ঢাকা: সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র সফরে ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছে পূরণ হয়নি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। কাড়ি কাড়ি ডলার খরচে লবিস্ট নিয়োগ করেও, শমসের মবিন চৌধুরীর শত দৌড়ঝাঁপেও মার্কিন হাই প্রোফাইল নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়ায় রীতিমতো আশাহত বিএনপি চেয়ারপারসন।
যুক্তরাষ্ট্রে রোববার বাংলানিউজকে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়ার একজন ঘনিষ্ট সূত্র এতথ্য জানিয়েছেন।
লবিস্ট ফার্মের পেছনে ৫০ হাজার ডলার আর এক সপ্তাহকাল হোটেলবাস ও অন্যান্য খাতে ১লাখ ডলার-- সাকুল্যে খরচ হয়েছে দেড় লাখ। ওই সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী লবিস্ট ফার্ম ভাড়া করা বাবদ ৫০ হাজার ডলারের পুরোটাই জলে গেছে।
সূত্র আরো জানায়, অবশ্য খালেদা জিয়ার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের খরচ বাবদ ১লাখ ও লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ বাবদ ৫০ হাজার ডলারের পুরো খরচটা পাওয়া গেছে বাংলাদেশ ও বিদেশি উৎস থেকে সংগৃহীত অর্থ থেকে। তবে খরচের চেয়ে অর্থ সংগৃহীত হয়েছে অনেক বেশি---৩ লাখ ডলার! আর সে অর্থটা সংগ্রহ করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান শমশের মবিন চৌধুরীই। কিন্তু অর্থ সংগ্রহে তার এই ক্যারিশমা ঢাকা পড়ে গেছে শীর্ষ মার্কিন নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ আয়োজনে ব্যর্থতায়।
সূত্রের বর্ণনা মতে, একটি ব্যর্থ সফর শেষে বেগম জিয়া খুবই বিব্রত ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ব্যক্তির সাক্ষাৎ পেতে ব্যর্থ হওয়ায় শমসের মবিন চৌধুরীর ওর্প অদক্ষতাকেই দায়ী করছেন তিনি।
বেগম জিয়ার সফরে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) প্রেসিডেন্ট কেন ওয়ালাক এবং এশিয়া অংশের পরিচালক পিটার ম্যানিকসের সঙ্গে সাক্ষাৎ কর্মসূচি নির্ধারিতও হয়েছিল। কিন্তু সে সাক্ষাৎও শেষ পর্যন্ত হতে পারেনি শমসের মবিন চৌধুরীর অবহেলায়। আর সাক্ষাতের জন্য নির্ধারিত সময়ে খালেদা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন অন্য কাজে। খালেদা যখন সাক্ষাতের জন্য নির্ধারিত ভেন্যুতে গিয়ে হাজির হন তখন অনেক দেরি হয়ে গেছ্। ে
বলা বাহুল্য কোনো লবিস্ট ফার্মের সহায়তা ছাড়াই এ দুজওনের সঙ্গে খালেদার বৈঠক কর্মসূচি নির্ধারণ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির এক নেতা। আর সেটা ছিল স্বত:প্রণোদিত। এখানে শমসের মবিন চৌধুরীর কোনো ভ’মিকাই ছিল না। আর সে কারণে তিনি এ সাক্ষাৎ কর্মসূচিকেই একপ্রকার হেলায় পাশ কাটিয়ে গেছেন।
এমনকি যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কার্যালয়ে তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে একই লোক যায়। তখন কর্মকর্তারা অবাক হয়ে যান। তারা তাদের জানান, লবিস্ট গ্রুপ ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে নয়, বরং তার উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদার সাক্ষাৎ করিয়ে দেওয়ার ব্যাপারেই বেশি আগ্রহী। খালেদা চেয়েছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট বো বাইডেনের সাক্ষাৎ, আর শমসের মবিনের নিয়োগ করা লবিস্ট ছুটলো বাইডেনের উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে। শমসের মবিনের ওপর ক্ষুব্ধ হওয়ার এটাও এক বড় কারণ।
অনেকটা একই রকম ব্যর্থতার ঘটনা ঘটেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটনের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করতে গিয়ে।
খরচের হিসাব:
খালেদা জিয়া যেসব হোটেলে উঠেছিলেন সেগুলোর একটির নাম ওলডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া । ওই হোটেলে একশরও বেশি বাংলাদেশি কাজ করেন। তাদের কারণে হোটেল বিলে বড় ধরণের ছাড় পান খালেদা জিয়া ও তার সফরসঙ্গীরা।
সূত্র বাংলানিউজকে খরচের মোট হিসাব জানিয়েছে। খালেদা জিয়া তার সঙ্গীদের হোটেলে (তিন অঙ্গরাজ্যে ৩ হোটেল) থাকা , নিরাপত্তা, পরিবহন, অভ্যর্থনা ও পারলিসিটি বাবদ সাকুল্যে খরচ হয়েছে ১লাখ ডলার।
এই খরচের পুরো অর্থের যোগান দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বিএনপি নেতাকর্মীরা। নিরাপত্তাকর্মীদের পেছনে খরচ হয়েছে
১৫ হাজার ডলার, হোটেলের রিসেপসন হল ব্যবহার ও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার বাবদ খরচ ১৭ হাজার ডলার, পাবলিসিটি অর্থাৎ পোস্টার ব্যানার , সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন ইত্যাদি বাবদ ১৬ হাজার ডলার, পরিবহন খরচ ২৫ হাজার ডলার। এছাড়া খালেদা জিয়ার জন্য বিশেষ স্যুট ও অতিথিদের জন্য ৭টি কক্ষের খরচ ছাড়াও ছিলো বিলাসবহুল মোটর শোভাযাত্রার খরচ।
পুরো সফরকালে যে ক’টি হোটেলে খালেদা জিয়া অবস্থান করেছেন সেগুলোতে অবস্থান করা বাবদ মোট বিল দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ডলার। নিউজার্সি, নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসির যে কটি হোটেলে খালেদা জিয়া থেকেছেন সেগুলোর খরচ আকাশছোঁয়া। বিশেষ করে ওয়াশিংটন ডিসির হোটেলটিতো খুবই বিলাসবহুল। কিন্তু সে তুলনায় হোটেল বিল এসেছে কম। নিউজার্সি ও নিউইয়র্কের দুটি হোটেলের প্রতিটির বিল এসেছে ১০ হাজার ডলার করে মোট ২০ হাজার ডলার। আর ওয়াশিংটন ডিসির সবচে দামি হোটেলটির বিল এসেছে ১৬ হাজার ৫শ ডলার।
বাংলানিউজসূত্রের হিসাব মতে, যুক্তরাষ্ট্রে সব মিলিয়ে খালেদা জিয়ার আনুমানিক খরচ হয়েছে ৯৯ হাজার ৮ শ ডলার। এর বাইরে ৫০ হাজার ডলার খরচ হয়েছে লবিস্ট ফার্মের পেছনে । কিন্তু এক্ষেত্রে লক্ষ্যপূরণ হয়নি বিএনপির। ওবামা প্রশাসনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটনসহ মাকিন প্রভাবশালী সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে কোনো বৈঠকের আয়োজন করা য়ায়নি। উল্টো পানিতে গেছে ৫০ হাজার ডলার।
এছাড়া শমসের মবিন চৌধুরী যে ৩ লাখ ডলার তুলেছেন সে টাকারও পুরো হিসেব মিলছে না বলে জানিয়েছে সূত্র।
সূত্র আরো জানায়, লবিস্ট নিযোগের জন্য তহবিল সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন আরো দু’জন। এদের একজনের নাম মি. শরাফত , অন্যজনের নাম ওসমান সিদ্দিকী। একই সাথে তারা এই আশ্বাসও দিয়েছিলেন, হিলারির সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা তো তারা করবেনই, সেই সঙ্গে ৫০ জন প্রভাবশালী সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে ডিনার মিটিংয়েরও ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হলো না।
অর্থদাতারা হতাশ!
তহবিল যারা দিয়েছিলেন তারা যারপরনেই হতাশ। যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির অঙ্গরাজ্য কমিটিগুলো ছাড়াও অনেকে ব্যক্তিগতভাবে তহবিলের যোগান দিয়েছিলেন। এদের অনেকে ৫ হাজার ডলার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত দিয়েছেন। কিন্তু তাদের সবার স্বপ্নভঙ্গই শুধু হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১১