ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

‘জনসমর্থন বাড়ছে বিএনপির’

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১১
‘জনসমর্থন বাড়ছে বিএনপির’

ঢাকা: হারিয়ে ফেলা জনসমর্থন ফিরে পাচ্ছে দলীয় কোন্দলে নাস্তানাবুদ হতে থাকা বিএনপি।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ৩৩ শতাংশ ভোট পাওয়া দলটির ভোট উপ-নির্বাচন, পৌর নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে গড়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ শতাংশে।

একই সময়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪৮ শতাংশ ভোট পাওয়া আওয়ামী লীগের ভোট নেমে এসেছে ৩৭ শতাংশে।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা অবশ্য জনপ্রিয়তা বাড়ার এই কৃতিত্ব মোটেই বিএনপিকে দিতে চাইছেন না।

তারা মনে করছেন, ক্ষমতাসীনদের স্বেচ্ছাচারীতা ও গলদপূর্ণ রাজনৈতিক কৌশল বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির ভিত গড়ে দিয়েছে।

তাই এক-এগারোর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অস্তিত্ব সংকটে পড়া দলটির নেতৃত্বের অস্থিরতা না কাটলেও জনমতে বড় ধরণের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বাংলানিউজের বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক-এগারোর প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীনদের দমননীতি সদ্য ক্ষমতা ছাড়া বিএনপিকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এ সময় বিএনপিতে মাইনাস খালেদা ফর্মুলা সামনে রেখে সংস্কার তৎপরতা শুরু হলে আরো খেই হারিয়ে ফেলে তারা।

সর্বপরি দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকায় টান পড়ে জনসমর্থনেও।

তাই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির শিকার হয় একাধিক দফায় সরকার গঠনকারী বিএনপি। মাত্র দশ শতাংশ আসনে নির্বাচিত হয় তারা।

পরে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হবিগঞ্জ-২ আসনের উপ-নির্বাচনে শেখ সুজাত মিয়ার নিরঙ্কুশ জয় তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ারই ইঙ্গিত দেয়।

এছাড়া সারা দেশের পৌরসভা নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকারি দল মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে বিএনপি মনোনীতিদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বিএনপির হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পাওয়ারই নমুনা ফুটিয়ে তোলে।

বর্তমানে সংসদে না থাকলেও ৩১ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে তাদের। আর সংরক্ষিত আসনের ৫ জনসহ ওই সংখ্যা ৩৬।
 
অথচো এর মাত্র এক টার্ম আগে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই বিএনপিই ১৭৮টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।

তাই পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি তাদের জনপ্রিয়তায় ধস নামার বিষয়টিই স্পষ্ট করে তোলে।

কিন্তু গত আড়াই বছরের ব্যবধানে সেই অবস্থা অনেকটাই কেটে গেছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। উপনির্বাচন এবং পৌর ও ইউপি নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তারা বলছেন, জনপ্রিয়তা ফিরে পাচ্ছে বিএনপি। আগামী নির্বাচনে হয়তো আবারো নিরঙ্কুশ জয়ের নজির গড়বে প্রধান বিরোধী দল।
 
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘উপ-নির্বাচন, পৌর নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নিবার্চনের ফলাফলেই প্রমাণ হয়েছে যে বিএনপির জনসমর্থন বাড়ছে। ’

তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৩৩ শতাংশ ও আওয়ামী লীগ ৪৮ শতাংশ ভোট পায়। কিন্তু জনপ্রিয়তার সেই হিসেব এখন আর খাটবে না। ’

তিনি বলেন, বিশিষ্ট জনদের পুলিশ ও মিথ্যা মামলা দিয়ে অসম্মান-হয়রানি, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসী কর্মকা-, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ইত্যাদি কারণে ক্ষমতাসীদের জনপ্রিয়তা যেমন কমেছে, তেমনি বেড়েছে বিরোধী দলের। তাই উপ-নির্বাাচন, পৌর নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিরোধী দল বিএনপি ভোট পেয়েছে ৫২ শতাংশ। আর সরকারি দল আওয়ামী লীগ পেয়েছে ৩৭ শতাংশ ভোট। ’

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সমন্বয়ক অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিরোধী দলের জনসর্মথন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এ কৃতিত্ব বিএনপির নয়। সরকারের ব্যর্থতার কারণেই বিএনপির প্রতি জনসর্মথন বাড়ছে। ’

তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজারে ধস, দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি, আইন-শৃংখলার অবনতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল, বিরোধী দলের মতামত ছাড়াই এককভাবে সংবিধান সংশোধন ও সরকারি দলের কিছু নেতাকর্মীর বিতর্কিত কর্মকা- জনগণ ভালভাবে নেয়নি। ’

চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভিন পপি বাংলানিউজকে বলেন, ‘যখন  যারা বিরোধী দলে থাকে তাদের উপর মানুষের সর্মথন বৃদ্ধি পায়। বিএনপিরও বেড়েছে। ’

নাট্য পরিচালক মনির হাসান চৌধুরী  বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা যতোটা না ভালো তার চেয়ে গত আড়াই বছরে সাধারণ মানুষের সমর্থন বেড়েছে। ’

‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কিছুই ভুলই বিরোধী দলের জনসমর্থন বাড়ার সুযোগ তৈরি করেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad