ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অন্যান্য দল

‘নতুন দলের বিকাশ রুদ্ধ করার ভূমিকায় ইসি’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৮ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৮
‘নতুন দলের বিকাশ রুদ্ধ করার ভূমিকায় ইসি’ গণসংহতি আন্দোলনের গোলটেবিল বৈঠক

ঢাকা: নির্বাচন কমিশন নতুন রাজনৈতিক চিন্তা ও দলের বিকাশকে রুদ্ধ করার ভূমিকা পালন করছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়া জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।

গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া, নির্বাচন ও সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক অধিকার শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকে এ মন্তব্য করেন তিনি।  

বুধবার (২৭ জুন) গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।

বৈঠক পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখ্‌তার।  

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আইন যে কারণে করা হয়েছে, বর্তমানে তার বিপরীতে একে নতুন রাজনৈতিক চিন্তা ও দল নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমান আমলে এর শর্তগুলোকে এতগুণ কঠিন করা হয়েছে যে, এর লক্ষ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। যেমন- ভোটার সমর্থক থাকার কথা পুরনো আইনে ছিল না, লক্ষ্য ছিল কর্মী-সমর্থকের প্রমাণ হাজির করা।  নির্দিষ্ট সংখক জেলায় কার্যালয় রাখার কথা ছিল না।  

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, নির্বাচন কমিশন হয়তো দলবিহীন গণতন্ত্র চাইছে বলে নতুন কোনো রাজনৈতিক দলকে আর নিবন্ধন দিচ্ছে না।  

তিনি বলেন, অধিকাংশ নিবন্ধিত দলের চাইতে গণসংহতি আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি সক্রিয় ও প্রতিষ্ঠিত রাজনতৈকি দলকে তারা নিবন্ধন দিচ্ছে না। অথচ প্রতিদিন এই দলগুলো নানান কর্মসূচিতে আছে। নির্বাচন কমিশন আসলে একটা আতঙ্কে আছে, কেননা এদের জনমুখী রাজনীতি বিকশিত হলে অগণতান্ত্রিক শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

প্রবীন রাজনীতিবিদ, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, নিবন্ধন ছাড়াই জেল খাটলাম, মামলার শিকার হলাম, মুক্তিযুদ্ধ করলাম। আজকে নিবন্ধন দিয়ে আমাদের খেলো করা হচ্ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, নিবন্ধনের আইনটি করা হয়েছিল নামসর্বস্ব কর্মসূচিহীন দল যেন নির্বাচনে ব্যবহৃত না হয়।

অধ্যাপক আহমেদ কামাল বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র আইনের বেড়াজালে নাগরিকদের বন্দী করে ফেলার ফিকির করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামই এর বিপরীত স্রোতের তৈরি করতে পারে।

নির্বাচন কমিশন সরকারের তোতা পাখির ভূমিকা পালন করছে মন্তব্য করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ভোট মানুষ দেবে কি না সেটা ভোটারদের প্রশ্ন। নির্বাচনে দাঁড়ানো রুদ্ধ করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনকে কে দিল? এক শতাংশ ভোটার সমর্থকের স্বাক্ষর লাগার যে আইন করেছেন, রাতের বেলা সেই ভোটারের বাড়িতে যে পুলিশ বা মাস্তানরা ভয় দেখাবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে?

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, কোন দল নিবন্ধন পেল বা পেল না তার মধ্যেই আলাপটাকে সীমিত রাখতে চাই না। আমরা চাইছি এসব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কিভাবে জনগণকে ক্ষমতাহীন করা হচ্ছে, সরকারকে স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেটা তুলে ধরতে। যেমন, নির্বাচন কমিশনের আইনে আছে, পরপর দুই বার নির্বাচনে অংশ না নিলে একটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। এটা করা হয়েছে দলগুলোকে যেকোনো সাজানো নির্বাচনেও অংশ নিতে বাধ্য করতে অথবা নিবন্ধনহীন দলে পরিণত করার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে।

তিনি আরও বলেন, এই আইনগুলো খুবই অস্পষ্ট। ফলে পুলিশ যেমন রায় দিচ্ছে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হবার, তেমনি নির্বাচন কমিশন রায় দিচ্ছে শর্তপূরণ না করায় নিবন্ধন দেওয়া হয়নি।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, সুশাসনরে জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ইতিহাসবিদ আহমেদ কামাল, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ-মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৮
এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।