ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

বঙ্গবীরকে পাচ্ছে না বিএনপি

আসাদ জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১১
বঙ্গবীরকে পাচ্ছে না বিএনপি

ঢাকা: ক্ষমতাসীন মহাজোটকে মোকাবেলায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমকে পাশে পাচ্ছে না চার দলীয় জোট নেতা বিএনপি।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক বঙ্গবীর তার পুরোনো দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার ব্যাপারে এখনো নীতিগত সিদ্ধান্ত না নিলেও বিএনপির সঙ্গে ঐক্য না গড়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।



দলীয় সূত্রমতে, আদর্শগত দ্বন্দ্ব ও স্পষ্টবাদিতার কারণে জামায়াতের আশ্রয় হয়ে ওঠা বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক বা নির্বাচনী ঐক্য কোনোটিই গড়ছেন না বঙ্গবীর।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাদের সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশকে আমি আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে ভাগ করি না। রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে আমার নিজস্ব একটি মত ও পথ আছে। সেটির সঙ্গে কারও মত ও পথ মিলছে না। ’

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১৯ জুলাই খালেদা জিয়ার পক্ষে আন্দোলনের ঐক্য গড়ার ব্যাপারে আলোচনায় বসার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব নিয়ে বঙ্গবীরের মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসায় যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাদেক হোসেন খোকা ও আবদুল্লাহ আল নোমান। এর আগেও অনানুষ্ঠানিক প্রস্তাব নিয়ে তার বাসায় যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দলীয় সূত্রমতে, এ কারণেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হন বিনয়ী প্রকৃতির বঙ্গবীর। ২৩ জুলাই গুলশান ২ নম্বর সেক্টরের ৭৯ নম্বর রোডের ১ হোল্ডিংয়ে খালেদা জিয়ার বাসায় আলোচনায় বসেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের এই অপরাহ্ন বেলায় আজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনায় বার বার জামায়াত প্রসঙ্গ টেনে আনেন। জামায়াতের সম্পৃক্ততার কারণে চারদলীয় জোটের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য বা নির্বাচনী ঐক্য গড়ার ব্যাপারে তার অসুবিধার কথা তুলে ধরেন।

এদিন সংবাদ সম্মেলনেও বিষয়টি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধীতাকারী জামায়াতকে নেতৃত্ব দেওয়ায় বিএনপির সঙ্গে কাজ করা আমার জন্য অসুবিধারই বটে। ’

বিএনপির দলীয় সূত্রমতে, ২৩ জুলাই খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বঙ্গবীর যে বিষয়গুলো সদয় বিবেচনার জন্য খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছিলেন সেগুলো নিয়ে দলের মধ্যে প্রচ- অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

ওইদিনের আলোচনায় ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়াকে জন্মদিন পালন না করার ব্যাপারে অনুরোধ জানিয়েছিলেন বঙ্গবীর। এ অনুরোধে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় বিএনপির মধ্যে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘যে দিন বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিবস ওইদিন কেউ জন্মদিন পালন করতে পারবে না। এই শর্ত কখনো ঐক্যের লক্ষণ হতে পারে না। ’

এদিকে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম দিকে বঙ্গবীরকে জোটে ভিড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের শক্তিতে জোট ভারি করার চিন্তা করেছিল বিএনপি। পরে জামায়াত প্রশ্নে বঙ্গবীর আপত্তি তুললে দীর্ঘ মেয়াদী রাজনৈতিক লাভালাভের কথা চিন্তা করে বঙ্গবীরের আশা ছেড়ে দেয় বিএনপি।

বিএনপির ওই নেতা বলেন, ‘বঙ্গবীর বলেন আর আসম আব্দুর রব বলেন, এরা সবাই আওয়ামী লীগেরই লোক। ওখানে সুবিধা করতে না পারায় জোটে আসতে চায়। আবার ভালো সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগে চলে যাবে। কিন্তু জামায়াত কখনো বিএনপিকে ছেড়ে আওয়ামী লীগে যাবে না। সুতরাং বঙ্গবীরের জন্য জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ম তৈরি করা বিএনপির জন্য আত্মঘাতী হবে। ’

সূত্রমতে, জামায়াতের ব্যাপারে বিএনপির এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গীর কারণেই বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটে না আসার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী।

এদিকে ৪ আগস্ট রাজনীতিকদের সম্মানে আয়োজিত খালেদা জিয়ার ইফতার মাহফিলে গেলেও মূল মঞ্চে ওঠেননি বঙ্গবীর। বসেননি খালেদা জিয়ার পাশে। জামায়াত নেতাদের ডানে বানে রেখেই ইফতার মাহফিলে শোভা বর্ধন করেন খালেদা জিয়া।

এর পর ৬ আগস্ট রাজনীতিকদের সম্মানে আয়োজিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইফতার মাহফিলে যোগ দেন বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী।

৭ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘জোট- মহাজোট কোনোটি দিয়েই দেশের সংকট উত্তরণ সম্ভব নয়। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।