ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ছাত্ররাজনীতির বিনির্মাণ দরকার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৮
সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ছাত্ররাজনীতির বিনির্মাণ দরকার বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় সাদ্দাম হোসেন। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: সাদ্দাম হোসেন। পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। জন্ম উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায়। বাবা আমিনুল হক ছিলেন মুজিব বাহিনীর সদস্য এবং বোদা উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক সভাপতি। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট সাদ্দাম।

সস্প্রতি ঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কমিটিতে সংগঠনটির ‘সুপার ইউনিট’খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন তিনি। শত প্রার্থীর মধ্য থেকে চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষে দীর্ঘ আড়াই মাস পর ঘোষিত কমিটিতে তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ন্যস্ত করেছেন ‘সাংগঠনিক প্রধান’ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আস্থার প্রতিদান কিভাবে দেবেন, ছাত্রলীগকে কী দিতে চান, কতোটুকু দিতে চান, ছাত্রলীগ নিয়ে তার ভাবনা, গৌরব পুনরুদ্ধারে তার ভূমিকা কী হবে- এসব বিষয়ে নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছেন বাংলানিউজের। দীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে এসেছে ছাত্রলীগের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথকতাও। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট সাজ্জাদুল কবির

 

বাংলানিউজ: নিজের সম্পর্কে...

সাদ্দাম হোসেন: আমি ২০০৮ সালে ঠাকুরগাঁও জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করি। এরপর নটরডেম কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হই। বর্তমানে অনার্স শেষ বর্ষে আছি। আমি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতাম। বিতর্ক, বক্তৃতায় অংশ নিয়েছি। নটরডেম কলেজের ম্যাগাজিনে লিখতাম। খেলাধুলার পাশাপাশি পরিবেশ নিয়েও কাজ করতে ভালো লাগে।

 

বাংলানিউজ: ছাত্রলীগের রাজনীতিতে কিভাবে এসেছেন?

সাদ্দাম হোসেন: স্কুল-কলেজে সরাসরি রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না। তবে মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক থেকেই প্রগতিশীল চেতনা ধারণা করতাম। ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ থেকে। নিয়মিত মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিতাম। পরবর্তীতে আমি স্যার এ এফ রহমান হলের সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের উপ-আইন সম্পাদক মনোনীত হই।

 

বাংলানিউজ: ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছাত্রলীগ আপনার কাছে থেকে ব্যতিক্রম কী ভূমিকা পেতে পারে?

সাদ্দাম হোসেন: এই সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ছাত্ররাজনীতির নবায়ন প্রয়োজন, বিনির্মাণ প্রয়োজন। আমরা সেটি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ, অনুশীলনের পরিবেশ আরও কিভাবে উন্নত করা যায়, সর্বোপরি একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার ক্ষেত্রে ছাত্রসংগঠন হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করা দরকার আমরা সেটি করবো। সাদ্দাম হোসেন।  ছবি: ডিএইচ বাদলবাংলানিউজ: ছাত্রলীগ অতীত-ঐতিহ্য হারিয়েছে বলে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে সবখানে। শঙ্কিত সাবেক নেতারাও...

সাদ্দাম হোসেন: আমি মনে করি না ছাত্রলীগ তার সোনালী অতীত-ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। ছাত্রলীগ অতীত-ঐতিহ্য ধারণ করে বর্তমানের প্রতি দায়িত্ব পালন করে। ছাত্রলীগের মূল লক্ষ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা। যেন আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ চাই। এই মুহূর্তে সোনার মানুষ তারাই হবে যারা আগামী দিনের জ্ঞানের প্রতিযোগিতা, প্রযুক্তির দক্ষতা ও মানসিক যে উৎকর্ষতার দরকার সেটা নিশ্চিত করবে। সময়ের প্রয়োজনে ইতিহাসে বিভিন্ন রকমের দায়িত্ব থাকে। হয়তো বায়ান্ন সালে আমাদের একরকম ভূমিকা ছিল। আমরা সেই ঐতিহ্যগুলোকে ধারণ করছি। সেটি ধারণ করে আমরা নতুন দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চাই। ছাত্রলীগ তার অতীত-ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি। আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি সবসময়।

বাংলানিউজ: ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মাদকসেবন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সাধারণ ছাত্রদের মারধরের অভিযোগ রয়েছে। এসব বন্ধে কী ধরনের উদ্যোগ নেবেন?

সাদ্দাম হোসেন: বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আমরা মাদকমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই। ছাত্রলীগ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। আমরা মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। শিক্ষার্থীরা এই জায়গা থেকে সরে এসে কিভাবে ভালো সময় কাটাতে পারে সেটি বের করবো। এ শুদ্ধি অভিযানে প্রশাসনকেও পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবো। মাদকের প্রশ্নে আমাদের কোনো আপোষ নেই, জিরো টলারেন্স দেখাতে চাই। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় সাদ্দাম হোসেন।  ছবি: ডিএইচ বাদলবাংলানিউজ: বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের ব্যাপারে আপনার এবং সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে?

সাদ্দাম হোসেন: বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন আছে, যারা ছাত্ররাজনীতির যে ভূমিকা সেটি অব্যাহত রাখতে চায়। আমরাও গণতান্ত্রিক সৌন্দর্যবোধে বিশ্বাসী, গণতান্ত্রিক পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধ। আমরা মনে করি যেসব ছাত্রসংগঠন প্রগতিশীলতার চর্চা করে, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সৎ- তাদের আমরা সাধুবাদ জানাই। তারা তাদের মতো করে রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালনা করবে। পাশাপাশি বলতে চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে তারাই রাজনীতি করবে যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী। যাদের মধুর ক্যান্টিনে না এসে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে গিয়ে আড্ডা দিতে হয়, যারা কোর্স করছে সন্ত্রাসের, পড়াশোনা করছে মৌলবাদের ফ্যাকাল্টিতে, তাদের ঢাবির সাধারণ ছাত্ররা রাজনীতিতে দেখতে চায় না। সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের এই চেতনাকে সম্মান জানায়।

বাংলানিউজ: বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের একটি দাবি রয়েছে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের বিষয়ে। এ ক্ষেত্রে আপনার সংগঠনের অবস্থান কী হবে?

সাদ্দাম হোসেন: এটা নিয়ে পর্যালোচনার সুযোগ আছে। আমি শিক্ষকদের আহ্বান জানাবো, তারা যেন তাদের মতামত প্রকাশ করেন। ছাত্রসংগঠন হিসেবে আমাদের যদি তাদের আলোচনায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান, আমরা সেই আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করবো। সেখানে আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখবো এই কোর্সগুলো যৌক্তিক কি-না। এটা নিয়ে সবার পর্যালোচনা করার সুযোগ রয়েছে।

বাংলানিউজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন...

সাদ্দাম হোসেন: নিয়মিত ছাত্রত্ব বজায় রেখে জ্ঞান ও সৃজনের পরিবেশকে আরও উন্নত করতে হবে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু যে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন, নীতির প্রশ্নে কোনো দিন আপোষ করেননি, অন্যায়ের কাছে পরাভূত হননি এবং সবসময় মুক্তসমাজ ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছেন, তারা যেন সেটি বুকে ধারণ করেন। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সদাচরণ, মেলামেশা এবং সব সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ছাত্রলীগের কর্মীরা যেন অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ যেন অস্থিতিশীল না হয়, সবার জন্য নিরাপদ থাকে, সে জায়গা থেকে সবাইকে সহায়তা করার জন্য আহ্বান থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৮
এসকেবি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।