ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

ছেলে-জামাইকে নিয়ে ফের আলোচনায় মায়া

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৭ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
ছেলে-জামাইকে নিয়ে ফের আলোচনায় মায়া

ঢাকা: পুত্র ও কন্যার জামাতাকে ঘিরে এই মেয়াদেও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার। আওয়ামী লীগের শুরু হওয়া ১৯৯৬ সালে শাসনকালের মেয়াদে মায়া প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে বড় ছেলে দীপু চৌধুরীকে ঘিরে নানা কাহিনী তাকে বিব্রত করেছিল।

এবার করছে ছোট ছেলে রনি চৌধুরী।

গুলশান, বনানী ও উত্তরায় মন্ত্রীপুত্র রনি চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন শেষ নেই। অন্যদিকে মন্ত্রীর মেয়ের জামাতা নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার কাহিনীতে জড়িয়ে চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা তারেক সাঈদকে নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ নানামুখী ঝামেলায় পড়েছে।

হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাকে কারাগারে ফেরত নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের কেবিনকে তারেক সাঈদ নিজের বাড়িঘরের মতো ব্যবহার করার কারণে নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। তারেক সাঈদের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা অবাধে যাতায়াত করতেন হাসপাতালে।

জানা গেছে, ঢাকার রাজনীতিতে একসময় বিশাল অবস্থানে থাকা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে তার সন্তানরা সরকারের দুই মেয়াদেই বিব্রত করেন। প্রথমবার দীপু চৌধুরী নানা অপকর্মে উত্তরা কাঁপাতেন। তার নেতৃত্বে উত্তরা ফ্রেন্ডস ক্লাব দখলে ছিল। ওই ক্লাবের আধিপত্য ও জমি দখল নিয়ে ২০০০ সালের দিকে তিতাস নামে একজনকে হত্যা পর্যন্ত করা হয়। দীপু চৌধুরী এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ উঠলে দেশ-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। দীপু চৌধুরীসহ অন্য সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তার পরও তিনি থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

প্রভাব খাটিয়ে গত মেয়াদে দীপুকে রক্ষা করেন তখনকার প্রতিমন্ত্রী মায়া। বিএনপির শাসন এবং ওয়ান-ইলেভেনের সময় মায়া চৌধুরী মাঠে থাকলেও তার সন্তানদের উৎপাত ছিল না। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দীপু চৌধুরী ও তার ছোট ভাই রনি চৌধুরী আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেন, অল্প সময়ের মধ্যেই পাল্টে যায় তাদের চালচলন। বিভিন্নভাবে তারা বিপুল অর্থসম্পদের মালিক বনে যান। এর মাঝে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে রাজধানীর সিসা বার নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের অভিযোগ জমা হয় তাদের বিরুদ্ধে। তাদের বোনের স্বামী তারেক সাঈদ র‌্যাবে থাকার সময় তাকে ব্যবহার করে দীপু ও রনি অনেক কাজ করেন। নারায়ণগঞ্জ খুনের পর দীপু ও রনিকে জড়িয়ে তখন অনেক খবরও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

সূত্রমতে, বছরখানেক আগে উত্তরার আবদুল্লাহপুর পলওয়েল মার্কেটসংলগ্ন (বেড়িবাঁধ বস্তি হিসেবে বেশি পরিচিত) পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় আড়াই বিঘা জমির ওপর বস্তি উচ্ছেদ করা হয়। এক পর্যায়ে রনি চৌধুরী দলবল নিয়ে জায়গাটি দখলে নিয়ে নেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, টিনশেড দিয়ে মার্কেটটি তৈরি করা হচ্ছে। চারপাশে বাউন্ডারি দিয়ে রাখা হয়েছে। জায়গার মাঝখানে একটি সাইনবোর্ড টাঙানো। সাইনবোর্ডে লেখা- ‘এতদ্বারা সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, নিম্নবর্ণিত তফসিলভুক্ত ভূমি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক অধিকরণকৃত জমি, উক্ত উচ্ছেদকৃত ভূমিতে কোনো প্রকার স্থাপনা না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হইল। ’

কিন্তু পাউবোর নির্দেশ অমান্য করে রনি চৌধুরী ও তার দল মার্কেট নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। মার্কেট নির্মাণ করতে ২০-২৫ জন শ্রমিক দ্রুতগতিতে কাজ করছেন। রমজান আলী নামে এক শ্রমিক জানান, মাসখানেক আগে মার্কেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। রাতের বেলায় মাটি ভরাট করা হয়। গভীর রাতে দামি গাড়িতে করে স্যারেরা আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা রফিক, রুহুল আমিন, আবদুর রহমানসহ অনেকেই জানান, রনি চৌধুরী তার দলবল নিয়ে এ জায়গাটি দখল করেছেন। বস্তি উচ্ছেদ করার সময় বলা হয়েছিল, এখানে পাউবোর অফিস করা হবে। আর এখন প্রভাবশালীরা মার্কেট নির্মাণ করছেন। এ বস্তিটির নাম ছিল আবদুল্লাহপুর পলওয়েল মাঠ বস্তি। প্রতিদিন রাতের বেলায় সন্ত্রাসীরা এখানে নিয়মিত আড্ডা দেয়। তাদের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারে না।

কিছুদিন আগে সন্ত্রাসীরা বাপ্পি নামে এক যুবককে মারধর করে। এলাকার কিছু লোক প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসীরা হুমকি দিয়ে বলে, ‘আমরা রনি চৌধুরী ও ভাগিনা সারোয়ারের লোক। কেউ টুঁশব্দ করলে গুলি করে মেরে ফেলব। ’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফিল্ড অফিসার মিজানুর রহমান দখলের ব্যাপারে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান। শুধু বলেন, ‘জায়গাটি আমাদের। তবে এখানে আমরা কোনো মার্কেট নির্মাণ করছি না। ’

এদিকে রনি চৌধুরীর বিপুল অর্থবিত্তের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে দুদক। অন্যদিকে পিস্তলের লাইসেন্স নেওয়ার সময় ট্যাক্সের কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন কিনা তারও খোঁজ নিচ্ছে একটি সংস্থা। এদিকে আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, মায়া ভাই দলের ত্যাগী লোক। কিন্তু সব সময় তিনি সন্তানদের নিয়ে ঝামেলায় থাকেন। হানিফের উত্তরসুরি এখন ঢাকার মেয়র।

অন্যদিকে মায়ার উত্তরসুরিরা রাজনীতি নয়, তারা ব্যস্ত বাপ ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন নিয়ে। মায়া পুত্রদের লাগাম টেনে না রাখলে দল ও সরকার আরও বিব্রত হবে। শুধু নিজের পুত্র নয়, কন্যার জামাতাও তাকে ঝামেলায় রেখেছেন। তবে অনেকে বলেন, মায়াপুত্রদের কারণেই র‌্যাবে থাকার সময় তারেক সাঈদ বেপরোয়া ছিলেন। এখন তাদের বুদ্ধিতে হাসপাতাল থেকে পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ সবকিছু টের পেয়ে যাওয়ায় তারেক পালাতে পারেননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) তারেক সাঈদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ডিভিশন পাওয়া এই হাজতি ঢাকা মেডিকেলের পুরনো ভবনের তৃতীয় তলায় ৪৩ নম্বর কেবিনে থাকা অবস্থায় সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তিনি তাকে পাহারা দিতেন। একদিন রাত সাড়ে ৭টায় আসামির স্ত্রী পরিচয় দিয়ে রিফাত চৌধুরী একটি টিফিন বাটি ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ওই আসামির সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া দেখা করা যাবে না জানালে রিফাত চৌধুরী ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তার চাকরি শেষ করে দেবেন বলে হুমকি দেন। এসআইর জিডির পর শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক ঘটনা তদন্ত করতে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে গোপনে ও প্রকাশ্যে আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তদন্তে তিনি জিডির অভিযোগের সত্যতা পান বলে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন।

বাংলাদেশ সময়: ০৬২৫ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।