ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

সাক্ষাৎকার

চৌদ্দগ্রামকে অনুকরণীয় পৌরসভা করতে চ‍ান মিজানুর

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৬
চৌদ্দগ্রামকে অনুকরণীয় পৌরসভা করতে চ‍ান মিজানুর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুমিল্লা: জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হওয়া আমার কাছে অনেক আনন্দের বিষয়। অতীতে সুখে-দুঃখে জনগণের পাশে থেকে তাদের সেবা করেছি।



২০০৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জনগণের জন্য কাজ করেছি। যখন সফল হয়েছি, তখন আনন্দ পেয়েছি। যখন সফল হয়নি, কষ্ট পেয়েছি। গত মেয়াদের কিছু কাজ এখনো বাকি রয়েছে, সেই কাজগুলো শেষ করে চলতি মেয়াদে চৌদ্দগ্রামকে অনুকরণযোগ্য মডেল পৌরসভায় পরিণত করতে চাই।

সম্প্রতি বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার টানা দু’বারের নির্বাচিত মেয়র মিজানুর রহমান।

আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমান পৌর নির্বাচনে ১২ হাজার ৭০২ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ( আ’লীগের বিদ্রোহী) মোহাম্মদ ইমাম হোসেন পাটোয়ারি এনাম পেয়েছেন ৫ হাজার ৪২৬ ভোট।

মেয়র মিজানুর রহমান বলেন, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাকে তৃতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে রূপান্তরিত করেছি। এখন অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে উপজেলা পরিষদের একটি ভবনে পৌরসভার কাজ চলছে। নতুন পৌর ভবনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আশা করছি আগামী দুই মাসের মধ্যেই নতুন ভবনে পৌরসভার কাজকর্ম পরিচালিত হবে।

তিনি বলেন, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। গতবারও আমি মেয়র ছিলাম। সে সময় জনগণের সেবা করেছি। এ কারণে আমার ওপর দলের ও জনগণের আস্থা ছিল। তাই দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম বলেই তারা আমাকে নিরাশ করেননি। এ নিয়ে টানা দুই বার আমি মেয়র নির্বাচিত হলাম।  

মিজানুর রহমান বলেন, দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মত নির্বাচনে অংশ নিতে পারা অনেক সৌভাগ্যের বিষয়। এ ব্যাপারে আমি অনেক খুশি। প্রধানমন্ত্রী এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অবশ্যই যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত। এটা তৃণমূলের জন্যও ভালো হয়েছে। এতে তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির পথ উন্মুক্ত হল।

তিনি আরো বলেন, আমি একটি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করেছি। সরকারি উদ্যোগে না হলে বেসরকারি উদ্যোগেই করার চেষ্টা করবো। এছাড়া পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসন এবং সড়ক বাতি লাগানোর ব্যবস্থা করবো।

চৌদ্দগ্রাম ভারতের সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানে মাদকের সহজলভ্যতা রয়েছে। এ বিষয়ে মেয়র মিজানুর রহমান বলেন, মাদক প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করবো। আমার একার পক্ষে মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়। তাই প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে এ ব্যাপারে কাজ করবো।

এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। মাদক নির্মূলে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে, নতুবা আমাদের যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে।

মেয়র মিজান বলেন, আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। গোটা পৌরসভাই আমার। সবাই আমার আপনজন। যে এলাকায় যেমন প্রয়োজন সে অনুসারে কাজ করবো।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সব সময় কাছে পায় এলাকার মানুষ। তাই স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতাও বেশি।

ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু আমি একজন রাজনীতিবিদ। তাই নির্বাচনের প্রস্তুতি সব সময়ই থাকে। ভবিষ্যতে নির্বাচন করবো কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে।

মিজানুর রহমান বলেন, গত মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে আমি চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাকে তৃতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করেছি। পৌর এলাকায় প্রায় ৭০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছি। এর মধ্যে ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন পৌর ভবন, পৌর এলাকায় পাকা রাস্তা, স্কুল, মাদ্রাসায় নতুন ভবন নির্মাণ করেছি।

রাজনীতির ভবিষ্যত পরিকল্পনা বিষয়ে তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতি করে যাচ্ছি। ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের সৈনিক হিসেবে কাজ করছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করাই আমার মূল লক্ষ্য।

মো. মিজানুর রহমান চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার গোমারবাড়ি গ্রামের তিনবারের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ রাজনীতিবিদ আব্দুল রশিদের ছেলে।

তিনি ১৯৮৮ সালে চৌদ্দগ্রাম পাইলট হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগ, ১৯৯০ সালে চৌদ্দগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি ১৯৯২ সালে ডিগ্রি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে দ্বিতীয় বিভাগ এবং ১৯৯৪ সালে চৌদ্দগ্রাম কলেজ থেকে বিএসএস পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ পেয়ে পাশ করেন।  

মিজানুর রহমানের পরিবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। রাজনীতি পরিবারেই ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠেছেন তিনি। কলেজ জীবনে বর্তমান রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিবের হাত ধরেই রাজনীতিতে আসেন তিনি।

মিজানুর রহমান ১৯৮৮ সালে চৌদ্দগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। কলেজ ছাত্র সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাহিত্য সম্পাদকও ছিলেন। জিএস নির্বাচনে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলেও তার রাজনীতি থেমে থাকেনি।

১৯৯৮ সালে উপজেলা থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, পরবর্তীতে জেলা (দক্ষিণ) ছাত্রলীগের সদস্যও ছিলেন। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।   ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক।

মিজানুর রহমান বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি চৌদ্দগ্রাম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, চৌদ্দগ্রাম পাইলট হাইস্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, বীরচন্দ্রনগর মনসুরিয়া আলিয়া মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, ফেমাস মডেল স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, চৌদ্দগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ও জামে মসজিদের সভাপতি এবং জেলা ও উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।