ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

ইসি উদ্যোগ নিলে সব দলকে সংলাপে এনে ঐক্যমত্য সম্ভব: সৈয়দ আশরাফ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১১
ইসি উদ্যোগ নিলে সব দলকে সংলাপে এনে ঐক্যমত্য সম্ভব: সৈয়দ আশরাফ

ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, নির্বাচন কমিশন উদ্যোগ নিলে সব দলকে সংলাপে এনে ঐক্যমত্য সম্ভব।

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন নির্বাচন চাই যাতে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে।

সেই নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। এজন্য সবার মতামত নেওয়া প্রয়োজন, যাতে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে আমরাও ঐক্যে পৌঁছাতে পারি। ’ 

রোববার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নির্ধারিত সংলাপ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

সংলাপে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন। সকাল সোয়া এগারোটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত ইসির সম্মেলন কক্ষে এ মত বিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা, দুই নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ সাদিকসহ বুয়েট ও বিএমটিএফ’র প্রতিনিধিরা সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারসহ পাঁচটি প্রস্তাবিত আইন নিয়ে মত বিনিময় করেন তারা।

সংলাপে সৈয়দ আশরাফ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এবং নির্বাচন কমিশনকে অধিক শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ইসি প্রস্তাবিত নতুন আইন এবং বিধিমালা সংস্কার ও ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার সম্পর্কে অনানুষ্ঠানিক বিরোধ নেই আওয়ামী লীগের। তবে কেন্দ্রিয় কমিটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মতামত জানাবে

তিনি বলেন, ‘আওয়ামীলীগ একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল হিসেবে বর্তমানে ক্ষমতায় আছে। তাই এ ধরনের আইন তৈরি বা বিধি সংস্কারের কাজ তাকেই করে দিতে হবে। এজন্য বিষয়গুলো নিয়ে দলে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। ’

তিনি আরো বলেন, ‘ আজ আমরা নির্বাচন কমিশনে এসেছি বিষয়গুলো নিয়ে কমিশনের পরিকল্পনা বিস্তারিত জানতে। এরপর দলের ছোট ছোট প্রতিনিধি দল এক এক দিন এক এক বিষয়ে আলোচনা করবে। এরপর দলের কেন্দ্রিয় কমিটিতে আলোচনার মাধ্যমে চুড়ান্ত করা হবে। ’

সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘কেবল আওযামী লীগই নয়, কমিশনের উচিত সকল রাজনৈতিক দলের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। ’

তিনি বর্তমান কমিশনের কাছে ২০০৮ সালের সর্বজন গৃহিত ও সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার চান।

তিনি বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য আগামী সংসদ নির্বাচন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনী আইনের সংস্কার আনতে হবে। ’

বিরোধী দলকে ইঙ্গিত করে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জানান, নির্বাচন কমিশন সচেষ্ট হলে সবাইকে সংলাপে আনতে পারবে।

সৈয়দ আশরাফ আরো বলেন, ‘আমরা ইসির প্রস্তাবের বিষয়ে উপযুক্ত ব্যাখ্যাগুলো শুনেছি। এসব নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনা করে মতামত চূড়ান্ত করা হবে। ’

এ বছরের শেষ নাগাদ সব দলের সুপারিশ ইসির পর্যালোচনা করে প্রস্তাবগুলো সরকারের কাছে দিতে চান বলে উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, ‘এ জন্য আওয়ামী লীগের মতামত প্রদানের একটি টাইম ফ্রেম থাকা দরকার। ’

এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রতিনিধিদলের সদস্য তোফায়েল আহমেদ ইসিকে জানান, এ বছরের মধ্যে এবং এ কমিশনের আমলেই বিষয়টিন সমাধান হবে।

এর আগে সিইসি এটিএম শামসুল হুদা স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলকে জানান, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক জটিলতা এড়াতে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

তিনি বলেন, ‘সংবিধানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ইসি যা ভালো মনে করে তাই করতে পারে। আমরা তাই করছি। ’

তিনি বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আমরা যা ভালো মনে করছি সাংবিধানিক ক্ষমতা বলেই আমরা তা করতে চাচ্ছি। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া জাস্ট কার্টেসি (সৌজন্যতাবশত)। তারা আমাদের পার্টনার । তাই তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছি। আমরা করতে চ্ইালে করতে পারবো, বাঁধা দেওয়ার কিছু নেই। ’

সদস্য প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা ও নারায়ণঞ্জ সিটি করপোরেশনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ইভিএম ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি

সংলাপে ইভিএম প্রদর্শনী দেখে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত নতুন প্রযুক্তিতে স্বাগত জানান।

তিনি এই প্রযুক্তিকে স্বাগতম জানিয়ে বলেন, ‘আই ওয়েলকাম ইট ফ্রম মাই হোল হার্টেড। এটি সর্বোত্তম প্রযুক্তি। ইভিএম বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশেরই একটি প্রতিচ্ছবি। ’

নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ জালভোট দেওয়া, কেন্দ্র দখল রোধে করণীয় ঠিক করার সুপারিশ করেন দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

এ সময় ইভিএমের প্রদর্শনীতে অংশ নেন আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

এ সময় দলের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ইসির কাছে জানতে চান বর্তমান বিশ্বে কোন কোন দেশে এ পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হয়।

জবাবে বুয়েট প্রতিনিধি অধ্যাপক লুৎফুল কবীর বলেন, ‘সার্ক অঞ্চলে এ ধরনের মেশিনই ব্যবহুত হয়। তবে ইভিএম এবং ই-ভোটিং এক নয়। উন্নত দেশে সাধারনত জটিল প্রক্রিয়ার ই-ভোটিং প্রচলিত আছে। ’

জনগন দ্রুত প্রযুক্তি আয়ত্বে আনতে পারে

সৈয়দ আশরাফ বলেন, বাংলাদেশের জনগন দ্রুত প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এর জলন্ত উদাহরন মোবাইল ফোনের দ্রত জনপ্রিয়তা পাওয়া। ইভিএমের বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘যে যাই বলুক না কেন আমাদের জনগণ খুব দ্রুত প্রযুক্তিকে আয়ত্তে আনতে পারে এবং নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে। তবে এজন্য প্রযুক্তি পরিচিতির (এডুকেশনের) প্রয়োজন রয়েছে। জাতিকে তা পরিচিত করে সচেতন (এডুকেটেড) করতে হবে। ’

তিনি  বলেন, ‘ আধুনিক এ পদ্ধতি নিয়ে জনগণকে সচেতন (এডুকেটেড) করতে হবে। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে এ বিষয়ে প্রভাবিত (পারস্যু) করতে হবে। ’

চাই সব বিষয়ে ঐক্যমত

সৈয়দ আশরাফ সংলাপে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইসির সব ধরনের প্রস্তাব আইনি রূপ না দেওয়া পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধিরা ইসির সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। ’

ইসির প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। ২০০৮ সালের মতো সর্বজন গ্রহণযোগ্য ও সবার অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচনও ইসির কাছে উপহার চাই আমরা। আমাদের মূল্য লক্ষ্য, সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। ’

সবার মতামতের ভিত্তিতে আইন সংস্কারের পরামর্শ দেন সৈয়দ আশরাফ।

এসময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, বিরোধী দলসহ কয়েকটি দল সংলাপে আসেনি। কয়েকদফা উদ্যোগ নেওয়ার পরও এ বিষয়ে তাদের সাড়া নেই।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক বলেন, ‘আমরা একা করলে তো হবে না। অন্য দলগুলোরও মতামত নিতে হবে।   আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস- ইসি আরো সচেষ্ট (আন্তরিক) হলে সবাইকে আলোচনায় নিয়ে আসতে পারবেন। গতবারও তা পেরেছে ইসি। ’

বাংলাদেশ সময় ১৭৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad