ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

বেনজীর-হাসিনা দৌলা মুখোমুখি (ভিডিওসহ)

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৭ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৬
বেনজীর-হাসিনা দৌলা মুখোমুখি (ভিডিওসহ)

ঢাকা: বেনজীর আহমেদ-হাসিনা দৌলা এখন মুখোমুখি অবস্থানে। একজন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য।

অন্যজন সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা জেলা পরিষদের প্রশাসক। দু’জনের মধ্যে চলে আসা শীতল যুদ্ধ রূপ নিয়েছে প্রকাশ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়িতে।

তাদের মধ্যেকার সাপে-নেউলে সম্পর্কের আগুনে এবার ঘি ঢালছে পাল্টাপাল্টি মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ।

এ বিষয়ে বেশি সরব হাসিনা দৌলা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা নিয়েই বাড়ি করেছেন বেনজীর আহমেদ। এবার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতি ন্যূনতম ৬০ লাখ টাকা থেকে পৌনে দুই কোটি টাকার যে বাণিজ্য হয়েছে, তারও সিহংভাগ পেয়েছেন তিনি’।

‘একবার দু’বার নয়। তিনবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমি মনোনয়ন বাণিজ্যের বিষয়টি তুলে ধরেছি। নালিশ করেছি প্রধানমন্ত্রীর কাছে। পরে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে তাদের পাঠানো সুপারিশ। আমাদের পাঠানো সুপারিশের প্রার্থীরাই পেয়েছেন মনোনয়ন’।

হাসিনা দৌলা আরও বলেন, ‘আসলে তারা এসেছেন দলের নামেই বাণিজ্য করতে, ব্যবসা করতে, টাকার মালিক হতে। আর আমি এসেছি দরদ দিয়ে রাজনীতি করতে। দলের জন্যে কিছু করতে’।

হাসিনা দৌলা আগে ছিলেন নারী উদ্যোক্তা। ছিলেন মাইক্রো ইলেকট্রনিক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে, সেই রাজনৈতিক খরার সময় ব্যবসা করতে এসে সাভার আওয়ামী লীগের হাল ধরেন জামালপুরের মেয়ে হাসিনা দৌলা।

রাজনীতিতে সময় আর অর্থ দু’টিই বিনিয়োগ করেন তিনি। ফলাফল ব্যবসা লাটে ওঠে। সব হারিয়ে নাম লেখান দেউলিয়ার খাতায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মূল্যায়ন হিসেবে পান ঢাকা জেলা পরিষদের প্রশাসকের পদটি।

তবে জেলা পরিষদের সীমাহীন দুর্নীতি, পুকুরচুরি আর লুটপাটে এখন চরম অস্বস্তিতে হাসিনা দৌলা। শত কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগের খড়গ ঝুলছে তার মাথার ওপর। তারই ঘনিষ্টজনেরা নামে-বেনামে আত্মসাৎ করছেন জেলা পরিষদের তহবিল।

তাদেরই একজন মাহবুবুর রহমান মনির। পাশের ধামরাই উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মোখলেসুর রহমানের ছেলে। এই মনিরকে হাসিনা দৌলার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন বেনজীর আহমেদই। হাসিনা দৌলা তাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন একান্ত ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে।

সেই মনির নিজেই উত্তোলন করেন জেলা পরিষদের ১৩৭টি প্রকল্পের চেক। যেগুলোর বাস্তবায়ন কেবলই কাগজে-কলমে। টাকার অংকে ২ কোটি ৭৭ লাখ। এভাবে নামে-বেনামে শত কোটি টাকার চেক তুলে ফতুর করে দেওয়া হয়েছে ঢাকা জেলা পরিষদকে। ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ইমেজও।

দুর্নীতি দমন কমিশন ডজনখানেক মামলাও ঠুকেছে। কিন্তু সেখানে আসামি করা হয়নি হাসিনা দৌলাকে। আর তা নিয়েই যতো সরবতা আর প্রশ্ন হাসিনা দৌলা বিরোধীদের।

কোন ক্ষমতা আর কিসের জোর! এতো লুটপাটের কোনো দায় কেন হাসিনা দৌলার ঘাড়ে পড়ছে না সে ব্যাপারেও গুঞ্জন রয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

আজকের হাসিনা দৌলার নেতা বনে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিলো বেনজীর আহমেদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন। দলীয়ভাবে হাসিনা দৌলাকে উপজেলা সভাপতি করতে অনুমোদনও দেন বেনজীরই।

সেই ‘কৃতজ্ঞতাটা’ এমন হবে- এটা মেনেই নিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। তাই হাসিনা দৌলার বোমা ফাটানোতেও বিস্মিত বা ভীত কোনোটাই নন বলে বাংলানিউজকে জানান তিনি।

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমার সম্পর্কে হাসিনা দৌলা যে কথা বলেছেন, তা সম্পূর্ণই ভিত্তিহীন, দায়িত্বজ্ঞানহীন। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের সামিল। আমি যখন বাড়ি করেছি, তখন হাসিনা দৌলার সঙ্গে তো পরিচয়ই হয়নি’।

‘শত কোটি টাকার দুর্নীতিতে জড়িয়ে এখন হাসিনা দৌলা দিশেহারা। যার কারণে সরকার ও দলের ইমেজ ক্ষুন্ন হয়েছে। উন্নয়নের ব্যাপারে যে দুর্নীতির ফিরিস্তি এসেছে, তা আমাদের সাংগঠনিক ভিত্তি ও তার নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কারণ, তার নেই কোনো রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। দৃষ্টিভঙ্গিরও কোনো উচ্চতা নেই’।

মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ সম্পর্কে বেনজীর বলেন, ‘আমরা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসরণ করেছি। তৃণমূল থেকে প্রার্থীদের সুপারিশ পাঠানো হয়েছে উপজেলায়। সেখান থেকে জেলায় আমরা সুপারিশ করে পাঠিয়েছি। আমরা তো শেষ ধাপে। যেখানে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততাই থাকে না’।

পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এক কথায় ভিমরতিতে পেয়ে বসেছে হাসিনা দৌলাকে। তার কারণে সাভারে দলীয় সংগঠন সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভ্রান্ত নেতাকর্মীরা। আর তিনি নিজের অবস্থান ঠিক রাখতে একেক সময় একেক গ্রুপ তৈরি করেন। যারা তাকে লাঞ্ছিত করেছেন, অপদস্ত করেছেন, তাদের সঙ্গে হাত মেলাতেও দেরি হয় না তার’।

‘এখন তার ভয় জেলা প্রশাসকের পদ হারানো নিয়ে। এখানেও যাকে যেভাবে সুবিধা তাকে সেভাবেই ব্যবহার করেছেন তিনি। জনগণ ও নেতাকর্মীরাও তাকে অপসারণের জোর দাবি তুলেছেন। তাকে এখন জেলা পরিষদের প্রশাসকের পদ থেকে প্রধানমন্ত্রী সরিয়ে দিলেই দলের ইমেজ, সরকারের ইমেজ কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার সম্ভব’।

বেনজীর বলেন, ‘হাসিনা দৌলা যতোদিন থাকবেন, ততোদিন ঢাকা জেলা পরিষদের ইমেজ ফিরে আসবে না। সময়ই বলে দেবে, তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না। তবে তারও দলীয় শৃঙ্খলা মেনেই চলা উচিৎ। তাকে মনে রাখতে হবে, তিনি সব কিছুর ঊর্দ্ধে নন’।

‘এক সময় দলের স্বার্থে কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন বটে। তবে তার জন্যে দল তো তাকে মূল্যায়ন করেছে। তবে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। সেই পুরনো কথা বলে বিভিন্ন স্থান থেকে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টাও কম করেননি। সেই সহানুভূতি নিয়ে তিনি যে কাজ করছেন, তার সেই দুর্নীতি দল ও সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করেছে। আমি মনে করি, তার বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকেই দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন’।

‘আর হাসিনা দৌলা যে দুর্নীতি করছেন, তা প্রমাণিত হলে দল থেকেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ বলেও জানান ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের এই সভাপতি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৬
জেডআর/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।