ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

কমিটিতে সন্ত্রাসী, বিক্ষুব্ধ যশোর যুবলীগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৭
কমিটিতে সন্ত্রাসী,  বিক্ষুব্ধ যশোর যুবলীগ কেন্দ্র ঘোষিত কমিটির প্রতিবাদে যশোর যুবলীগের মিছিল। ছবি: উত্তম ঘোষ

যশোর: যশোরে ছাত্রদল নেতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (১০ এপ্রিল) যশোর সদর ও শহর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর এই চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এছাড়াও এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝেও চরম ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

বিতর্কিত কমিটি বাতিলের দাবিতে সন্ধ্যায় শহরে মিছিলও করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্রদক্ষিণ করা মিছিলটিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেয়।

মঙ্গলবার দুপুরেও স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন সদ্য  ঘোষিত কমিটি বিরোধী মিছিল করে।

গত ২১ মার্চ যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ স্বাক্ষরিত এই কমিটি যশোরে পৌঁছানোর পর স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। সেই ক্ষোভ বাড়তে বাড়তে এখন রাজপথের বিক্ষোভে পরিণত হয়েছে।  

স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, শহর যুবলীগের কমিটিতে আহ্বায়ক হয়েছেন মাহমুদুল হাসান মিলু। তিনি মাগুরা জেলার বাসিন্দা এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগ কোনো পর্যায়ের কোনো কমিটিতেই কখনো ছিলেন না।

এই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন যশোরের শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেবুব রহমান ম্যানসেল। পুলিশের তালিকাভুক্ত এ সন্ত্রাসীর নামে শহরের ষষ্ঠীতলাপাড়া ও রেলস্টেশন এলাকায় একটি বাহিনী রয়েছে। তার নামে হত্যা, ডাকাতিসহ ডজনখানেক মামলা হয়েছে। ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একবার ম্যানসেল গুলিবিদ্ধও হয়েছিলেন।

এছাড়া তিনি ৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদেও রয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ছাত্রদলের ওই কমিটির সভাপতি তানভীর আহমেদ জুয়েল।   ম্যানসেলের পিতা আলমাস ওই ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি।

এছাড়াও এই কমিটিতে থাকা সদস্য সামসুদ্দিন শিপন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে টালিখোলা এলাকার টুলু ও বাবু হত্যা মামলা। এই আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ঘোপ এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী সজলের বিরুদ্ধে পলাশ হত্যা মামলা এবং জেলা যুবলীগ যুগ্ম সম্পাদক কামাল হত্যা প্রচেষ্টা মামলা রয়েছে। কাজীপাড়া এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ ফেরদৌস হোসেন সমরাজও রয়েছেন এই কমিটিতে।

একইসঙ্গে ঘোষিত সদর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক মাজাহার ব্যাংকার রেজাউল হত্যা মামলা এবং গিয়াস উদ্দিন হত্যাপ্রচেষ্টা মামলার আসামি। আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুজ্জামান শহীদ কয়েক বছর আগে এক ট্রাক ভারতীয় চোরাচালান পণ্যসহ আটক হয়েছিলেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বালিয়া ভেকুটিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদেরকে হাতুড়িপেটার মামলা রয়েছে। বিভিন্ন ভাতা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে হতদরিদ্রদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও একবার হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যশোর যুবলীগের নবগঠিত কমিটির যুগ্ম আহবায়ক শীর্ষ সন্ত্রাসী ম্যানসেল।  ছবি: বাংলানিউজ

ইতোপূর্বে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়ার সময় এই কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান নান্নু ওরফে কাঠ নান্নু’র ছবি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। আরেক সদস্য ইমরান খান ওরফে ছাপপান বিহারীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মাদক মামলা রয়েছে। প্রায় এক মাস আগে ইয়াবাসহ আটক হওয়ার পর সপ্তাহখানেক আগে ছাপপান জেল থেকে বের হয়েছেন। আরো দুই সদস্য মফিজুর রহমান ওরফে টুরে মফিজ ও টিপু সুলতান মুক্তিযোদ্ধা হাশেম আলীর বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ মামলার আসামি।

কমিটিতে এ ধরণের সন্ত্রাসী ও বিতর্কিতরা ঠাঁই পাওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শহর যুবলীগ সভাপতি মোস্তফা কামাল পর্বত ও সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী ছাত্রদল নেতা ম্যানসেলসহ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও বিতর্কিতরা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন। আর বঞ্চিত হয়েছেন রাজপথে নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা।

কেন্দ্র থেকে এ ধরনের কমিটি চাপিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে সদর যুবলীগ সভাপতি ওয়াহেদুজ্জামান বাবলু বাংলানিউজকে বলেন, কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা ছিল ৩০ মার্চের মধ্যে উপজেলাগুলোর সম্মেলন করতে হবে। কিন্তু এর আগেই ২১ মার্চ তারিখ দিয়ে সদর ও শহর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে এভাবে কমিটি ঘোষণা করা অগণতান্ত্রিক ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি।

এই কমিটি বাতিল করে সম্মেলন করে পরবর্তী কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি।
 
যশোর জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বাংলানিউজকে বলেন,  কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা যুবলীগ উপজেলা শাখাগুলোর সম্মেলন সম্পন্নের প্রস্তুতি নিয়েছিল। ১ এপ্রিল অভয়নগর, ৫ এপ্রিল বাঘারপাড়া, এরপর সদর ও শহর যুবলীগের সম্মেলন সম্পন্নের কথা ছিল। সবমিলিয়ে ৮/৯ এপ্রিলের মধ্যেই এই সম্মেলন সম্পন্নের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে কেন্দ্র থেকে ২১ মার্চ ও ২৯ মার্চ স্বাক্ষর করে ৪টি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা কমিটির সঙ্গে কোনো ধরণের আলোচনা বা যোগাযোগ করা হয়নি।

কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যুবলীগের এসব কমিটি প্রায় ১৪ বছর ধরে রয়েছে। শাখাগুলোতে সম্মেলন করার জন্য বারবার নির্দেশনা দেয়া হলেও তা হয়নি। এ কারণে কেন্দ্র থেকে আহ্বায়ক কমিটি করে সম্মেলনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর এই কমিটি গঠনের জন্য নেত্রী মনোনীত জনপ্রতিনিধি এমপিদের পরামর্শ নেয়া হয়েছে। তাদের তালিকা অনুযায়ী কমিটি করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা,  এপ্রিল ১১, ২০১৭
ইউজি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।