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলে আশরাফ মান্না, গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি লুৎফুল হক খোকন, গোয়াইনঘাট বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম স্বপন, গোয়াইনঘাট বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জেলা মহিলা দলের সাবেক সহসভাপতি খোদেজা বেগম কলি, জৈন্তাপুর বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল হক, সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি সোহেল আহমদ চৌধুরী, বিশ্বনাথ বিএনপি নেতা মিসবাহ উদ্দিন আহমদ, বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আহমদ নুর উদ্দিন, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান খালেদ, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন রুবেল, বিশ্বনাথ উপজেলা যুবদল নেতা জুবেল আহমদ, সিলেট জেলা মহিলা দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমা বেগম, বিশ্বনাথ মহিলা দলের আহ্বায়ক নুরুন্নাহার ইয়াসমিন, সিলেট জেলা মহিলা দলের সহসভাপতি স্বপ্না শাহীন, কোম্পানীগঞ্জ শ্রমিক দলের আহ্বায়ক লাল মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ আবিদুর রহমান, ফেঞ্চুগঞ্জ বিএনপির সহসভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান সুফী, ফেঞ্চুগঞ্জ বিএনপির উপদেষ্টা মনির আলী নানু মিয়া, ফেঞ্চুগঞ্জ বিএনপি নেতা হারুন আহমদ চৌধুরী, ফেঞ্চুগঞ্জ বিএনপির উপদেষ্টা জহিরুল ইসলাম মুরাদ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা যুবদল নেতা সাহেদ আহমদ, ফেঞ্চুগঞ্জ মহিলা দলের আহ্বায়ক ও জেলা মহিলা দলের শিক্ষা সম্পাদক ফেরদৌসী ইকবাল, সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদাল মিয়া, বালাগঞ্জের উপজেলা বিএনপি নেতা মো. গোলাম রব্বানী, বালাগঞ্জ মহিলা দলের সহসভাপতি সেবু আক্তার মনি, বগুড়া জেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি মো. মাছুদুর রহমান (হিরু মণ্ডল),

বগুড়া জেলা বিএনপির সদস্য টিপু সুলতান, সারিয়াকান্দি থানা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক গোলাপী বেগম, সোনাতলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউল হক লিপন, সোনাতলা মহিলা দলের সভাপতি রঞ্জনা খান, সাংগঠনিক সম্পাদক নয়নতারা, শিবগঞ্জ মহিলা দলের সভাপতি বিউটি বেগম, বগুড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট রাফি পান্না, বিএনপি নেতা ও নন্দীগ্রাম থানা যুবদলের সভাপতি আলেকজান্ডার, নন্দীগ্রাম থানা বিএনপির সভাপতি এ কে আজাদ, কাহালু থানা কৃষক দলের সভাপতি শাহাবুদ্দিন, কাহালু মহিলা দলের সভাপতি মমতাজ আরজু কবিতা, ধুনট পৌর সাবেক সভাপতি আকতার আলম সেলিম, ধুনট পৌর বিএনপির সভাপতি আলিমুদ্দিন হারুন, বিএনপি সদর থানা মহিলা দলের সভাপতি নাজমা আক্তার, সদর থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম গফুর, শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল বাশার, শাজাহানপুর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহেরুল ইসলাম, শাজাহানপুর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মেদ, শাজাহানপুর থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুলেখা বেগম, কোহিনুর বেগম, বিএনপি নেত্রী অ্যাডভোকেট রহিমা খাতুন মেরি, জেলা ছাত্রদলের সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মেহেরুল আলম মিশু, বিএনপি নেতা আনোয়ার এহসানুল বাশার জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সুরাইয়া জেরীন রনি, গাবতলী উপজেলা মহিলা দলের সদস্য সহমিনা আকতার রুমা এবং গাবতলী থানা বিএনপি নেতা শ্যামল সরকার, নওগাঁর নিয়ামতপুর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সদরুল আমিন চৌধুরী, সহসভাপতি মোনয়ারা বেগম, মান্দা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আহসান হাবীব, সাপাহার উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদীন, সাপাহার উপজেলা আশরাফুল ইসলাম, ধামইরহাট পৌর মহিলা দলের সদস্য শাহিনা, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক নুর নাহার বেগম, নানিয়ারচর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুজ্জামান হাওলাদার, জেলা বিএনপির সহ-মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক রনো চাকমা, বান্দরবান জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল কুদ্দুছ, আবুল কালাম, বান্দরবান জেলা মহিলা দলের যুগ্ম আহবায়ক শিরিন আক্তার, রুমা উপজেলা বিএনপির সভাপতি জিমসম লিয়ান বম এবং বান্দরবান জেলা মহিলা দলের যুগ্ম আহবায়ক হামিদা চৌধুরী।

এদের দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানানো হয় দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুর কবির রিজভী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে আরও যদি কোনো নেতা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তাহলে তাদেরও বহিষ্কার করা হবে।

জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বাংলানিউজকে বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বহিষ্কার করা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত কতজন হয়েছে সেটার সঠিক হিসাব নেই। তবে জেলা ও থানা কমিটি থেকে রেজুল্যেশনের মাধ্যমে কেন্দ্রে চিঠি আসার পরই এখান থেকে ওইসব নেতাদের বহিষ্কার করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৯
এমএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।