ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

বিএনপি-আওয়ামী লীগ মারমুখি অবস্থানে

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১১
বিএনপি-আওয়ামী লীগ মারমুখি অবস্থানে

ঢাকা: সরকার ও বিরোধী দলের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, এ প্রশ্ন এখন সবার  মুখে। দুই দলের মারমুখী অবস্থানের কারণে দেশে আবারও সঙ্কট আসন্ন কি-না এমন প্রশ্নও অনেকের।

তবে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, এদেশের জনগণ কোনো সঙ্কট চায় না। সেটা জাতির, দেশের ও রাজনৈতিক নেতাদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না।

দুই রাজনৈতিক দলের বিপরীতমুখি অবস্থানের কারণে দেশে সংঘাত শুরু হয়ে গেছে, এমনটাই মনে করছেন দেশের বোদ্ধা ও রাজনীতবিদসহ সর্বস্তরের মানুষ। এই সংঘাত শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে শেষ হবে, তা এই মুহূর্তে বলা মুসকিল বলেও অনেকে মন্তব্য করছেন। পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, অনেকেই আশঙ্কা করছেন, দুই দলের কারণে দেশে আবারও খারাপ সময় আসন্ন।

রাজনীতিকসহ অনেকেই মনে করেন- দুইটি বড় রাজনৈতিক দলের খামখেয়ালির কারণে বড় ধরনের সংঘাত হতে পারে।  

গত ১৩ জুলাই গণঅনশন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ঈদের পর গণআন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন। এ কারণেই সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আরও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

আদালত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও আরাফাত রহমানের ৬ বছরের সাজার রায় ঘোষণার পর বিএনপি ও দলের নেতা কর্মীরা সরকারের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। গত ৬ জুলাই হরতাল চলাকালে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর হামলা ও সম্প্রতি হাইকোর্টের ঘটনাসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের দূরত্ব ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

এদিকে সরকারের একতরফাভাবে সংবিধান সংশোধন করে ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার চিন্তাভাবনা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করায় বিরোধী শিবিরে প্রতিবাদের ঝড় নেমে আসে। একতরফাভাবে সংবিধান সংশোধন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের এ বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি সাধারণ মানুষও।

সরকার ও বিরোধী দলের বিপরীতমুখি অবস্থানের কারণে দেশে আবারও সঙ্কটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, এমনটাই মনে করছেন রাজনীতিক, আইনজীবী ,অর্থনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও সেনা কর্মকর্তাসহ সাধারণ মানুষ।

এ বিষয়ে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেন, ‘দেশের যে কোনো পরিস্থিতির জন্য দুই দলই দায়ী থাকবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি দেশের রাজনীতিকে ধ্বংস করছে। দেশের এই সংঘাতময় পরিস্থিতি দেশকে কোন দিকে নিয়ে যাবে তা অর্থমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যেই পরিস্কার হয়ে গেছে। ’

তিনি বলেন, ‘দেশে এখন কী চলছে, জনগণের জন্য কিছু একটা করার জন্য যতটা না তার চেয়ে বেশি এক অপরকে ঘায়েল করার জন্য ভর্ৎসনা ও কুৎসা। ’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই সংঘাত দেশকে কোন দিকে নিয়ে যাবে সরকারই ভালো বলতে পারবে। ’
 
তিনি বলেন, ‘দেশের এমন পরিস্থিতি কারো জন্য মঙ্গলজনক নয়। এ অবস্থা থেকে দেশকে বাঁচাতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। ’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকার দেশে গণতন্ত্রের কবর রচনা করছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে দিকে নিয়ে যাচ্ছে, এর জবাব জনগণ দেবে। ’

তিনি বলেন, ‘সরকার গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারের তোয়াক্কা করছে না। তাই সরকারকে গণআন্দোলনের মাধ্যেমে উৎখাত করতে হবে। ’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, `সরকার দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা সবাই দেখছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি দেশকে রক্ষা করবে। সেই সঙ্গে জনগণের অধিকার আদায় করবে। ’

জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবি এম রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা এখনও বলা যায় না। তবে দুই দলের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। আমি মনে করি রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান খুঁজে বের করবে।   তবে এ পরিস্থিতি আরও বৃদ্ধি পেলে দেশ কোন দিকে যাবে তা জনগণই ভালো বলতে পারবে। ’

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহমদ আল কবির বাংলানিউজকে বলেন, ‘যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা সবাইকেই বিচলিত ও শঙ্কিত করে। তবে এ থেকে পরিত্রাণের পথ আলাচনার মাধ্যেমে বের করা উচিত সরকার ও বিরোধী দলের। ’

তিনি দেশের উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপিকে আলোচনার মাধ্যেমে সমস্যার সমাধান করা উচিত। কারণ দেশের জনগণ এ দল দুটির দিকে তাকিয়ে আছে। ’

অধ্যাক্ষ সেলিম ভুঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশ একটি চরম অরজকতার দিকে যাচ্ছে। যদি দুই দল রাজনৈতিক সমাধানে না পৌঁছতে পারে, তা হলে ২০০৬ সালের পরবর্তী পরিস্থিতির আগমন ঘটতে পারে এমনটাই সাধারণ মানুষকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।