ঢাকা: আদিবাসীদের স্বীকৃতি বিষয়ে সরকার ভ্রান্ত পথে হাঁটছে অভিযোগ করে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, মূর্খের (সরকার) সঙ্গে তর্ক করে লাভ নেই।
আদিবাসীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘ঘাঁড়ে ধরে অধিকার আদায় করে নিতে হয়।
বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত আদিবাসী জনপ্রতিনিধিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এবং জাতীয় আদিবাসী পরিষদ।
ইনু আরও বলেন, ‘যুগে যুগে নিজেদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করতে গিয়ে অনেককেই দেশদ্রোহী হিসেবে আখ্যায়িত হতে হয়েছে। এ ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। নিজেদের দাবির কথা বলতে গেলেই দেশদ্রোহীর গন্ধ খোঁজা হয়। ‘
তিনি দাবি করেন, বাঙালিরাও অনেক ক্ষেত্রে অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারাও নিজেদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। সে কারণে আদিবাসীদের লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে অধিকার আদায় করে নিতে হবে।
এ সময় তিনি আদিবাসীদের স্বীকৃতি, আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণে জাতীয় কমিশন গঠন, সমতলে আদিবসীদের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিসহ মোট ছয়টি বিষয়ে লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সমতলের আদিবাসীরা দিন দিন বিতাড়িত হচ্ছে। তারা নিজের জমির ওপর অধিকার হারাচ্ছে। সরকার কিছু প্রশ্নবোধক পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু কেন নিচ্ছে আমরা তা বুঝতে পারি না। ’
ড. মিজান আরও বলেন, ‘আমার ধারণা, প্রধানমন্ত্রীকে ভুল পরামর্শ দিয়ে ভুল পথে পরিচালিত করা হচ্ছে। যারা এটা করছেন তাদের উদ্দেশ্যে আমরা বলতে চাই আজ থেকে মানবাধিকার কমিশন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল এবং আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীকে সঠিক বিষয় অবহিত করা হলে তিনি সঠিকটাই গ্রহণ করবেন। ’
অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত বলেন, ‘আমরা আদিবাসীদের নিয়ে অসভ্য অবস্থান নিচ্ছি। দিন বদলের সনদ মানে কি আদিবাসীদের পরিচয় পরিবর্তন করা? ২৪ লাখ আদিবাসীর সঙ্গে রাষ্ট্র পরিষ্কারভাবে বেঈমানি করছে। রাষ্ট্র একদিকে যখন জাতিসংঘ সনদসহ বিভিন্ন সনদে স্বাক্ষর করছে, ঠিক একই সঙ্গে দেশে এসে আদিবাসীদের প্রতারণা করছে। ’
আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বাীকৃতি ছাড়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত ভিশন-২০২১ (অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল উদার কল্যাণকর রাষট্র বিনির্মাণ) আরও ১০০ বছরেও সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন ড. বারাকাত।
তিনি বলেন, ‘সরকার নিজেরা নিজেদের সঙ্গে রাজনীতি করছে। আর এ কারণেই আন্দোলনের বিকল্প নেই। ’
নাগরিক হিসেবে সবাই বাংলাদেশী হতে পারে, কিন্তু জাতি হিসেবে সবাই বাঙালি হতে পারে না দাবি করে তিনি বলেন, ৭৬ সাল থেকে ডেমোগ্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং শুরু হয়েছে। এ কারণে ৫১ সাল আদিবাসীরা পাহাড়ে যেখানে ৯১ শতাংশ ছিল, ৬০ বছরে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৬ শতাংশে। অপরদিকে বাঙালিরা ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫১ শতাংশে হয়েছে।
মানুয়ের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহিন আনামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি অনিল মারান্ডি, রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ১১৬ জন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এবং আর ৪ জন চেয়ারম্যানকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১১