ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

পুনঃভোট চেয়ে সিইসিকে ঐক্যফ্রন্টের স্মারকলিপি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৯
পুনঃভোট চেয়ে সিইসিকে ঐক্যফ্রন্টের স্মারকলিপি ইসিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা

ঢাকা: সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে পুনরায় নির্বাচনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে ড. কামাল নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

বৃহস্পতিবার (০৩ জানুয়ারি) বিরোধী এ নির্বাচনী জোটের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন ভবনে এসে এ স্মারকলিপি জমা দেন।

স্মারকলিপিরে শিরোনামে বলা হয়েছে- অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ, ভোটারদের সঙ্গে প্রতারণা, ভোট জালিয়াতি, সরকারি প্রশাসন তথা রাষ্ট্রযন্ত্রকে নজিরবিহীনভাবে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার এবং নির্বাচন কমিশনের সর্বাত্মক পক্ষপাতমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল এবং অনতিবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি।

স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পর নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন, মাঠ পর্যায়ের কোনো স্তরেই নিয়ন্ত্রণ ছিল না নির্বাচন কমিশনের, তা একজন কমিশনাররের বক্তব্যে তা প্রমাণ হয়েছে। দীর্ঘ দশ বছর ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে আবারও বঞ্চিত করার দায় নির্বাচন কমিশনকেই বহন করতে হবে।

মজার বিষয় হচ্ছে- ব্যালট পেপারের মুড়িতে সই লাগে ভোটারের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা নেই। প্রতারণা, জালিয়াতির মাধ্যমে ভোটগ্রহণের দায় ইসিকেই বহন করতে হবে। কেননা, নির্বাচনের আগের রাতেই ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট কেটে ব্যালট বাক্সে ভরে রাখা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের আসতে বাধা দেওয়া হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। নির্বাচনের আগের দিন ও রাতে পোলিং এজেন্ট এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নানারকম হুমকি দেয়া হয়, গ্রেফতার করা হয়। তাদের এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। ক্ষেত্রেবিশেষে ভোটকেন্দ্রে এলেও এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, প্রায় সব কেন্দ্রেই দুপুরের মধ্যে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যায়। পরে মধ্যাহ্ন বিরতির নামে ভোটকেন্দ্রের মূলফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। নজিরবিহীনভাবে বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিস্ক্রিয় করে রাখা হয়। কোনো কোনো কেন্দ্রে ১০০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়, যা নজীরবিহীন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের দেখানের জন্য নিজেদের লোক লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। নির্বাচনে নিয়োগ দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের পদধারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। অনেক ভোটকেন্দ্রেই বিকেল ৪টার আগেই ভোটগণনা শুরু করা হয়। সারাদেশে জালভোটের মহাউৎসব চললেও কোথাও একজন জাল ভোট প্রদানকারীকেও গ্রেফতার করা হয়নি।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির সঙ্গে মসকারি (উপহাস) করেছে। জাতিকে অন্ধকারে দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এজন্যই প্রত্যাখান করেছি। এবং পুনর্নির্বাচনের জোর দাবি জানাচ্ছি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব ঠিক আছে। ইসিকেই তো দাবি জানবো, তারাই নির্বাচন করেছে। পরবর্তীতে অন্যান্য কর্মসূচি গ্রহণ করবো।

তারা (নির্বাচন কমিশন) শুধু স্মারকলিপি গ্রহণ করেছে। কোনো কথা নেই তো। শপথ নেওয়ার প্রশ্ন আসে কোত্থেকে। আমরা তো ফলাফল প্রত্যাখান করেছি।

তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন (দশম সংসদ নির্বাচন) বর্জন করেছিলাম, সেটাই সঠিক, তা প্রমাণ হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না।

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়েছে- ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ভেটিং করা হয়নি, দলীয় মনোনয়নে বাধা দেওয়া হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাছাই এবং আপিলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা, গ্রেফতার ও নজিরবিহীন নির্যাতন, অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে। এছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, প্রচার কাজে বাধাপ্রদান, প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে রদবদল না করা, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ এবং সশস্ত্র বাহিনীকে নিস্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে।

মির্জা ফখরুলের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকী, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
ইইউডি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।