ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

কঠোর অবস্থানে আওয়ামী লীগ

শামীম খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৩ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১১
কঠোর অবস্থানে আওয়ামী লীগ

ঢাকা : তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপি সরব হলেও এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আওয়ামী লীগ। তারা কোনো অবস্থাতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আর ফিরিয়ে আনবে না।

অনির্বাচিত এই সরকার পদ্ধতি বাতিলের পর ক্ষমতাসীন দলটি এখন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনড় অবস্থান নিয়েছে।  

‘যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেছে সেই ব্যবস্থায় আর কোনোভাবেই ফিরে যাবে না’—এই কঠোর অবস্থানে চলে গেছে আওয়ামী লীগ।

গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

এ অবস্থায় বিএনপি নির্বাচনে না এলে মহাজোটের অন্যতম শরিক এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিসহ স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়েই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নেবে। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিকেই বিরোধী দল হিসেবে দাঁড় করানোর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। সে অনুযায়ীই অগ্রসর হওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে আভাস পাওয়া গেছে।

এব্যাপারে জাতীয় পার্টিরও আগ্রহ রয়েছে। জাতীয় পার্টির হাইকমান্ড থেকে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের কাছে এরই মধ্যেই এ ধরণের আগ্রহও ব্যক্ত করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আলোচনা এলে এবং তারা কোনো বিকল্প প্রস্তাব দিলে সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত থাকবে বলে সূত্র আরো জানায়।
 
আলোচনায় বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প গ্রহণযোগ্য কোনো প্রস্তাব দিতে না পারলে নির্বাচন কমিশনকে কিভাবে আরো শক্তিশালী করা যায় সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। নির্বাচিত সরকার বহাল রেখেই নির্বাচন কমিশন কিভাবে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে সাজাতে হবে।
 
আলোচনায় না এসে বিএনপির আন্দোলনের পথ বেছে নিলে আন্দোলন দমনে সরকারও কঠোর হবে। আন্দোলনকে প্রশাসনিকভাবে মোকাবেলার পথ বেছে নেবে সরকার।

বুধবার থেকে বিএনপির টানা দুই দিনের হরতাল এবং ইসলামি দলগুলোর পরবর্তী দুই হরতাল মোকাবেলায় এরই মধ্যে প্রশাসনিক বিভিন্ন প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো সতর্ক ও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দ্ওেয়া হয়েছে সূত্র জানিয়েছে।

বিএনপি হরতাল ঘোষণার পর গত রোববার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও সাংবাদিকদের বলেছিলেন জনগণের জানমাল রক্ষায় সরকার সব ধরনের প্রদক্ষেপ নেবে।

আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে বিএনপি যে দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে তার মুলে রয়েছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার থেকে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও দুনীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোককে রক্ষা করা।

এই বিষয়গুলো জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণেই বিএনপি আন্দোলন, হরতাল যতই করুক এতে তারা মানুষের সমর্থন পাবে না বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন।

এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ইস্যু করে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে বেরিয়ে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। আর সেটা হলে স্বাভাবিকভাবেই প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘটবে। সেই কৌশল নিয়েই এ দলটির নীতিনির্ধারকরা অগ্রসর হচ্ছেন বলে জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে।
 
সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ ঘোষণার পর গত ৭ জুন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ। তখন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তুলে দেওয়াসহ সার্বিক বিষয় নিয়েই তাদের মধ্যে আলোচনা ও ঐকমত্য হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।

তাছাড়া বেশ কিছু দিন ধরেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ দলের নেতাকর্মীদের এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। বিএনপি নির্বাচনে না এলে বিকল্প হিসেবে এই চিন্তাকেই কাজে লাগানো হবে বলে সূত্র আরো জানায়। তবে এসব বিষয়ে এখনই কেউই প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না।  

বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি মাহবুব-উল-আলম হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিএনপি হরতাল করছে খালেদার বড় ছেলে তারেককে রক্ষার জন্য। তারেকের বিষয়টি আইনগত ব্যাপার। আইনের সঙ্গে তো আপোস করা যাবে না। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই হবে। এর বাইরে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে কোনো লাভ নেই। তাদের ভালো কোনো ফরমুলা থাকলে সংসদে এসে বলুক। ’

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু বাংলানিউজকে বলেন, ‘তাদের (বিএনপির) কোনো ফরর্মুলা থাকলে সেটা দিতে বলা হচ্ছে বার বার। নির্বাচনের বাকী আছে আড়াই বছর। এই সময়ের মধ্যে আলোচনায় না এসে তারা যদি এভাবে চলতে থাকে তবে মানুষই তাদের বিরুদ্ধে চলে যাবে। আন্দোলন-হরতাল কোনো সমাধান নয়। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা গণতন্ত্রের পথ নয়। ’

বাবলু বলেন, ‘জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। আমরা ইতিবাচক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। জাতীয় পার্টি যে কোনো সময় যে কোনো অবস্থায় নির্বাচনে প্রস্তুত। নির্বাচন জনগণের মতামতের প্রতিফলন ও সাংবিধানিক বিষয়। এর বাইরে আমরা যেতে পারি না। ’

বাংলাদেশ সময় ২১১০ ঘন্টা, জুলাই ৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।