ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

বিএনপি

রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষ পদে ভারসাম্য আনবে ঐক্যফ্রন্ট

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৮
রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষ পদে ভারসাম্য আনবে ঐক্যফ্রন্ট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

ঢাকা: রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, পরপর দুই বারের বেশি একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, কৃষক শ্রমিকের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, আইনের সংস্কার, সুশাসন, মানুষের জীবনের নিরাপত্তাসহ নানা বিষয় নিয়ে তৈরি হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার।

জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির প্রধান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, খসড়া প্রায় চূড়ান্ত। মঙ্গলবার (০৪ ডিসেম্বর) স্টিয়ারিং কমিটিতে দেবো।

তারা অনুমোদন দিলে বুধবার (০৫ ডিসেম্বর) তা প্রকাশ করা হবে।  

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা ও এক ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো ইশতেহারের খসড়ায় আছে।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম-মহাসচিব ও ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা ও এক ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিষয়ে ইশতেহার কমিটির ছয়জনই একমত হয়েছেন। এটা ইশতেহারে থাকবে।

জোট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার গঠন কমিটির ছয় সদস্য ছয়টি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ ও ডা. জাহেদ উর রহমান ওই ৬টি প্রস্তাব সমন্বয় করে ইশতেহার চূড়ান্ত করেছেন। মঙ্গলবার এর চূড়ান্ত খসড়া স্টিয়ারিং কমিটিতে জমা দেওয়া হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্টিয়ারিং কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে ১০ ডিসেম্বরের আগেই প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত ইশতেহার।  
  
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পূর্বঘোষিত ১১ দফা সামনে রেখেই ইশতেহার তৈরি করা হয়েছে। এতে রয়েছে- শিক্ষা, স্বাস্থ্য,বিচার বিভাগ, বাক-স্বাধীনতা, মানুষের জীবনের নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়।

খসড়া ইশতেহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কী করবে সেইসব অঙ্গীকার নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে পরিগণিত হবে। ইশতেহারের একটি সংক্ষিপ্ত রূপ ও একটি বিস্তারিত রূপ থাকবে। সংক্ষিপ্ত ভার্সনটি ভোটারদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে।

ইশতেহারের খসড়ায় খাতভিত্তিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। এর মধ্যে নাগরিক নিরাপত্তার বিধান করতে জোর প্রতিশ্রুতি থাকবে। যেমন, সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেফতার করা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল, মামলাজট কমাতে উচ্চআদালতের ছুটি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বন্ধ করার ঘোষণা থাকবে। সংবিধান সংশোধনের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হবে। মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি জেএসসি-পিইসি পরীক্ষা বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত পরীক্ষাগ্রহণ, ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যে দেশের সব প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও খসড়ায় গুরুত্বের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

খসড়া ইশতেহারে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত, উচ্চ আদালকের বিকেন্দ্রীকরণ, বিভাগীয় সদরে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষিত বেকারদের জন্য ভাতা, তিন বছরের মধ্যে সব সরকারি শূন্য পদে নিয়োগের নিশ্চয়তা থাকবে।

প্রস্তাবিত খসড়া ইশতেহারে কৃষক-শ্রমিক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি থাকবে ইশতেহারে। থাকবে দারিদ্র্য আরও কমিয়ে আনার বিষয়টিও।

সুশাসন, স্বচ্ছতা ও স্ব অবস্থান- এ তিন অঙ্গীকারের মধ্যে দিয়ে নবধারার রাজনীতি ও সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি থাকছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে। থাকছে নতুন নতুন চমক ও অঙ্গীকার।

জানা গেছে, রাজনীতিতে অতীতমুখিতা বা প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে নতুন ধারার সৃষ্টি, জাতীয় সংসদকে সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি থাকবে ইশতেহারে।
  
শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকবে না। পর্যায়ক্রমে সব সরকারিকরণ করা হবে। বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের চাকরি পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা হবে। শিক্ষক নিয়োগে শতভাগ মেধা অনুসরণ করা হবে।

আইন ও বিচার বিভাগের সংস্কার, বিচারকদের স্বচ্ছ নিয়োগ পদ্ধতি ও বিচার কাজে তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, হাইকোর্টের বিচারপতিদের বার্ষিক ছুটি ৪ সপ্তাহে সীমিতকরণ ও সর্বোচ্চ ৫ বছরের মধ্যে মামলার রায় চূড়ান্ত করা হবে।

বাংলানিউজকে ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, আমরা ইশতেহার কমিটিতে ছয়জন ছয়টা প্রস্তাব দিয়েছি। এগুলো চূড়ান্ত করা হলে আশা করি ১০ ডিসেম্বর নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের আগেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার প্রকাশ করা যাবে।

খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ এর আলোকে ইশতেহার তৈরি হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা বিএনপির নিজস্ব বিষয়। আমাদের খসড়ায় ছয়জনের প্রস্তাবের মধ্যে বিএনপি থেকে যিনি আছেন তার প্রস্তাবের মধ্যে এগুলো থাকতে পারে। সবগুলো সমন্বয় করেই চূড়ান্ত হবে ইশতেহার।

সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার প্রণয়নে যে কমিটি করা হয়েছে তাতে বিএনপির পক্ষে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, গণফোরামের আ ও ম শফিক উল্লাহ, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের ডা. জাহেদ উর রহমান রয়েছেন। কমিটির মূল দায়িত্বে আছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
 
বাংলাদেশ সময়: ০২২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৮
এমএইচ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।