ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

‘আমাদের আঘাত দেওয়ার জন্যই জন্মদিন পালন’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৬
‘আমাদের আঘাত দেওয়ার জন্যই জন্মদিন পালন’ ছবি: পিআইডির সৌজন্যে

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হেয় করার জন্য, শুধুমাত্র আমাদের আঘাত দেওয়ার জন্যে; যেদিনটি আমরা শোকে কাঁদি, বাবা হারিয়েছি, মা হারিয়েছি, ভাই হারিয়েছি-সেদিন কেক কেটে উৎসব করেন খালেদা।  

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ  আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
 
শেখ হাসিনা বলেন, কাল দেখলাম খালেদা জিয়া জন্মদিন পালন করবেন না। কেউ কেউ এটাকে রাজনৈতিকভাবে উদারতা হিসেবে দেখছেন। কিন্তু আসল ঘটনা আমি জানি।

‘যেহেতু আগস্ট মাস, তার ছেলের জন্মদিন ১২ আগস্ট, আর ছেলে মারা গেছে। মা হয়ে আর কী করবেন, সেজন্যেই পালন করছেন না। এটা কোনো রাজনৈতিক উদারতা নয়, কেউ যদি মনে করেন তা হলে ভুল করবেন। ’

‘আসলে এটা তো তার জন্মদিন-ই না, পাসপোর্টে তো অন্য তারিখ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর জীবনবৃত্তান্তেও তো অন্য তারিখ। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে হেয় করার জন্যে, আমাদের আঘাত দেওয়ার জন্যে ফুর্তি করে খুনিদের জানিয়ে দেন যে-তিনি তাদের সঙ্গে আছেন। সেটাই তার উদ্দেশ্য। ’

ভয়াল ১৫ আগস্টের আগে জার্মানি যাওয়ার মুহূর্ত স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ ঘটনার ১৫ দিন আগে জার্মানি যাই। কিন্তু যাওয়ার সময় আমি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দেশ ছাড়ি। রেহেনাকেও সঙ্গে নিয়ে যাই। দেশ ছাড়ার সময় আম্মা আকুল হয়ে কেঁদেছিলেন। তিনি ছিলেন চাপা স্বভাবের, কখনও এভাবে কাঁদেননি। খুব কান্নাকাটি করছিলেন তিনি।

‘১৩ আগস্ট মায়ের সঙ্গে কথা হয়, তখন বলেছিলেন আয় তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে। কিন্তু সে কথা আর হয়ে ওঠেনি। ’

১৫ আগস্ট বেলজিয়ামে ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তখনও জানিনা ঢাকায় কী হচ্ছে, তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল জোসেফ টিটো আমাদের খোঁজ নিলেন, খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন মিসেস গান্ধীও। কিন্তু আমাকে কোনো খবর দেওয়া হয়নি।

‘তবে ওখানকার টেলিভিশনে খবর দেখে আমার আর বুঝতে বাকি থাকে না-যে আব্বা নেই। বাকিরা কে কোথায় আছেন তা জানি না,’ যোগ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।  

শেখ হাসিনা বলেন, আমি তখনও জানি না দেশে কী হচ্ছে? এরপর আমরা দিল্লিতে আসলাম, ২৪ আগস্ট। ৪ অক্টোবর গান্ধীর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি জানালেন আমাদের পরিবারের কেউ বেঁচে নেই।  

‘এরমধ্যে জানতে পারলাম আমাদের ঢাকায় ফিরতে দেওয়া হবে না। জিয়াও চাইছে আমরা যেনো দেশে না আসতে পারি। আমরা রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে আবার ফিরে যাই। এরপর গেলাম লন্ডনে, কারণ লন্ডনে রেহেনা চলে যায়। সেখানেই তার বিয়ে হয়। তার বিয়েতেও যেতে পারিনি আমি। ’

পঁচাত্তর পরবর্তী প্রেক্ষ‍াপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হ‍াসিনা বলেন, ১৯৮০ সালে ইন্দিরা ‍গান্ধী আবার ক্ষমতায় এলে তিনিই আমার লন্ডনে যাওয়ার টিকিটের ব্যবস্থা করে দেন। তবে লন্ডনে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ রেহেনাই প্রথম করে।  

‘লন্ডনে গিয়ে ঘুরে ঘুরে সংগঠন করি, তখন ব্রিটিশ অনেক এমপি সহযোগিতা করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার তদন্তের দাবি জানাই। ’

দেশে ফেরা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ফিরে আমার পরিবারের কাউকে পাইনি। কিন্তু পেয়েছি বাংলার মানুষের ভালোবাসা, অবহেলিত নেতা-কর্মীদের পাশে পেয়েছি।  

‘৩২ নম্বর বাড়িতে যেতে চেয়েছিলাম মিলাদ করবার জন্যে। জিয়া তখন রাষ্ট্রপতি, কিন্তু যেতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বাড়িটি আমার কাছে তাড়াহুড়ো করে হস্তান্তর করা হয়। ’

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অপ্রচার চালিয়ে তার চরিত্র হনন করতে তাড়াহুড়ো করে আমার কাছে বাড়িটি হস্তান্তর করা হয়।  তখন চল্লিশদিন পর্যন্ত টেলিভিশনে জিয়াকে সাধু বানানো হয়, আর বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কি কি পাওয়া গেছে-তার অপ্রচার শুরু করে তারা।  

‘পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধু ১০০ টাকার নোট বাতিল করেছিলেন, সেসব নোটও ট্রাংকে করে বাড়িতে রাখা হয়। আমি একদিকে প্রতিবাদ করি অন্যদিকে শোকে মুহ্যমান। যে মানুষটি সারা জীবন মানুষকে ভালোবেসেছেন, তাকে কেন হত্যা করা হয়েছে তা বুঝতে পারছিলাম না। ’


এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্ট শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আফজল হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য এসএম কামাল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।  

অনুষ্ঠানে ১৫ আগস্ট নিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন।  

এ ছাড়া সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ‘৩২ নম্বর মেঘের ওপারে' শীর্ষক একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।  

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।

**বঙ্গবন্ধুকে হেয় করতেই জন্মদিন পালন করা হয়
**যারা স্বাধীনতা চায়নি তারাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে
**শোক দিবসের আলোচনা সভা চলছে

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৬
এমইউএম/এমএ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।