ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

বিএনপিতে বিভক্তি আন্দোলন নিয়ে

আসাদ জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১১
বিএনপিতে বিভক্তি আন্দোলন নিয়ে

ঢাকা: সরকার পতনের আন্দোলন কৌশল নির্ধারণে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিতে।

ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া অধিকাংশ নেতাসহ একপক্ষ চাইছে লাগাতার হরতালের মতো কঠোর, নিদেনপক্ষে লং মার্চ বা রোড শো এর মতো মাঠ দাবড়ানো কর্মসূচি।



অপরপক্ষ আরো কিছু দিন বিক্ষোভ সমাবেশ-মিছিল ও মানববন্ধনের মতো নিয়মতান্ত্রিক শান্ত আন্দোলন চালিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে চায়। পাশাপাশি আমজনতাকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে সুবিধাজনক সময়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলাই উদ্দেশ্য তাদের।

দু’পক্ষের পরস্পরবিরোধী এই কঠোর অবস্থান দলের হাই কমান্ড তো বটেই, এমনকি খোদ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও ভাবিয়ে তুলেছে বলে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলন নিয়ে বিএনপি নেতাদের পরস্পরবিরোধী দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যাওয়া ছাড়াও বিগত হরতালগুলোতে জনগণের আচরণও বিবেচনায় রাখছে দলের হাই কমান্ড। মুখে তারা জনসমর্থন পুরোপুরি পেয়ে যাওয়ার দাবি যতোই তুলুক না কেন, হরতালে সাধারণ মানুষের নিস্পৃহতা অনেকটাই ভাবিয়ে তুলেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের।

এছাড়া লাগাতার হরতাল বা কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির পক্ষে এখন পর্যন্ত বিদেশিদের সমর্থন পায়নি বিএনপি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারী জার্মান মন্ত্রিও হরতাল ইস্যুতে বিএনপিকে গ্রিন সিগন্যাল দেননি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

দলীয় সূত্রমতে, কঠোর আন্দোলনের পক্ষে অবস্থানকারীদের দাপটেই পরপর দু’টি হরতাল দেয় বিএনপি। এখন তারা লাগাতার হরতালের দাবি তুলছে দলীয় ফোরামে।

তারা মনে করছে, কঠোর আন্দোলনে সরকারকে এখনই চাপে ফেলতে না পারলে পরবর্তীতে চাপ তৈরি করাই কঠিন হবে। তাই এখনই হার্ডলাইনে যাওয়া দরকার।

অপরদিকে চলতি মাসে দু’টি হরতাল পালনের অভিজ্ঞতার ধুয়ো তুলে অপরপক্ষ বলছে, এখনই সর্বশক্তি নিয়ে  কঠোর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন হবে। এমনিতেই গত দুই হরতালে বিএনপি নেতা-কর্মীদের রাস্তায় দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। উপরন্তু মোবাইল কোর্টে কয়েকশ’ নেতা-কর্মীর কারাদ- হয়েছে।

তারা মনে করছে, এভাবে মোবাইল কোর্টে সাজা হতে থাকলে আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার মতো নেতা-কর্মীকে রাস্তায় পাওয়া কঠিন হয়ে উঠবে। আর সেরকম কিছু হলে ক্ষতি হবে বিএনপিরই। তাই এখনই হার্ডলাইনে যাওয়া যাবে না।

বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বাংলানিউজকে জানান, দলের মূল স্রোতের নেতা-কর্মীদের এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণেই বড় কোন কর্মসূচি দিতে পারছে না বিএনপি। তাই বিক্ষোভ সমাবেশের মতো কর্মসূচি দিয়ে সময় পার করছে তারা।

এ কারণেই গত সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিলের সুপারিশ সম্বলিত সংবিধানের খসড়া অনুমোদন পেলেও কঠোর বা দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেনি প্রধান বিরোধী দল।

এমনকি গত বৃহস্পতিবার  মানি লন্ডারিং মামলায় বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কারাদ- হওয়ার পরও কেবল বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে দায় সারতে হয় বিএনপিকে।

তাই দলটির নেতারা প্রতিনিয়তই কড়া আন্দোলনের আওয়াজ দিতে থাকলেও কোন কিছুই সুনির্দিষ্ট করছেন না।

সর্বশেষ শুক্রবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোকোর মামলা ইস্যুতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিছুটা যেন কৌশলেই কড়া আন্দোলন ইস্যুটি এড়িয়ে যান।

সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবো। সময়মতো আপনাদের জানানো হবে। ’

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আন্দোলন তো আর রেডিমেড জিনিস নয়, মন চাইলো আর মাঠে নামিয়ে দিলাম। ধাপে ধাপে স্তরে স্তরে আন্দোলন কর্মসূচি বেগবান করা হবে। ’

সাম্প্রতিক ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- চলতি মাসের ৫ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে বিএনপি। এর পর এক সপ্তার ব্যবধানে ১২ জুন থেকে টানা ৩৬ ঘণ্টা হরতাল পালন করে তারা। অথচ বর্তমান সরকারের ২২ মাসের মাথায় প্রথম হরতাল পালন করে দলটি। পরের তিনটি হরতাল ছিল বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত লাভালাভের ইস্যুতে ডাকা ঝঁটিকা কর্মসূচি।

চলতির মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে তিন দিনের দু’টি হরতাল পালনের পর বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছিল- চলতি সপ্তাহে আরেকটি হরতাল দেবে বিএনপি। হরতালের টাইম ডিউরেশন নিয়েও শোনা যাচ্ছিল ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার বিভিন্ন পরিসংখ্যান।

কিন্তু গত শনিবার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গতানুগতিক শান্ত ধারায় তিন দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এ বিষয়ে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, ‘৩৬ ঘণ্টা হরতালে আমরা ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছি। তারপরও চলমান আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে দেশনেত্রী আরও একটু সময় নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খসড়া সংবিধান অনুমোদন ও কোকোর কারাদ- হওয়ার পর আর বসে থাকা যায় না। পিঠ এখন দেওয়ালে ঠেকে গেছে। ২১, ২৩ ও ২৮ জুনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শেষ হলে আরও কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে  নামবে বিএনপি। ’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘জনগণের চাহিদা অনুযায়ী আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে। আর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন দলের চেয়ারপারসন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।