ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অন্যান্য দল

ভোল পাল্টে শিবিরের নতুন লুক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৭
ভোল পাল্টে শিবিরের নতুন লুক

ময়মনসিংহ : প্রশাসনের অভিযান ও জনরোষ থেকে নিজেদের রক্ষায় নতুন ছদ্মবেশ নিয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও নিবন্ধন বাতিল হওয়া রাজনৈতিক দল জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির। রাজনীতিতে টিকে থাকতেই তারা পরিবর্তন করেছে তাদের বাহ্যিক অবয়বও।

আর এজন্য যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঞ্জাবি ছেড়ে আধুনিক পোশাক ও স্টাইল করে রাখা দাড়ি কেটে নিজেদের নতুন আদলে উপস্থাপনের কৌশল নিয়েছে তারা।  

পরিচয় গোপন করে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে এমন বাসা-বাড়িকেই বেছে নিয়ে সরকার বিরোধী পরিকল্পনা প্রণয়নে কাজ করছে তারা।

একই সঙ্গে নানান কায়দায় দেশকে অস্থিতিশীল করে সরকার উৎখাতেরও গভীর ষড়যন্ত্র করছে। পুলিশি হানায় বারবার এ পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় নিত্য-নতুন কৌশল বেছে নিচ্ছে এ সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।

ফলে ময়মনসিংহ নগরীতে শিবিরের আস্তানা শনাক্ত করে পূর্ণ উদ্যমে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।

জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

শুক্রবার ( ৭ এপ্রিল) রাতে নগরীর জেলা পরিষদের স্কুলের সামনে থেকে গ্রেফতার দু’ শিবির কর্মী আব্দুল্লাহ রিমন (২০) ও রফিকুল ইসলাম (১৯) সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য দিয়েছে পুলিশকে।

আগে যেমন জামায়াত-শিবির কর্মীদের হঠাৎ রাজপথে ঝটিকা মিছিল করতে দেখা যেত, এখন তা আর নজরেই পড়ে না।

এমনকি আগে জেলা ও শহর শিবিরের কমিটির তালিকা প্রকাশ্য হলেও এখন পুরোপুরি গোপন রাখা হচ্ছে কমিটির তালিকা।

কখনো আত্মগোপনে থেকে দু-একটি ‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’ স্থানীয় মিডিয়া কর্মীদের ইমেইলে পাঠিয়ে নিজেদের অবস্থার জানান দিলেও উল্লেযোগ্য তৎপরতা একেবারেই উবে গেছে শিবিরের।  

সূত্র জানায়, এক সময় শিবির অধ্যুষিত বাঘমারা, ভাটিকাশর, ব্রাহ্মপল্লী, কলেজ রোড, সানকিপাড়াসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তিন শতাধিক মেস ছিল।

এসব মেসে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির করা শিক্ষার্থীরা থাকতেন।

এর মধ্যে নগরীর সবচেয়ে বড় ঘাঁটি ছিল ব্রাক্ষপল্লী রোড এলাকার তিন তলা ভবনের একটি মেস। সেখানে চলতো শহর শাখার কার্যক্রম। শিবিরের সাথী, কর্মীসহ পদধারী নেতারা থাকতেন সেই মেসে।

কিন্তু মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম শুরু হবার পর পুলিশি অভিযান ও স্থানীয় জনতার রোষানলে পড়ে এসব এলাকা থেকে পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হয় তারা।  

দলটির অনেক নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়ে হয় কারাগারে, নয়তো আত্মগোপনে রয়েছেন।

নিজেদের জন্য এমন কঠিন বাস্তবতায় চিরচেনা বেশভূষায় পরিবর্তন এনেছে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা- এমন তথ্য রয়েছে পুলিশের হাতে। ফলে পাল্টা কৌশল নিয়েই মাঠে নেমেছে পুলিশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের পোশাক ও চেহারায় বাহ্যিক পরিবর্তন এনেছে শিবির।

পাঞ্জাবি-পায়জামার পরিবর্তে এখন হাল ফ্যাশনের জিন্স প্যান্ট আর টি-শার্টে নিজেদের আড়াল করার বেশ ভূষা ধারণ করেছে ধর্মাশ্রয়ী এ সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।

পুলিশ জানায়, নাশকতার পাশাপাশি জিন্স-টি শার্ট পরিহিত শিবির কর্মীরা দলে দলে ভাগ হয়ে সরকার বিরোধী নেতিবাচক প্রচারণার ভোঁতা হাতিয়ার লিফলেট বিতরণ করে জনমত গড়তে উঠেপড়ে লেগেছে।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) রাতে নগরীর জেলা পরিষদের স্কুলের সামনে থেকে এমন ধাঁচের একটি লিফলেট বিতরণের সময় দু’শিবির কর্মীকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। তারাও পুলিশের কাছে নিজেদের এ টার্গেটের কথা স্বীকার করে।

কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে আরো জানান, শিবিরের পুরনো আস্তানাগুলোর কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০টি স্পটে রাতে অভিযান চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৭
এমএএএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।