ঢাকা: গুলশানের নতুন বাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সাড়া পাননি বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
গত ২১ এপ্রিল বেগম জিয়া গুলশানের নতুন ভাড়া বাড়ি ‘ফিরোজায়’ ওঠেন।
সূত্র জানায়, বিরোধী দলীয় নেতার একান্ত সচিবের স্বাক্ষর করা সর্বশেষ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিলো, মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতা ভাড়াকৃত বাসায় (বাসা নং-এনইডি-১, রোড-৭৯, গুলশান এভিনিউ) বসবাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। দ্রুত তিনি ওই বাসায় উঠবেন। দেশের চলমান পরিস্থিতি ও সার্বিক আইন-শৃঙ্খলার প্রেক্ষাপটে তার সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা অত্যন্ত জরুরি।
ওই চিঠিতে এর আগে ১০ নম্বর পত্রের চাহিদা অনুযায়ী জনবল নিয়োগের অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিঠিটির অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালকদের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
এবিষয়ে আলাপকালে বিরোধী দলীয় নেত্রীর সহকারী একান্ত সচিব মো: সুরাতুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিরোধী দলীয় নেতার সংসদ কার্যালয় থেকে চিঠি পাঠানো হলেও এখনও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। ’
গত ১০ এপ্রিল বিরোধী দলীয় নেতার একান্ত সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ মন্ত্রণালয়ে চিঠিটি ফ্যাক্স করে পাঠানোর পরেও সচিবালয় গিয়ে সচিবসহ উর্দ্ধতন কারো সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেননি।
খালেদার পাঠানো ১০ নম্বর চিঠিতে ২৪ ঘন্টায় তিন পালায় নিরাপত্তা প্রদানের জন্য মোট একশ ১০জন নিরাপত্তা রক্ষী প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়। এসব নিরাপত্তারক্ষী বেগম জিয়ার বাসভবন ছাড়াও তার চলাচলের সময় নিরাপত্তা দেবেন।
এ প্রসঙ্গে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বাংলানিউজকে বলেন,‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন বিরোধী দলে ছিলেন তখন তার নিরাপত্তায় শতাধিক কর্মী নিয়োজিত ছিলো। কিন্তু আমাদের নেত্রী বারবার আবেদন করার পরও সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমারা প্রতিনিয়ত বিষয়টি নিয়ে কথা বললেও কোনো উত্তর পাচ্ছিনা। ’
এসময় দ্রুত চাহিদা মত নিরাপত্তা প্রদান করার দাবিও জানান ফারুক।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য প্রথম চিঠি দেওয়া হয়েছিলো ২০০৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ওই বছর মোট সাত বার চিঠি দেওয়া হয় । ২০১০ সালের অক্টোবরে একবার এবং ডিসেম্বরে একবার চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, খালেদা জিয়ার চলাচলের সময় নিরাপত্তা দিতে বর্তমানে ডিএমপির ১৩ জন পুলিশ সদস্য আছেন। বাড়ির নিরাপত্তার কাজে প্রতি পালায় পাঁচ জন করে সর্বমোট ১৫ জন কাজ করছেন। খালেদা জিয়া বাসার বাইরে থাকলে তার জন্য মাত্র দুইজন এসবির গানম্যান নিয়োজিত থাকেন। যা খুবই অপ্রতুল।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অষ্টম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালীন ১২৬ জন নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত ছিল। তাই সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তার বাসভবন ও চলাচলের সময় বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে কমপক্ষে ১১০ জন নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সদস্য নিয়োগের অনুরোধ করছি। ’
সরকারের কাছে পাঠানো চিঠিতে খালেদার জিয়ার নিরাপত্তায় ডিএমপির প্ররক্ষা টিমের একজন পুলিশ পরিদর্শকের নেতৃত্বে অস্ত্রসহ নূন্যতম ১২ জন অস্ত্রধারী পুলিশ, চারজন ড্রাইভার ও দুটি পিকআপ ভ্যান চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া পালাক্রমে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের জন্য এসবি’র গ্যানম্যান হিসেবে ১ জন পুলিশ পরিদর্শকের নেতৃত্বে ১২ জন গ্যানম্যান ও দুটি পিকাআপ ভ্যান, বিভিন্ন কর্মসূচিস্থলে এসবির ক্লোজ প্রটেকশনে ৮ জন গ্যানম্যান, তিন পালায় হাউজ গার্ড হিসেবে ১ জন পুলিশ পরিদর্শকের নেতৃত্বে মোট ৪৮ জন এবং বাসভবনের গেটে তল্লাশী সরমঞ্জামসহ ৬ জন এসবি চাওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বাসভবনের আশপাশের এলাকায় তিন পালায় কাজ করার জন্য পেট্রোল ডিউটি হিসেবে ২৪ জন নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত করার জন্য বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় ১১৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১১