ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

তারেককে রক্ষা করতেই বিএনপির হরতাল: আশরাফ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১১
তারেককে রক্ষা করতেই বিএনপির হরতাল: আশরাফ

ঢাকা: বিএনপিকে হরতাল প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ‘বিএনপির হরতাল ডাকার একটাই কারণ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার থেকে খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানকে রক্ষা করা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তারেক রহমান।



তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির প্রতি আহবান জানাই, যদি আইনের শাসনে বিশ্বাস করেন ও ২১ আগস্ট হত্যাকা-ের বিচার চান তাহলে এখনি হরতাল প্রত্যাহার করুন। ’

সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানম-ি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এ কথা বলেন।

সৈয়দ আশরাফ আরও বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক দল কিভাবে খুনের বিচার বন্ধ করার জন্য হরতাল দিতে পারে? পৃথিবীর কোনও সভ্য রাজনৈতিক দল খুনের বিচার বন্ধের জন্য হরতাল দিতে পারে না। ’

হরতাল ও হুমকি ধামকি দিয়ে বিচার বন্ধ করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘এই সরকারের আমলেই ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা হত্যার বিচার হবে এবং বিচারের রায় বাস্তবায়ন করা হবে। পৃথিবীর কোনও শক্তি তা থামিয়ে রাখতে পারবে না। ’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- দলের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, আলী মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফরিদুন নাহার লাইলি, উপদপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাশ প্রমুখ।

মামলার আসামি তারেক রহমানকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হবে কিনা সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘আসামিদের আদালতে হাজির করার জন্য প্রসিকিউশন সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে। আসামিদের হাজির হতে হবে। ’
 
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফ আরো বলেন, ‘তারা হরতালের কারণ উল্লেখ করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, বিদ্যুৎ সংকট, শেয়ারবাজরসহ ৫টি। কিন্তু মূল কারণ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মুল পরিকল্পনাকরী হাওয়া ভবনের কর্ণধার তারেক রহমানকে রক্ষা করার জন্য। সে সময় হাওয়া ভবন ছিলো সকল পরিকল্পনার, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কেন্দ্র বিন্দু। কিবরিয়াা, আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাসহ সকল হত্যার পরিকল্পনা হয়েছিলো এই হাওয়া ভবন থেকে। ’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু মামলাটি বর্তমানে আদালতে, সেহেতু আমাদের উপরে অনেক বাধ্যবাধকতা আছে। শুনানির সময় সব জানা যাবে। আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে অনেক কিছু জানা সত্ত্বেও আমরা বলতে পারছি না। ’

তিনি বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী তারেক রহমান। তার নেতৃত্বে হাওয়া ভবনে সভা হয়। যারা আসামিম হয়েছে তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। ’

তিনি বলেন, ‘গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনা ছিলো শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতাদের একত্রে হত্যা করা। গ্রেনেড হামলায় বর্তকমান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানহ ২৪ জন প্রাণ হারান। গ্রেনেডের উৎস কোথায়, কিভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে, কিভাবে গ্রেনেড নিয়ে আসা হয়েছে তদন্তে তা বেরিয়ে এসেছে। ’  

সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘তারা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়েছিলো। গ্রেনেড মারার পর গাড়ীর উপর গুলি করেছিলো। উদ্দেশ্য ছিলো গ্রেনেডে যদি মারা না যায় তাই দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে গুলির ব্যবস্থা রেখেছিলো তারা। ’

তিনি বলেন, ‘এই গ্রেনেড হামলার মূল নায়ক খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমান। তার সঙ্গে অনেকেই ছিলেন। হাওয়া ভবনে বসে এই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করা হয়। এই হত্যাকা-ের পরিকল্পনাকারী, হত্যাকারীদের আড়াল করার জন্য তখন জর্জ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছিলো। ’

তিনি বলেন, ‘গ্রেনেড হামলার সময় পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক ছিলো। পুলিশ আহতদের সাহায্য না করে যারা আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলো তাদের উপর হামলা করে টিয়ার শেল মারে। তখন পুলিশের দায়িত্বের অবহেলার কারণে তাদের শস্তি না দিয়ে তৎকালীন সরকার তাদের পুরস্কৃত করে। ’

সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত সরকার গ্রেনেড হামলার বিচার তো করেনি, বরং হামলার সব আলামত দ্রুত নষ্ট করে ফেলেছে। ’

তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস- এ বিচারের মাধ্যমে আসল সত্য উৎঘাটন হবে। যারা দায়ী তারা শাস্তি পাবে। ’

তিনি বলেন, ‘অর্থ কেলেঙ্কারীর দায়ে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের সাজা হয়েছে। এই মামলায়ও জাতি সত্য জানতে পারবে। কারা গ্রেনেড এনেছে, কারা গ্রেনেড মারার প্রশিক্ষণ দিয়েছে, কি উদ্দেশে গ্রেনেড মারা হয়েছিলো সব জানা যাবে। ’

সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘এই ঘটনার বিচার হচ্ছে, বিএনপির উচিৎ ছিলো এই বিচারকে স্বাগত জানানো। বলা উচিত ছিলো দোষীদের বিচার হোক। হরতাল না ডেকে আইনের শাসনের প্রতি বিশ্বাস রাখা উচিত ছিলো। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা আর না ঘটতে পারে সে ব্যবস্থা করা। ’

তিনি বলেন, ‘হরতাল দু:খজনক, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা জানাই। ’

আশরাফ আরো বলেন, পৃথিবীর এমন কোনো শক্তি নেই যে আইনের এই ধারাকে ব্যাহত করতে পারে। যত চেষ্টাই করুক না কেন এ বিচার হবে। বিচারের যে রায় হবে তা শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই বাস্তবায়ন করা হবে। কোনো হুমকি দিয়ে হরতাল করে থামিয়ে রাখতে পারবে না। ’

তিনি বলেন, ‘হত্যা, ক্যু, যড়যন্ত্রের রাজনীতি বিএনপির হাতিয়ার। তারা ক্যান্টনমেন্টের পার্টি, ক্যান্টমেন্টে তাদের জন্ম। ‘

তিনি বলেন, ‘যদি আইনের শাসনে বিশ্বাস করেন তবে এখনই হরতাল প্রত্যাহার করুন। পৃথিবীর কোনো সভ্য রাজনৈতিক দল খুনের বিচার বন্ধ করার জন্য হরতাল ডাকতে পারে না। ’   

তিনি বলেন, ‘এই মামলার বিচার হতেই হবে। তা না হলে জাতির পাপমুক্ত হবে না। ২১ আগস্ট শুধু তারেক জিয়ার পাপ না। যত দিন পর্যন্ত এর বিচার না হবে, রায় কার্যকর না হবে তত দিন পর্যন্ত জাতিকে প্রায়শ্চিত্য করতে হবে। এ দায় আমাদেরও। আমরাও গিলটি, কারণ, আমরা তখনকার সরকারকে এর বিচারে বাধ্য করতে পারিনি। বিচারে বাধ্য করার পরিবেশ তৈরি করতে পারিনি। ’  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।