ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

অনুপ্রবেশ নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
অনুপ্রবেশ নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগ

ঢাকা: বিএনপি-জামায়াত থেকে নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদান নিয়ে ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকরা চিন্তিত। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ওপর ভর করে দলে ভিড়ছেন তারা।

এ যোগদানকে ইতিবাচক মনে করছেন না আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। এটিকে তারা দলে অনুপ্রবেশ বলেই মনে করছেন।

আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত থেকে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে এবং এই যোগদান প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত থেকে যারা আসছে তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন গত মহাজোট সরকারের সময় সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী তৎপরতাসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি কোথাও কোথাও হত্যা মামলার আসামি, চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগে ঠাঁই করে নিয়েছে। সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থেকে নিজেদের অতীত অপকর্ম ঢাকতে এবং গা বাঁচাতেই এরা বিএনপি-জামায়াত থেকে এসে আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আর এই যোগদানের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতা, এমপি এবং কোনো জাগায় এই যোগদানের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাও সরাসরি যুক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। এসব নেতাদের ছত্রছায়ায় এবং তাদের হাত ধরেই বিএনপি-জামায়াতের ওই সব বিতর্কিত নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের ভিড়ছে।

অভিযোগ রয়েছে এই যোগদানের পেছনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং ও দ্বন্দ্ব বিষয়টিকে প্রভাবিত করছে। এলাকায় নেতাদের নিজেস্ব গ্রুপ ভারী করা, প্রভাব বিস্তার করা এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এর ফলে কোথাও কোথাও দলে যোগদানকারী বা অনুপ্রবেশকারীদের দাপটে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা-কর্মীরা কোণঠাসাও হয়ে পড়ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এতে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও গ্রুপিং আরও বাড়ছে।

অনুপ্রবেশকারীদের কারণে দলের তৃণমূলের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন অপকর্মসহ দলের শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডের যে ঘটনাগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজনের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠছে দলে অনুপ্রবেশকারীরাই এসব ঘটনা ঘটনাচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগে এই যোগদান প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই দলের হাইকমান্ড বার বার বিএনপি-জামায়াত থেকে যাতে কেউ অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে ব্যপারে সকল পর্যায়ের নেতাদের সতর্ক করে আসছে। কিন্তু তারপরও এই যোগদান বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটা উদ্বেগ ও দুচিন্তাও রয়েছে।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, গত ৩/৪ বছরে বিএনপি-জামায়াত থেকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, রাজশাহীর, নারায়ণগঞ্জ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, জামালপুরের, বগুরা, কুষ্টিয়া, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা উল্লেখযোগ্য। এদের অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, দখলবাজি, দখলবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এই যোগদানকারীদের অনেকে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন কমিটিতেও স্থান করে নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, কোথাও কোথাও যোগদানের কথা শোনা গেছে। তবে এ ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে বিতর্কিত কেউ বা অপরাধীরা যাতে আওয়ামী লীগে আসতে না পারে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র রয়েছে। কেউ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শ, ঘোষণাপত্র গঠনতন্ত্র মেনে আওয়ামী লীগ করতেই পারে। তবে আমরা সতর্ক রয়েছি যারা বিভিন্ন সময় অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তারা যাতে আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশ করতে না পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৭
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।