ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

তারেক-কোকোকে নিয়ে ভীষণ চাপে বিএনপি

আসাদ জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১১
তারেক-কোকোকে নিয়ে ভীষণ চাপে বিএনপি

ঢাকা: তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোকে নিয়ে চাপে আছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

এ কারণেই সরকারবিরোধী আন্দোলন জমাতে পারছে না বলে মনে করছেন দলের অনেকেই।

চাপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দলীয় সূত্রও।

সূত্রমতে, তারেক ও কোকোকে নিয়ে চাপে থাকার কারণেই আন্দোলন সংগ্রামের রূপরেখা প্রণয়নে হিমসিম খাচ্ছে বিএনপি। তাই বারবার কঠোর আন্দোলন ও লাগাতার হরতালের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরও বিএনপিকে সাফাই গেয়ে বলতে হচ্ছে- ‘আওয়ামী লীগের মতো হরতাল-নৈরাজ্য নয়, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাসী। ’
 
তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোকে বিভিন্ন মামলায় আসামি করা, অর্থ পাচার মামলায় কোকোর শাস্তি হওয়া, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে তারেক রহমানকে অন্তর্ভুক্ত করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও তাই দুর্বার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরিবর্তে রক্ষণাত্মক কৌশলেই এগুতে হচ্ছে বিএনপিকে।

একের পর এক ইস্যু হাতে পেলেও সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি না দিয়ে বরং ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করতে বাধ্য হচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে দেওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতিক্রিয়াতেও তারেক ও কোকো নিয়ে চাপের বিষয়টি ফুটে ওঠে।

তিনি বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রাম বাধাগ্রস্ত করতেই তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপিকে চাপে রাখা হচ্ছে। এ চাপ কাটিয়ে উঠে অবশ্যই আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে বিএনপি। ’

এদিকে চলমান আন্দোলন কর্মসূচি বিশ্লেষণেও কড়া আন্দোলনের আওয়াজ দেওয়া বিএনপির হঠাৎ নমনীয় হওয়ার প্রমাণ মিলেছে।

গত ৩১ মে সংবিধান সংশোধন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি কড়া মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া।

ওই দিন রাতেই স্থায়ী কমিটির সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন তিনি।

ওই বৈঠক শেষে জামায়াতসহ চারদলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে মিলিত হন খালেদা জিয়া। তড়িঘড়ি ৫ জুন দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

এরপর এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১২ জুন টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতাল পালন করে বিএনপি।

কিন্তু ২৩ জুন মানি লন্ডারিং মামলায় ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালত আরাফাত রহমান কোকোকে ৬ বছরের কারাদ- ও ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা জরিমানা করলে রাতারাতি বদলে যায় দৃশ্যপট।

কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসেন এক সময়ের আপোসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া।

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির অন্যতম রাজনৈতিক মিত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের কারাবন্দিত্বের ১ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২৯ জুনের মধ্যে একটি হরতাল দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে জামায়াত। কিন্তু ২৩ জুনের পর বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচিতে রাজি হয়নি বিএনপি।

এরপর গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার পরও নীরব থাকে বিএনপি। ওই দিন এক সংবাদ সম্মেলনে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত হন বিএনপি প্রধান।

এরপর ৬ জুলাই টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন শেষে কঠোর আন্দোলনের অবস্থান থেকে ইউটার্ন নেন খালেদা জিয়া।

গত ১৩ জুলাই গণঅনশন থেকে তিনি ঘোষণা দেন, হরতাল কর্মসূচি নয়। শান্তিপর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারের পতন ত্বরান্বিত করবে তার দল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর শাস্তি ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হমালা মামলায় তারেক রহমানকে আসামি করার পরই মূলত কঠোর আন্দোলনের চিন্তা থেকে সরে আসেন খালেদা জিয়া।

কঠোর আন্দোলনে গিয়ে ছেলে তারেক ও কোকোকে আর সরকারের রোষানলে পোড়াতে চান না তিনি।

প্রসঙ্গত, ওয়ান-ইলেভেনের সময় দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলায় নতুন করে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে। এসব মামলায় জড়ানো হচ্ছে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে।

এরই মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ৮ আগস্টের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে তাকে।

এছাড়া আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলার দ-াদেশ কার্যকর করতে ঢাকা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে তারেক ও কোকোর বিরুদ্ধে সরকারি দলের পক্ষ থেকে একের পর এক মামলা দিয়ে বিএনপিকে চাপে রাখার নীতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলেই মনে করছেন রাজনীতি বোদ্ধারা।

বাংলাদেশ সময়: ১২০২ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।