ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

খালেদার জামিন বাতিলের বিষয়ে আদেশ ফের পিছিয়ে ২৪ আগস্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
খালেদার জামিন বাতিলের বিষয়ে আদেশ ফের পিছিয়ে ২৪ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া (ফাইল ফটো)

ঢাকা: দুই দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন বাতিলের বিষয়ে আদেশের দিন ফের পিছিয়ে আগামী ২৪ আগস্ট পুনর্নির্ধারণ করেছেন আদালত। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আসামি শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষীর অসমাপ্ত জেরা ও খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থন এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ‍নুর আহমেদকে অসমাপ্ত পুন:জেরাও একইদিন ধার্য করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) এসব আদেশ দেন রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালত।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওই দুই দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে এ আদালতে।

প্রথমে চ্যারিটেবল মামলায় প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ‍নুর আহমেদকে খালেদার পক্ষে পুন:জেরার দিন পিছিয়ে ২৪ আগস্ট পুনর্নির্ধারণ করেন আদালত। গত কয়েক কার্যদিবস ধরে এ জেরা করছেন খালেদার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজ্জাক খান ও  অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম।    

এরপর অরফানেজ মামলার আসামি ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে প্রথম সাফাই সাক্ষী তার আয়কর উপদেষ্টা শাহজাহান সিরাজের অসমাপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে জেরা করেন দুদকের আইনজীবী অ্যাড. মোশাররফ হোসেন কাজল। পরে দ্বিতীয় সাফাই সাক্ষী ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম তৌহিদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে জেরা শুরু করেছেন একই আইনজীবী।    

আসামি শরফুদ্দিন আহমেদ ৭০ জন সাফাই সাক্ষীর তালিকা দিয়েছেন।

জেরা মুলতবিসহ অরফানেজ মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়ার ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন এবং তার জামিন বাতিলের বিষয়ে আদেশের দিনও ২৪ আগস্ট পুনর্নির্ধারণ করেন আদালত।

জামিনে থাকা চ্যারিটেবলের অন্য দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান এবং অরফানেজের অন্য দুই আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

জিয়াউল ইসলাম মুন্না বিদেশে যাওয়ার জন্য আগামী একমাস হাজিরা মওকুফের আবেদন জানালে তা মঞ্জুর করেছেন আদালত।  

গত ০৩ আগস্ট আদালত খালেদা জিয়া অনুমতি ছাড়া বিদেশে যাওয়ায় এবং অন্যরা সাফাই সাক্ষীদের তালিকা ও সাক্ষ্য না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কেন সকলের জামিন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে আধা ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছিলেন। একইসঙ্গে আসামিরা মামলা বিলম্বিত করছেন ও আদালতকে বিচারে সহায়তা করছেন না বলে উষ্মা প্রকাশ করেন।

পরে অন্য আসামিরা আদালতে হাজির আছেন ও সাফাই সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিয়ে দেবেন বলে কারণ দর্শান তাদের আইনজীবীরা। আর খালেদার আইনজীবীরা জানান, তিনি ১৫ সেপ্টেম্বরের দিকে দেশে ফিরবেন।

আদালত অন্যদের জামিন বহাল রাখলেও খালেদার জামিন বাতিলের বিষয়ে ০৭ আগস্ট আদেশের দিন ধার্য করেছিলেন। ওইদিন আদেশ না দিয়ে দিন পুনর্নির্ধারণ করেছিলেন ১৭ আগস্ট।

দুদকের আইনজীবী অ্যাড. মোশাররফ হোসেন কাজলও আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশ যাওয়ায় ও অনুপস্থিত থাকায় গত ২০ জুলাই খালেদা জিয়ার জামিন বাতিলের আবেদন করেছিলেন।

চ্যারিটেবলে গত বছরের ০১ ডিসেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে শুরু করেন খালেদা। কিন্তু ওইদিন বক্তব্য শেষ না হওয়ায় সময় চান তিনি। এরপর কয়েক দফায় আদালতে না গিয়ে সময় বাড়িয়ে নেন। অন্যদিকে উচ্চ আদালতে নানা আবেদন ও অসুস্থতার কথা বলে বেশ কয়েকবার পিছিয়ে নিয়েছেন অরফানেজে আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন।

চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন সাক্ষী। জামিনে থাকা অন্য দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

অন্যদিকে অরফানেজ মামলায় খালেদা জিয়াসহ আসামি মোট ছয়জন। অন্য পাঁচ আসামি হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। বিদেশে থাকা তারেক রহমানকেও পলাতক দেখিয়ে মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে। বাকিরা জামিনে রয়েছেন।

এ মামলায়ও সাক্ষ্য দিয়েছেন ৩২ জন সাক্ষী। জামিনে থাকা অন্য দুই আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন।

২০১০ সালের ০৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে ২০০৮ সালের ০৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
এমআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।