ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রগতিশীল রাজনীতি চর্চা করতে হবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রগতিশীল রাজনীতি চর্চা করতে হবে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মোহাম্মদ এ আরাফাত। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। আর এটা অব্যাহত রাখতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও প্রগতিশীল ভাবধারার রাজনীতির চর্চা করতে হবে। আর সে রাজনীতি যদি উন্নয়নের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে না হয়, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থাও পাকিস্তানের মতো হবে, পিছিয়ে যাবে।’

এমনটাই মনে করেন সামাজিক উন্নয়ন ও গবেষণামূলক সংস্থা সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মোহাম্মদ এ আরাফাত। সম্প্রতি রাজধানীর বনানীতে নিজ কার্যালয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশের রাজনীতি, উন্নয়ন ও জঙ্গিবাদ বিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি কথা বলেন।

শিক্ষক ও গবেষক মোহাম্মদ এ আরাফাত সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ছাড়াও দায়িত্ব পালন করছেন সুচিন্তা বাংলাদেশের আহ্বায়ক হিসেবে। পররাষ্ট্রনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সহযোগিতা, পানি বণ্টন, যুদ্ধাপরাধ, সংবিধান বিষয়ে তার নানা গবেষণা রয়েছে।

মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, পাকিস্তানিরাই বলছে, আমরা তাদের থেকে ১০ বছর এগিয়ে আছি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তারা আমাদের আগে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তারা স্বাধীন হয়েছে ৪৭ সালে (১৯৪৭) আর আমরা একাত্তরে (১৯৭১)। আগে স্বাধীন হওয়া একটি দেশ বাংলাদেশ থেকে ১০ বছর পিছিয়ে গেলো কেন? কারণ হচ্ছে- পাকিস্তানে যে রাজনীতি চর্চা হয়েছে, সেটা আইএসআই কেন্দ্রিক, ধর্মীয় মৌলবাদীকে উসকে দিয়ে এবং ধর্মের অব্যবহার করে।

‘সেই রাজনীতি গণতান্ত্রিক ও উদারনৈতিক এবং প্রগতিশীল রাজনীতি না। মূলত এজন্যই ৪৭ সালে জন্ম হওয়ার পর এখনও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এতটা পাকিস্তান পিছিয়ে আছে। আর যতটুকু সময় বাংলাদেশে প্রগতিশীল রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালিত হয়েছে সেই সময়েই আমরা এগিয়ে গেছি। ’
সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মোহাম্মদ এ আরাফাত।  ছবি: বাংলানিউজবাংলাদেশেও এ ভাবধারার সরকার দেশ পরিচালনা করেছে উল্লেখ করে এই গবেষক বলেন, বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হচ্ছে- স্বাধীন হওয়ার পর এদেশেও পাকিস্তানি ভাবধারার রাজনীতি দেশকে অধিক সময় পরিচালিত করেছে। তখন ক্ষমতায় থেকে সামরিক শাসকরা মৌলবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতি চর্চা করেছে। আর স্বাধীনতার পর মাত্র ১৮ বছর দেশ পরিচালনা করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ। এই সময়ের মধ্যেই পাকিস্তানকে ১০ বছর পেছনে ফেলে দিয়েছি আমরা।

‘আমরা তো তাদের (পাকিস্তান) ১০০ বছর এগিয়ে থাকতাম, পুরোটা সময় যদি প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনায় দেশ পরিচালনা হতো। এর মধ্যে  গ্যাপ সময়ে বাংলাদেশেও চলেছে পাকিস্তানি ভাবধারার রাজনীতি। ফলে দেশ পিছিয়ে গেছে। এখন এটা খুবই স্পষ্ট, কোন রাজনীতি দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, আর কোন রাজনীতি দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে। ’

সুচিন্তার চেয়ারপারসন বলেন, ‘ভবিষ্যতেও এটা যদি মুক্তিুদ্ধের চেতনায় না হয়, প্রগতিশীল ভাবধারার না হয়, উন্নয়নের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে না হয় তাহলে বাংলাদেশও পাকিস্তানের মতো অবস্থা হবে, পিছিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে সমৃদ্ধ ও ‍উন্নয়নের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকারের বিকল্প নেই। ’

বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা ও সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে  মৌলবাদী রাজনীতির চর্চা যখন শুরু হয় অর্থাৎ পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসকের হাত ধরে আমরা প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির দিকে গেলাম, তারই ফলশ্রুতিতেই আমি বলবো পরবর্তীতে বৈশ্বিক বাস্তবতায় বাংলাদেশেও  জঙ্গিবাদ জায়গা করে নেয়।

‘২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের আমলে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের শেষে মহাজোটের বিজয়ের পরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালে খুবই শক্তভাবে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সরকারি পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়। জঙ্গিবাদের বিপক্ষে একেবারে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হলো। পরে মোটামুটি জঙ্গিবাদের যে স্ট্রাকচারগুলো বাংলাদেশে ছিলো তৃণমূলের বিভিন্ন জায়গায়, এগুলোকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আবার  অনেকে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়েছে। পরবর্তীতে বৈশ্বিক বাস্তবায়তায় এখানে (বাংলাদেশ) যারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে তাদের একটি বড় প্রকাশ আমরা দেখলাম হলি আর্টিজানে। তখনও সরকার বেশ শক্তভাবে এটি মোকাবেলা করেছে। ’
সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মোহাম্মদ এ আরাফাত।  ছবি: বাংলানিউজতিনি বলেন, এখন আমরা অনেকটা কন্ট্রোলড অবস্থায় রয়েছি বলা যায়। কিন্তু আমি মনে করি, জঙ্গি কর্মকাণ্ডের বিপক্ষে যেমন শক্ত অবস্থান নিতে হবে, তেমনই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকেও কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে জঙ্গিবাদকে মোকাবেলার জন্য আমাদের বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম হাতে নিতে হবে। তারই অংশ হিসেবে দেশজুড়ে সুচিন্তা বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ বিরোধী কাজগুলো করে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারে নানা জঙ্গি বিরোধী কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে সংস্থাটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ওই অঞ্চলের (চট্টগ্রাম বিভাগ) বিভিন্ন মাদ্রাসায় আমরা যাচ্ছি। সেখানে কয়েকটি কমিউনিটি তৈরি করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে- যারা মাদ্রাসায় পড়ছেন তাদের অনেকেই মূল ধারার শিক্ষার সঙ্গে সেভাবে পরিচিত নয়, সেজন্য-ই তাদের মূল ধারার শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। মূল ধারার সঙ্গে নিয়ে এলে তাদের মধ্যে কোনো হতাশা থাকবে না। তারাও অন্যদের মতো সব ধরনের কাজে যুক্ত হতে পারবে।

‘কারণ এসব শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হতাশাকে পুঁজি করে একটা গোষ্ঠী তাদের জঙ্গিবাদে উদ্ধুব্ধ করে। তাদের মধ্যে যাতে এ ধরনের চিন্তা বাসা বাঁধতে না পারে সেজন্য সুচিন্তা কাজ করছে। মূল জিনিসটা হচ্ছে- মাদ্রাসাভিত্তিক জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মাঝে যে দেয়ালটি রয়েছে সেটি ভেঙে ফেলা। ধর্ম ব্যবহার করে যাতে কোনো ধরনের অপকর্ম সৃষ্টি করতে কেউ না পারে সেজন্য আমাদের এ দীর্ঘ মেয়াদী লড়াই চলবে। ’

ঢাকাতেও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলসহ কলেজেও কাজ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮
টিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।