ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

ইফতারে খালেদার মহা ঐক্যজোট গঠনের মহড়া!

আসাদ জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১১
ইফতারে খালেদার মহা ঐক্যজোট গঠনের মহড়া!

ঢাকা: আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে মোকাবেলায় মহা ঐক্যজোট গঠনের চূড়ান্ত মহড়ায় অনেকটাই এগিয়ে গেল বিএনপি।

চারদলীয় জোটের নেতা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আমন্ত্রণে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, লেবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান ড. কর্নেল অলি আহমেদ বীর বিক্রম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আসম আব্দুর রব ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহম্মেদ ইফতার মাহফিলে শরিক হন।



জোট সম্প্রসারণের এই সন্ধিক্ষণে জোট ও মহাজোটের বাইরে থাকা এ সব জাতীয় ব্যক্তিত্বদের ইফতার মাহফিলে হাজির করতে পেরে যারপরনাই খুশি বিএনপি প্রধান ও দলটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।

গত মাস থেকে জোট সম্প্রসারণে বিএনপির নেওয়া উদ্যোগ বৃহস্পতিবার খালেদার জিয়ার ইফতার মাহফিলে অনেকটাই যেন সফল হয়েছে- এমনটাই ভাবছে বিএনপির বেশির ভাগ নেতা।
 
জামায়াত সম্পৃক্ততার কারণে বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, আসম আব্দুর রব ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে চারদলীয় জোটে ভেড়াতে হিমসিম খাচ্ছিল বিএনপি। এ কারণেই ১৩ জুলাই গণঅনশনে সমর্থন দিলেও অনশন চত্ত্বরে আসেননি তারা।

এ কারণেই খালেদা জিয়ার ডাকা বৃহস্পতিবারের ইফতার মাহফিলে জাতীয় এ তিন নেতার আসা না আসার বিষয়টি ছিল বাজি ধরার মতো।

কিন্তু বিকেল ৬ টা বাজার আগেই আসম আব্দুর রব খালেদা ইফতার মাহফিলে শরিক হন। সোয়া ৬ টার দিকে আসেন ডা. বি চৌধুরী, এর কিছুক্ষণ পরেই হাজির হন বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী।

তবে এত কিছুর পরও একটি বিষয় নজর এড়ায়নি রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের। বিষয়টি বিএনপিকেও কিছুটা ভাবিয়ে তুলেছে বৈকি।

ইফতার মাহফিলে মূল মঞ্চে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাম পাশে বি চৌধুরী, তার বামে কর্নেল অলি, তারও বামে কাজী জাফর আহম্মেদ বসেছিলেন। আর খালেদা জিয়ার ডান পাশে বসেছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার ডানে বসেছিলেন পর্যায়ক্রমে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মাওলানা মকবুল আহমাদ, খেলাফত মজলিশের আমীল মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাকসহ নামসর্বস্ব দলের প্রধানরা।

কিন্তু সবার আগে এসেও আ স ম আব্দুর রব মূল মঞ্চে ওঠেননি। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য নির্ধারিত টেবিলেই বসেছিলেন তিনি।

ইফতার শেষে সাংবাদিকদের আসম আব্দুর রব বলেন, ‘এটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। রাজনৈতিক কোনো প্রোগ্রাম নয়। সামাজিকতার খাতিরেই এখানে এসেছি। রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার আলোচনায় বসতে নয়। ’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সময়  ও দেশের পরিস্থিতিই বলে দেবে কোন জোটে যাব। তবে এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারি অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে  কেউ না দাঁড়ালেও আমি একাই দাঁড়িয়ে যাব। ’

ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকবেন কিনা? এমন এক প্রশ্নের জবাবে আ স ম রব  পাল্টা প্রশ্ন করে বসেন সাংবাদিকদের। তিনি বলেন, আমি কি রাজাকারদের পক্ষে ছিলাম। আমি কি গোলাম আযমের ছোট ভাই। ’

এদিকে বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীও মূল মঞ্চে না উঠে দর্শক সাড়িতে বসে ইফতার করেন।

ইফতার শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। এখানে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে আসিনি। ’

রাজনৈতিক ঐক্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দল হিসেবে ক্ষুদ্র  ও মানুষ হিসেবে নগণ্য হলেও দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আমার দল ও আমাকে স্মরণ করেছে-এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আজ বিএনপির ইফতার মাহফিলে এসেছি। সামনে আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিলেও যাব। এর পর কোন দলের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য হবে তা সময় মতো জানতে পারবেন।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহম্মেদ বলেন, ‘ইফতার মাহফিল রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি নয়। জোট মহাজোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। আর তার কি সিদ্ধান্ত সেটি  আপনারাও জানেন। ’

এদিকে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। রাজনৈতিক কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলা এখানে উচিত নয়। ’

তবে নেতারা যাই বলেন, সংশ্লিষ্ট অনেকেরই মতে এটি মহাজোটের বিরুদ্ধে মহ ঐক্যজোট গড়ার একটি মহড়াই হয়ে গেলো।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।