ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

বাঙালি ও বাংলাদেশি বিষয়ক সংশোধনী জাতিগত পার্থক্য বাড়াবে: মেনন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১১
বাঙালি ও বাংলাদেশি বিষয়ক সংশোধনী জাতিগত পার্থক্য বাড়াবে: মেনন

ঢাকা: বাংলাদেশের মানুষকে জাতি হিসেবে বাঙালি ও নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশি উল্লেখ করে সংবিধানে যে সংশোধনী আনা হচ্ছে, তা জাতিগত পার্থক্য বাড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি বিতর্কিত।

এটা নতুন করে জটিলতা বাড়াবে। ’

প্রসঙ্গত, সংবিধানে বাংলাদেশের নাগরিকদের বাংলাদেশি হিসেবে উল্লেখ্য করা হয়েছে।

রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আদিবাসী বিষয়ক জাতীয় কোয়ালিশন আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিকরা যদি বাঙালি হিসেবে স্বীকৃতি পায়, তবে অদিবাসী ও অন্য ভাষাভাষীরা তাদের স্বীকৃতি হারাবে। এটা কাম্য নয়। বিষয়টি নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি করবে। ’

একই সঙ্গে জাতিসংঘের বরাত দিয়ে আদিবাসীদের নামকরণে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়েও তিনি হতভম্ভ¢ বলে মন্তব্য করেন। এ অজুহাতে আদিবাসীদের স্বীকৃতি না দেওয়া সঠিক হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি।

‘আদিবাসী সমস্যা সমাধানে আমরা সবসময়ই সামরিক সমাধান খুঁজেছি, রাজনৈতিক নয়’ বলে মন্তব্য করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘নিরাপত্তার যে প্রশ্ন তুলে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না, তা সঠিক নয়। বরং তাদের মূল স্রোতধারায় আনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। ’

এ সময় তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে আদিবাসী উন্নয়নে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। রাজনৈতিক দলগুলো নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আগ্রহ দেখিয়েছে। অনেকে কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি হঠাৎ করে নতুন বির্তক শুরু হয়েছে। ’

তার মতে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোকে কোনোরকম বির্তক ছাড়া পাস হতে দেওয়া হবে না। ’

অনেক আইনে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেওয়া আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন কেনো বির্তক তা আমার কাছে বোধ্যগম্য নয়। ’

আদিবাসী বিষয়ক জাতীয় কোয়ালিশনের সভাপতি ম. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- কোয়ালিশনের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য গৌতম কুমার চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা , আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ সরেন প্রমুখ। পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ।

বক্তারা বলেন, সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি, উন্নয়ন নাগরিক অধিকার ও ভূমির অধিকার দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র দিতে না এটা তার ব্যর্থতা। কিন্তু সরকার এসব ক্ষেত্রে উদাসীন।

তারা বলেন, সরকার নির্বাচনী ইশতিহারে প্রতিশ্রুতি দিলেও তার বাস্তবায়ন করছে না। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি করলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, ‘সরকার আদিবাসী জাতিসত্ত্বা নিয়ে যে বির্তক সৃষ্টি করেছে, তাতে আমরা হতাশ। আমরা আদিবাসীরা এর নিন্দা জানাই। ’

অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, ‘আদিবাসীদের স্বীকৃতির বিষয়টি নিরপাত্তার চশমা দিয়ে দেখা হচ্ছে। অধিকার না দিয়ে তা হরণ করতে যাচ্ছে সরকার। তার মানে ১৯৭১ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকারগুলো কিছুই শিখেনি। নতুন এই নীতি দেশে রক্তপাত ঘটাবে। পরিস্থিতি আগের চেয়েও ভয়াবহ হবে। সমতলেও এই রক্তপাত-সংঘর্ষ ঢুকে যেতে পারে। ’

অনুষ্ঠানে প্রস্তাবিত বাজেটে আদিবাসীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, ২৬ জুন,২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।