ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

জে র‌্যাপের উদ্ধৃতি দিয়ে ব্যারিস্টার রাজ্জাক

যুদ্ধাপরাধের বিচারের আগে চাই ৪৭ এর এ ধারার সংশোধন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, মে ১, ২০১১
যুদ্ধাপরাধের বিচারের আগে চাই ৪৭ এর এ ধারার সংশোধন

ঢাকা: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে হলে সরকারকে সংবিধানের প্রথম সংশোধনী বাতিল অথবা  ৪৭ এর এ ধারার সংশোধন করতে হবে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ দূত (অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ) স্টিফেন জে. র‌্যাপ।

রোববার বাংলাদেশ সফররত জে. র‌্যাপের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এ কথা জানান।


 
হোটেল ওয়েস্টিনে ৪০ মিনিটব্যাপী এ সাক্ষাৎ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

আব্দুর রাজ্জাক জানান, স্টিফেন জে র‌্যাপ তাকে বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ৭৩ অনুযায়ী চূড়ান্ত বিচারের পর যে আপিল করার বিধান রয়েছে সেটা বদলাতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়েও আপিলের সুযোগ দিতে হবে। ট্রাইব্যুনাল এখন প্রাথমিকভাবে যে সব অর্ডার দিচ্ছেন তার বিরুদ্ধে অভিযুক্তদের আপিল করতে দিতে হবে। ’

এ সময় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের পর তিন সপ্তাহের মধ্যে বিচার শুরুর বিধান পরিবর্তন করে ৬ থেকে ১০ সপ্তাহ করা দরকার বলে জে র‌্যাপকে জানান রাজ্জাক।

একই সঙ্গে অভিযুক্তদের পক্ষে বিদেশি আইনজীবী আনার সুযোগ দিতে হবে বলেও জে র‌্যাপকে জানান তিনি।

ট্রাইব্যুনাল কিংবা সরকারের কাছে আপনাদের এসব দাবি না জানিয়ে কেন র‌্যাপের কাছে জানাচ্ছেন প্রশ্ন করলে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, ‘স্টিফেন জে র‌্যাপকে বাংলাদেশ সরকার আমন্ত্রণ জানিয়ে এনেছেন। আর জে র‌্যাপ আমাদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন বলেই আমরা দেখা করেছি। ’
 
`ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন ` এ বিষয়ে আপনি কি মনে করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালকে নিজের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। সেটা যদি তারা করতে না পারে তাহলে ট্রাইব্যুনাল তার আস্থা হারাবে। ট্রাইব্যুনালকে প্রমাণ করতে হবে, তারা স্বাধীন একটি সংস্থা। সরকার, ব্যক্তি ও কোন গোষ্ঠীর কাছ থেকে তারা কোন ধরনের নির্দেশনা গ্রহণ করছেন না। ’

তিনি বলেন, ‘জামায়াতের যেসব নেতা ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে কারাগারে আছেন, তারা কোন ধরনের অভিযোগপত্র ছাড়াই ৯ মাস ধরে জেলে রয়েছেন। তাদের কারো বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। ’

স্টিফেন জে র‌্যাপ চলতি বছরের জানুয়ারিতে চারদিনের সফরে ঢাকা এসেছিলেন। সেসময় তিনি বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ক আইনের ফাঁকফোকরের কথা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেন।

সেবার সফর শেষে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাপ বলেছিলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যে আদালত গঠন করা হয়েছে তার নাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাই বাংলাদেশের আইনটিকে আন্তর্জাতিক মানের করার জন্য আইসিসির সাথে মিল রেখে আইনের বিধিমালায় সংশোধন-সংযোজন করতে হবে।

তিনি বলেন,  ‌১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে প্রণীত আইন যথেষ্ট নয়। ১৯৭১ এর ঘটনার বিষয়ে পরে প্রণীত আইনের রেট্রোস্পেকটিভ (ভূতাপেক্ষতা) করতে হলে তা আন্তর্জাতিক আইনে সম্ভব।

সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে আইনে‘৭১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছে সেই আইনটি হতে হবে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে উন্নীত, বলেও মন্তব্য তার।

বারাক ওবামা ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তিনি এর আগে সিয়েরালিওনে যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত বিশেষ আদালতে একজন মূখ্য আইনজীবী হিসেবে দায়িত¦ পালন করেছেন। স্টিফেন র‌্যাপ  ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত রুয়ান্ডার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি ও চিফ অব প্রসিকিউশন ছিলেন।


স্টিফেন জে র‌্যাপ সোমবার সকাল ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাবেন।

সেখানে তিনি প্রসিকিউটরদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা যায়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪১ ঘণ্টা, মে ১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।