ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

হঠাৎ বেপরোয়া ছাত্রলীগ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৭
হঠাৎ বেপরোয়া ছাত্রলীগ!

সিলেট: আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে সিলেটে হঠাৎ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ। সাম্প্রতিক কয়েকটি বিতর্কিত কর্মকাণ্ড যেনো নতুন করে হাওয়া দিতে শুরু করেছে ছাত্রলীগ বিরোধী সমালোচনার পালে।  আধিপত্য বিস্তার, হানাহানি, হামলা, খুন, রাহাজানি-যেনো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে সিলেট ছাত্রলীগে।

সম্প্রতি সেনা কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাতের মামলায় (৮ এপ্রিল) চার ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার ও একই দিনে পরিক্ষার হলে এক ছাত্রলীগ নেতার প্রবেশের চেষ্টায় নারী পুলিশের ওপর চড়াও, অত:পর ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা হওয়ার ঘটনায় সমালোচনার তীরে বিদ্ধ সিলেট ছাত্রলীগ।
 
এদিন আরেকটি ঘটনার জন্ম দেয় শাবিপ্রবি ছাত্রলীগ।

ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা করেও পিছপা হননি ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকারী কতিপয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। এ ঘটনার জের হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আহত সাংবাদিকদের প্রাণনাশের হুমকি দেন শাবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মৃণ্ময় দাশ ঝুটন। রোববার (৯ এপ্রিল) হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন সাংবাদিকরা।

গত বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে নগরীতে নিজ বাসার গলিতে ছাত্রলীগের ছুরিকাঘাতে আহত হন মেজর আব্দুল আজিজ। নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম তুষার গ্রুপের কতিপয় নেতাকর্মী ওই সেনা কর্মকর্তার গলায় ছুরিকাঘাত করেন। এ ঘটনায় মেজর আজিজ বাদী হয়ে সাত ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। এর প্রেক্ষিতে চার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিন নগরীর সুবিদবাজারে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরীর বাসায় হামলা ও ভাঙচুর চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এর আগে গত ৩১ মার্চ নগরীর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে মো. হাসান ওরফে ডন হাসান (৩০) নামে যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা রাব্বিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের বেপরোয়া কমিটি স্থগিত হয় কয়েকবার। বহিষ্কারও হন অনেকে। ২০১৭ সালের শুরুটা ভাল হলেও রাহুর গ্রাস থেকে মুক্ত হতে পারেনি সিলেট জেলা ছাত্রলীগ!  

এ ধরনের কর্মকাণ্ডে গত বছরের ২৫ মার্চ সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। নগরীর টিলাগড়ে নিজ দলের মধ্যে সংঘর্ষে কমিটি স্থগিত করা হয়। অবশ্য প্রায় নয় মাস পর ১১ ডিসেম্বর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ। একইভাবে গত বছরের ২২ জুলাই সিলেট কেন্দ্রীয় কারা ফটকে কারারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে বহিষ্কার হন ছাত্রলীগের ৮ নেতা।

শিক্ষা প্রকৌশলীকে হুমকি দেওয়ার জেরে ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি পংকজ পুরকায়স্থকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। এরপর নেতৃত্বে আসেন হিরণ মাহমুদ নিপু। পংকজের মতোই বেপরোয়া হয়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্ম দেন। একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর সিলেটে সিপিবি-বাসদের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের ওপর হামলা করে। এ ঘটনায় সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল করে কেন্দ্র।

সিলেটে ছাত্রলীগের এ ধরনের আচরণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম তার ফেসবুকে লিখেন- “ সিলেটে রাজনীতি হলো ব্যক্তি লীগ। ঐখানে বঙ্গবন্ধু কিংবা নেত্রীর আদর্শের জন্য লড়াইয়ের চর্চা খুব কম। ”

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্রশিবির নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের ওপর কালিমা লেপন করতে কৌশলে ষড়যন্ত্র করছে। তবে ছাত্রলীগের পদবীধারী বা নামধারী হয়ে যারা অপরাধ কর্মে জড়াচ্ছে, দল থেকে তাদের সমর্থন করি না। বরং তাদের আইনের আওতায় নিতে পুলিশকে সহযোগিতা করছে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৭
এনইউ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।